খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ না করে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ওপর বাঁধের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদার। এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী ও ঠিকাদারের লোকজন মুখোমুখি অবস্থানে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার আগেই তাঁদের জোর করে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। টাকা পাবেন কি না, তা নিয়েও আছে শঙ্কা। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এলাকার লোকজন ক্ষতিপূরণ পাবেন।

এ বিষয়ে গতকাল সোমবার সকালে কয়রার উত্তর বেদকাশী এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য গণেশ মণ্ডল বলেন, ‘আমার এলাকার মতিয়ার সরদার ও রবীন্দ্রনাথ বাইনের বসতবাড়ির ওপর বাঁধের মাটি ফেলার প্রতিবাদ করায় ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে মারামারি হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিবেশ। বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজও আপাতত বন্ধ।’

পাউবো সূত্রে জানা যায়, ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য যৌথভাবে দায়িত্বে আছে খুলনার পাউবো ও সাতক্ষীরা-২ বিভাগ। এ দুই বিভাগ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ২৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করার অনুমতি পায়। তারা কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতীরবর্তী প্রায় ৩২ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকাজ করছে। তবে জমি অধিগ্রহণে ধীরগতি ও জটিলতা তৈরি হওয়ায় ঠিকাদার ও এলাকাবাসীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

উত্তর বেদকাশী এলাকার মতিয়ার সরদারের মেয়ে মিনারা খাতুন বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণের দোহাই দিয়ে নদীর চরের গাছ কাটছিলেন ঠিকাদারের লোকজন। আমি মুঠোফোনে গাছ কাটার ভিডিও ধারণ করলে তারা আমাকে বাজে ভাষায় গালাগালি করে। এর কয়েক দিন পরে খননযন্ত্র দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বসতভিটার ওপরে মাটি ফেললে আমার স্বামী প্রতিবাদ করায় তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ করেছি।’

১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য যৌথভাবে দায়িত্বে আছে খুলনার পাউবো ও সাতক্ষীরা-২ বিভাগ। এ দুই বিভাগ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ২৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করার অনুমতি পায়। তারা কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতীরবর্তী প্রায় ৩২ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকাজ করছে।

কোনো নোটিশ ছাড়াই তাঁদের জমির ওপর দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়রার উত্তর বেদকাশী এলাকার বাসিন্দা গণেশ, ইদ্রিস, সোমেন, সাবিত্রাসহ কয়েকজন। তাঁদের ভাষ্য, অনেকের অন্য কোথাও জায়গাজমি নেই। তাঁরা কোথায় যাবেন, সে ব্যবস্থা করা হয়নি। তাঁদের কারও ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি। কোনো কিছু জানতে চাইলেই প্রতিনিয়ত ঠিকাদারের লোকজন খারাপ আচরণ করেছেন।

সম্প্রতি সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়, কিছু স্থানে মাটির কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। কিছু স্থানে বালুর বস্তা ফেলার অপেক্ষায় আছে। আবার কয়েকটি স্থানে সিসি ব্লক বানানোর কাজ চলছে। উত্তর বেদকাশী গ্রামের এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া নদী, আরেক পাশে কপোতাক্ষ নদ। দুই নদ-নদীর তীরে মাটি ফেলে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারীদের অনেকেই তাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিচ্ছেন। তবে তাঁরা জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না।
উত্তর বেদকাশী এলাকায় বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপক রাসেল মোল্লা বলেন, তাঁরা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছেন। তবে স্থানীয় কিছু মানুষ তাঁদের ওপর চড়াও হয়ে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। তাঁদের লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া বাধে। এতে তাঁদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছেন।

জমি অধিগ্রহণ না করে বাঁধ নির্মাণের সময় বাড়িঘর ভাঙা ও গাছ কাটার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। ৫ ফেব্রুয়ারি কয়রার উত্তর বেদকাশী এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঠ ক দ র র ল কজন এল ক ব স ক জ করছ প রকল প কর ছ ন এল ক য় ক জ কর এল ক র কয়র র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের পথে জার্মানিও, ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করায় চারজনকে বিতাড়নের নির্দেশ

জার্মানির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থীদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ উঠেছে। দেশটি ফিলিস্তিনপন্থী চার বিদেশি নাগরিককে বিতাড়নের নির্দেশ দিয়েছে। ওই চারজনের কারও বিরুদ্ধেই অপরাধে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই।

যাঁদের জার্মানি থেকে বিতাড়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের তিনজন ইউরোপীয় ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

চারজনই এ বছর জানুয়ারিতে ডাকযোগে প্রথম এ বিষয়ে চিঠি পান। ওই চিঠিতে তাঁদের স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার হারানোর কথা জানানো হয়।

দুই মাস পর ওই চারজনের আইনজীবীরা তাঁদের মক্কেলের পক্ষে বার্লিনের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিতাড়নের নির্দেশসংবলিত চিঠি পান। তাঁদের ২১ এপ্রিলের মধ্যে জার্মানি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নতুবা তাঁদের জোর করে বিতাড়ন করা হবে।

ওই চার ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারী হলেন মার্কিন নাগরিক ২৭ বছর বয়সী কুপার লংবটম। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। বাকি তিনজন হলেন পোল্যান্ডের নাগরিক ৩৫ বছরের কাসা ব্লেচেক এবং দুই আইরিশ নাগরিক শেন ও’ব্রায়ান (২৯) ও রবার্টা মারে (৩১)।

এই চারজনই বার্লিনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।

এই চারজনের বিরুদ্ধে আনা একটি পুলিশি অভিযোগ আল–জাজিরা দেখেছে। ওই অভিযোগে জার্মান কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওই চার ব্যক্তি ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়েছেন এবং উসকানি দিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগও করা হয়েছে।

তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়া, সম্পদের ক্ষতি করা এবং শান্তি বিঘ্নিত করার মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগও আনা হয়েছে।

ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হয়েছেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন মার্কিন অভিবাসন আদালতের এক বিচারক।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা যেতে পারে বলে বিচারকের মত১২ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনফিলিস্তিনের জন্য বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়৩০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ