ভারতের দিল্লি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর বিজেপির নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতবে তাদের দল। ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনকে মাথায় রেখে ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি। আর দলটির তৎপরতা তৃণমূলকে যে ভাবাচ্ছে, তা তাদের আচরণে স্পষ্ট। খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে তাঁর অবস্থানের কথা বলেছেন। তবে দিল্লির নির্বাচনের ফল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটা প্রভাব ফেলেছে এবং এর রেশ নির্বাচনেও থাকতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, দিল্লিতে আম আদমির পরাজয়ের নেপথ্যে যেসব বিষয় কাজ করেছে, সে বিষয়গুলো পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূলের পরাজয়ের কারণ হতে পারে।

দিল্লি বিধানসভার ৭০ আসনের নির্বাচনে বিজেপি এবার ৪৮ আসনে জয় পেয়েছে। এবারের নির্বাচনে বিজয়ী বিজপি যে ইস্যুকে নির্বাচনের হাতিয়ার করে তুলেছিল, তা ছিল দুর্নীতি। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে আবগারি দুর্নীতির অভিযাগ তোলে বিজেপি। আর মানুষ তা গ্রহণও করে। দুর্নীতির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন তৈরির বিষয়টিও ছিল দিল্লিতে বিজেপির তুরুপের তাস।

পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। এই দুর্নীতিতে জড়িয়ে তৃণমূলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের জালে আটকা পড়ে এখনো কারাগারে।

অন্যদিকে কারাগার থেকে সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হওয়ায় সাবেক খাদ্য ও বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং বীরভূমের আরেক দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো ও তৃণমূলের ‘সর্বেসর্বা’ হিসেবে পরিচিত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। মমতার পরিবারের সদস্যদের বিলাসবহুল বাড়ির কথাও বলে বিরোধীরা। তৃণমূল দলটি যে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, তা নতুন করে বলার নেই। তাই আগামীতে এসব দুর্নীতিকে বড় ইস্যু করে বিজেপি নির্বাচনের বাজার মাত করতে পারে, এমন ধারণা বিশ্লেষকদের।

এরপর রয়েছে আর জি কর–কাণ্ডে নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ইস্যু। সেই সঙ্গে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। তিনিও এখন সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে।

দিল্লির নির্বাচনে আম আদমির পরাজয়ের পেছনে ‘শাসকের প্রতি বিতৃষ্ণা’ একটি বিষয় হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। পশ্চিমবঙ্গেও টানা তিনবার ক্ষমতায় আছে তৃণমূল। একটি পরিবর্তনের পক্ষে জনমতকে কাজে লাগাতে বিজেপি অনেক তৎপর। আর সে কাজে তারা সফল হতে পারে বলেও মনে করছে তারা।

তবে এসব নানা কারণ থাকলেও বিজেপির কিছু দুর্বলতা আছে। এর মধ্যে প্রধান কারণটি হলো দলের নেতৃত্ব। শুধু এই নেতৃত্বের কারণেই দলটি পরপর দুটি বিধানসভায় হেরে গেছে বলে মনে করা হয়। বিজেপির পক্ষে একটি মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য ‘মুখ’ নেই, যাকে দেখে ভোটাররা আশ্বস্ত হবেন।

দলের সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অনেকটাই টেনে তুলেছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরপর তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে গত বিধানসভায় একজোট হয়েছিল দলটি। তাতে কাজ হয়নি। পুরোনো ও নতুন—এই দুই ভাগে ভাগ হওয়া বিজেপি এখনো শক্ত নেতৃত্ব পায়নি পশ্চিমবঙ্গে।

রাজ্যজুড়ে যখন পরিবর্তনের নানা আলামত স্পষ্ট হচ্ছে, এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল এই রাজ্যের বিধানসভা পরিষদীয় দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ২০২৬ সালের এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল দুই–তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়ে চতুর্থবারের জন্য এ রাজ্যের শাসনক্ষমতায় আসবে। ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ২১৩টি আসন। বিজেপি ৭৭টি আসন আর ১টি আসন পেয়েছিল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট।

দিল্লিতে বা যমুনা পাড়ের নির্বাচনের প্রভাব গঙ্গপাড়ে বা এই পশ্চিমবঙ্গে পড়বে কি না, তা নির্ভর করছে আগামী দিনে বিজেপি নিজেদের কতটা গোছাতে পারে তার ওপর, এমন ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। এর কারণ হলো, গেরুয়া দলটি কিন্তু এখনো ততটা সংগঠিত নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য অর্ধেক পেরোতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। ‘সক্রিয় সদস্য’ সংগ্রহ অভিযানও তেমন আশানুরূপ নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন দ য প ধ য য় র জ য ব ধ নসভ ম খ যমন ত র মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রথম ধাপের কাজ ২০২৬ সালে শেষ হবে’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রথম ধাপের কাজ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী থেকে নিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক (পিডি) লে. কর্নেল ইফতেখার আলম।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সভায় তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “আমাদের বলা হয়েছে প্রথম ধাপের কাজ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে। তবে আমরা এর আগেই শেষ করার চেষ্টা করবো। দ্বিতীয় ধাপের কাজের পরিকল্পনাও চলবে। তবে এর দৃশ্যমান কাজ ২০২৬ সালের পরই শুরু করা সম্ভব হবে।”

তিনি আরো বলেন, “প্রথম ধাপের কাজের মধ্যে রয়েছে, ক্যাম্পাসে বালি ভরাট করা, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন তৈরি এবং একটা বেসক্যাম্প তৈরি করা, যাতে দ্বিতীয় ধাপের কাজ পরিচালনা করা যায়।”

বাণী ভবন ও হাবিবুর রহমান হলে স্টিলের স্ট্রাকচার নির্মাণ বাস্তবতায় সম্ভব না জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক ইফতেখার আলম বলেন, “হল দুইটির স্থান এমন জায়গায়, এখানে স্টিল স্ট্রাকচারের কাজ চালানোর জন্য যে ক্রেন আনা দরকার, সেটা সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। কারণ সেখানে রাস্তাগুলো ১৪ থেকে ২২ ফুটের মধ্যে। এখানে স্টিলের স্ট্রাকচারের পরিবর্তে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ বেশি টেকসই হবে। তাছাড়া স্টিল স্ট্রাকচার সময়সাপেক্ষ। স্থানীয় কমিউনিটির কিছু আপত্তি এসেছে, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।”

এ বিষয়ে ছাত্রদল জবি শাখার আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “আমরা স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারি। আশা করি, তারা যৌক্তিক বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন।”

শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, “পূর্বে পুরান ঢাকার স্থানীয়দের সঙ্গে ঝামেলার কারণে এখন স্টাফরা সেখানে থাকবে। ভবিষ্যতে এখানে আমাদের বোনেদের রাখা হলে তাদের সঙ্গে স্থানীয়রা ঝামেলা করবে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে। পুরান ঢাকায় মূল ক্যাম্পাস থাকবে। এখানেই ছাত্রদের জন্য হল প্রয়োজন। তাই বাণী ভবন ও হাবিবুর রহমান হলে কংক্রিটের স্থায়ী কাঠামো হলে সেটাই ভালো হবে।”

জবি সংস্কার আন্দোলনের সদস্য নওশিন নাওয়ার জয়া বলেন, “বর্তমানে ছাত্রীদের জন্য একটি হল আছে, তাই এখন ছাত্রদের হল বেশি জরুরি।”

শিক্ষার্থীদের এসকল দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা জেলা এডিসি পারভেজ বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি আইনগত কাঠামোর মধ্যে কিভাবে ফ্যাসিলিটেট করা যায়। আইনগতভাবে অস্থায়ী বা স্থায়ী কাঠামো করার সুযোগ নেই। স্ট্রাকচারের বিষয়টা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। লোকাল কমিউনিটিকে রেসপেক্ট না করলে সাসটেইনেবল হয় না।”

শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া ২০০৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে বলে আমরা বিগত সময়ে নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাকা থেকে সরিয়ে অজপাড়াগাঁয়ে পাঠানোর জন্য তারা নতুন ক্যাম্পাস দিয়েছে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই এই ক্যাম্পাস আমাদেরই থাকবে। কেরানীগঞ্জে হবে আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, “২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের পরিকল্পনা হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রথম ধাপে একটি ছাত্রহল অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যদি বাণী ভবন ও হাবিবুর রহমান হলের নির্মাণে দেরি হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ৭ একর জমিতে বালু ভরাট করে অস্থায়ীভাবে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে।”

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমিন, শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন, নাসির আহমেদ, প্রক্টর, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক, হল প্রাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রথম ধাপের কাজ ২০২৬ সালে শেষ হবে’