২০২৪ সালের মতো চলতি বছরও বিশ্ববাজারে সোনার দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বের প্রধান ব্যাংকগুলো। ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগ বাড়াবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি। এই প্রেক্ষাপটে স্বল্পমেয়াদে সোনার দামের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে বৈশ্বিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংক। তারা বলছে, এ বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি তিন হাজার ডলারে উঠে যেতে পারে। খবর রয়টার্স।

পূর্বাভাসে সিটি ব্যাংক আরও বলেছে, ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ডলারে উঠতে পারে। সেই সঙ্গে ২০২৫ সালে সোনার গড় দাম থাকতে পারে আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ ডলারের মধ্যে।
এক নোটে সিটি ব্যাংক জানায়, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বাণিজ্যযুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ডি-ডলারাইজেশন প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে। এতে উদীয়মান বাজারে সরকারি খাতে সোনার চাহিদা বাড়বে, অর্থাৎ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা কেনা বৃদ্ধি করবে। ডি-ডলারাইজেশন এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো দেশ বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, রিজার্ভ সংরক্ষণ ও লেনদেনে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে।

বিষয়টি হলো, বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, একমাত্র সোনার দরেই সাধারণত বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। সোনা কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই বলা যায়। এ কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত হতো। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্যকিছু এই নিশ্চয়তা দেয় না।

সিটি ব্যাংকের নোটে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে সোনার দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে পারে। ভূরাজনৈতিকসহ অন্যান্য ঝুঁকিতে নিরাপদ বিনিয়োগের আশ্রয় হিসেবে মূল্যবান এই ধাতুর চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। এদিকে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক সোনার চাহিদা ১ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৪ হাজার ৯৭৪ দশমিক ৫ টনে পৌঁছেছে। চাহিদা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাড়তি বিনিয়োগ ও চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার হার বৃদ্ধি।

এর আগে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ম্যাককুয়ারি ডিসেম্বরে জানায়, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে সোনার মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। পরবর্তী সময়ের পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক, বাণিজ্য ও অভিবাসন নীতি ও প্রভাবের ওপর। এ ছাড়া ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া অনুভূত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪১ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে লাফার্জহোলসিম

গত বছরের জন্য শেয়ারধারীদের ৪৪১ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ দেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট। এর মধ্যে ২২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ২২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আগামী বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম শেষে বিতরণ করা হবে।

লাফার্জহোলসিম গত বছরের জন্য মোট ৩৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ ছিল অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ। বাকি ১৯ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ। গত বুধবার অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভা থেকে চূড়ান্ত এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের এই তথ্য জানিয়েছে।

লভ্যাংশের পাশাপাশি লাফার্জহোলসিম গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ২১২ কোটি টাকা বা ৩৬ শতাংশ কমেছে। মুনাফা কমে যাওয়ায় ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কোম্পানিটির লভ্যাংশও কমেছে। ২০২৩ সালে লাফার্জহোলসিম শেয়ারধারীদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে মোট ৫৮১ কোটি টাকা বিতরণ করেছিল। ওই বছর অন্তর্বর্তী ও চূড়ান্ত মিলিয়ে মোট ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। গত বছর লভ্যাংশের হার কমে ৩৮ শতাংশে নেমেছে। আর লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করা অর্থের পরিমাণ কমেছে ১৪০ কোটি টাকা।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির লভ্যাংশ কমেছে মূলত মুনাফা কমে যাওয়ায়। আর মুনাফা কমেছে বিক্রি কম হওয়ায়। গত বছর কোম্পানিটি ২ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। আগের বছর কোম্পানিটি বিক্রি করেছিল ২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে লাফার্জহোলসিমের বিক্রি ৮৫ কোটি টাকা বা ৩ শতাংশ কমেছে।

ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিটি দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। কোম্পানিটি বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যেও কোম্পানিটির ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি। তার বড় কারণ ছিল সিমেন্টের বাইরে চুনাপাথরসহ কোম্পানির অন্যান্য ব্যবসা থেকে ভালো আয়। কোম্পানিটি বলছে, গত বছর তাদের চুনাপাথরের ব্যবসায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ কারণে বছর শেষে সার্বিকভাবে ব্যবসায় বড় ধরনের কোনো ধাক্কা লাগেনি।

এদিকে গত বছরের জন্য অন্তর্বর্তী ও চূড়ান্ত লভ্যাংশ মিলিয়ে কোম্পানিটি ৪৪১ কোটি টাকার যে লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বড় অংশই পাবেন কোম্পানিটির দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। কারণ, কোম্পানিটির শেয়ারের বড় অংশই তাঁদের হাতে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে এটির দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের হাতে ছিল ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার। সেই হিসাবে ঘোষিত মোট লভ্যাংশের মধ্যে ২৮৩ কোটি টাকা পাবেন এসব উদ্যোক্তা। যার মধ্যে অর্ধেক তাঁরা পেয়েও গেছেন। বাকি লভ্যাংশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৮৭ কোটি টাকা, ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৬৮ কোটি টাকা আর বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৩ কোটি টাকা। যার অর্ধেক অর্থ এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েও গেছেন শেয়ারধারীরা।

গত বছর শেষে লভ্যাংশ ও মুনাফা উভয়ই কমে যাওয়ায় শেয়ারবাজারে গতকাল লাফার্জহোলসিমের শেয়ারেরও দরপতন হয়েছে। ঢাকার বাজারে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১ শতাংশ বা ৫০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪৮ টাকায়। দিন শেষে কোম্পানিটির প্রায় দুই কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ারের হাতবদল হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৪১ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে লাফার্জহোলসিম
  • ঢাকার বাতাস আজ ছুটির দিনেও অস্বাস্থ্যকর
  • জার্মান ভিসার অপেক্ষায় ৮০০০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রদূতের টুইট
  • জার্মানির ভিসার অপেক্ষায় দেশের ৮০ হাজার শিক্ষার্থী
  • জার্মান ভিসার অপেক্ষায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থী
  • ইস্টার্ন ব্যাংকের পর্ষদ সভা ২০ মার্চ
  • ঢাকার চেয়েও আজ সকালে সিলেটের বায়ুর মান খারাপ
  • দেশে বায়ুদূষণ আরও বিস্তৃত হচ্ছে
  • চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পরও ভারতে কেন হচ্ছে না বিজয় মিছিল?
  • ইবিতে আওয়ামীপন্থিদের অংশগ্রহণে ভর্তি কমিটির সভায় বাঁধা