সোনার দাম আউন্সপ্রতি তিন হাজার ডলারে উঠতে পারে
Published: 11th, February 2025 GMT
২০২৪ সালের মতো চলতি বছরও বিশ্ববাজারে সোনার দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বের প্রধান ব্যাংকগুলো। ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগ বাড়াবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি। এই প্রেক্ষাপটে স্বল্পমেয়াদে সোনার দামের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে বৈশ্বিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংক। তারা বলছে, এ বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি তিন হাজার ডলারে উঠে যেতে পারে। খবর রয়টার্স।
পূর্বাভাসে সিটি ব্যাংক আরও বলেছে, ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ডলারে উঠতে পারে। সেই সঙ্গে ২০২৫ সালে সোনার গড় দাম থাকতে পারে আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ ডলারের মধ্যে।
এক নোটে সিটি ব্যাংক জানায়, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বাণিজ্যযুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ডি-ডলারাইজেশন প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে। এতে উদীয়মান বাজারে সরকারি খাতে সোনার চাহিদা বাড়বে, অর্থাৎ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা কেনা বৃদ্ধি করবে। ডি-ডলারাইজেশন এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো দেশ বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, রিজার্ভ সংরক্ষণ ও লেনদেনে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে।
বিষয়টি হলো, বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, একমাত্র সোনার দরেই সাধারণত বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। সোনা কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই বলা যায়। এ কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত হতো। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্যকিছু এই নিশ্চয়তা দেয় না।
সিটি ব্যাংকের নোটে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে সোনার দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে পারে। ভূরাজনৈতিকসহ অন্যান্য ঝুঁকিতে নিরাপদ বিনিয়োগের আশ্রয় হিসেবে মূল্যবান এই ধাতুর চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। এদিকে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক সোনার চাহিদা ১ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৪ হাজার ৯৭৪ দশমিক ৫ টনে পৌঁছেছে। চাহিদা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাড়তি বিনিয়োগ ও চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার হার বৃদ্ধি।
এর আগে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ম্যাককুয়ারি ডিসেম্বরে জানায়, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে সোনার মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। পরবর্তী সময়ের পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক, বাণিজ্য ও অভিবাসন নীতি ও প্রভাবের ওপর। এ ছাড়া ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া অনুভূত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার তাৎক্ষণিক করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়: প্রধান উপদেষ্টা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ২১ শহীদ পরিবার ও ৭ জন আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা জুলাই শহিদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশে যেন কোনো সহিংসতা ও হানাহানি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’ খবর বাসসের
তিনি বলেন, 'সবসময় ভাবি যাদের কারণে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার সাহস করছি, তাদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না।'
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদের ইতিহাসের স্রষ্টা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারে না সে জাতি, জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না। এই স্বীকৃতিটা জাতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা।'
শহীদ পরিবার ও আহতের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, 'আজ থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে নিতে হবে।'
সব হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো এটা সুবিচার হতে হবে...অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়।'
'আমরা অবিচারে নামব না। আমরা যারা অপরাধী তাদের পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করব। যারা অপরাধী নয়, পুলিশের হাতে দেওয়ার মতো নাই তাদের মানুষ করব,' বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'এদেশ আমরা একসঙ্গে গড়ি, যেদেশ আমরা একসঙ্গে গড়ার স্বপ্ন দেখছি, তোমরাও সে স্বপ্ন দেখ। এদেশ আমার একার না, তোমারও এদেশ। তুমি এ দেশের সন্তান। আমিও এ দেশের সন্তান। তুমি আমাকে বহু কষ্ট দিয়েছ। আমি তোমারে কষ্ট দেবো না। আমরা একযোগে যত তাড়াতাড়ি পারি এটাকে একটা সুন্দর দেশ বানাব...যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা অপরাধী নয় তাদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে।'
বৈঠকে আহত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদগণ 'জুলাই শহীদ' নামে অভিহিত হবেন এবং আহতগণ 'জুলাই যোদ্ধা' নামে অভিহিত হবেন এবং পরিচয়পত্র পাবেন।
প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি শহীদ পরিবারকে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা প্রদান করা হবে। শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যগণ সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধাদি পাবেন।
গুরুতর আহতদের 'ক্যাটাগরি এ' অনুযায়ী, এককালীন ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হবে এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা প্রদান করা হবে এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এর পাশাপাশি, গুরুতর আহত প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্ত হবেন ও মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবেন। তারা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।
'ক্যাটাগরি বি' অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা প্রদান করা হবে।
এর পাশাপাশি, মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি বা আধাসরকারি কর্মসংস্থান প্রাপ্য হবেন।
জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। তারা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুবিধাদি পাবেন।
এখন পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এছাড়া আহতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শিগগির তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা জানি, আপনাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল আরও আগেই আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলো করতে পারব। আমাদের আন্তরিকতার কম ছিল না। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রত্যেকে আপনাদের ন্যায্য সম্মাননা দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। সংকটকালীন সময়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে সে কারণে আপনাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমরা করতে পারিনি। এ কারণে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি।'
বৈঠকে তিনটি শহীদ পরিবার ও তিনজন যোদ্ধা বক্তব্য রাখেন। তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রাপ্তি, আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে এসময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান।