Prothomalo:
2025-03-14@10:45:32 GMT

প্রকৃত অপরাধীরা যেন ছাড় না পায়

Published: 11th, February 2025 GMT

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারকে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছিল। বেশ কিছু স্থানে মব জাস্টিসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল। পুলিশের অনুপস্থিতি ও নিষ্ক্রিয়তা ছিল এর বড় কারণ।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকদের মধ্যে একটা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। সবার প্রত্যাশা ছিল, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তথা নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা যথেষ্ট নয় বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।

সম্প্রতি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যাঁরা অপরাধ, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ছাত্র–জনতা হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তঁাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা সরকারের দায়িত্ব। আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা–কর্মীরা বর্তমানে নানা ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ন্যায্য কিন্তু ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কোনো অবস্থাতেই ক্ষোভের জবাব নয়।

সার্বিক প্রেক্ষাপটে সরকার বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, অভিযানটি যথাযথভাবে পরিচালিত হবে কি না। কেননা, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে গত ছয় মাসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

অতীতে বিভিন্ন আমলে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। অপরাধ দমনের নামে পরিচালিত এসব বিশেষ অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের যথেচ্ছ ঘটনা আমরা দেখেছি। এবার যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আমরা আশা করি, যারাই সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে এবং হত্যা, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো দুষ্কর্মে লিপ্ত হবে, রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় যা–ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। কোনো দলের নেতা-কর্মী অপরাধ করে যেন পার না পান। আবার কোনো দলের নেতা-কর্মী অপরাধ না করেও যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হন।

এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এককভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কাজটি করতে পারে না। এতে সমাজের বিভিন্ন অংশীজনেরও সমর্থন থাকা প্রয়োজন। সেই সমর্থন তাঁরা তখনই দেবেন, যখন দেখবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পক্ষপাতহীনভাবে অভিযান পরিচালনা করছে এবং তাদের দ্বারা নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা অপরাধীদের ধরুন, প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনুন। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করবেন না। ‘ডেভিল’ ধরার নামে যদি নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে সরকারের এই অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র র পর চ ল অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু ধর্ষণসহ নারী নিপীড়ন, খুন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার সমাবেশ, মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। এসব কর্মসূচি থেকে ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানানো হয়েছে।

এদিকে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম (এনজিসিএএফ)। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এ দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। সম্মাননা পাওয়া দুই কৃতী নারী হলেন– লেখক, গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা এবং লেখক, সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান। 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির মাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিতের জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি। গতকাল এক বিবৃতিতে কমিটির চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম ও আহ্বায়ক ডা. ফওজিয়া মোসলেম এ দাবি জানান। 
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে পাহাড় ও সমতলে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ‘ঢাকাস্থ আদিবাসী শিক্ষার্থীবৃন্দ’। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে এক আদিবাসী নারী ধর্ষণের প্রতিবাদে এ আয়োজন করে সংগঠনটি। 

শিশু ধর্ষণের দ্রুত বিচার, মাগুরা মেডিকেল কলেজ বাতিলের পাঁয়তারা বন্ধ করা, মব ভায়োলেন্স বন্ধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার দাবিতে মাগুরায় মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। গতকাল গণকমিটি মাগুরা জেলার উদ্যোগে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে জেলা প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, নারী উন্নয়ন ফোরাম ও স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতি। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও পথসভা করেছে গুরুদাসপুর যুব ব্লাড ডোনার অ্যাসোসিয়েশন। 

সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও খুনের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মানববন্ধন করেছে সোনারগাঁ নাগরিক সমাজ নামে একটি সামাজিক সংগঠন।

নোয়াখালীতে মানববন্ধন-সমাবেশ থেকে ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিতে এই দাবি জানানো হয়। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সকালে উপজেলার মুক্তিযুদ্ধ চত্বরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যৌথ বাহিনীর অভিযানে সাত দিনে ৩৮৩ অপরাধী গ্রেপ্তার, অস্ত্র বোমা ও গুলি উদ্ধার: আইএসপিআর
  • ন্যায়বিচারই এই নিষ্ঠুরতার একমাত্র জবাব
  • নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ–সমাবেশ
  • রণধীর জয়সোয়ালের মন্তব্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল
  • বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের মন্তব্য অযাথিত
  • রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ১৯৭
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত
  • ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে এখনো সংশয়ে বিএনপি
  • ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত
  • নিরাপত্তারক্ষীদেরই জীবনের নিরাপত্তা নেই: জিএম কাদের