রিয়ালকে হারতে হবে, মাদ্রিদ ডার্বি ড্র হতে হবে এবং নিজেদের জিততে হবে; এর কোনোটি এদিক-ওদিক হয়ে গেলেই লাইনের পেছনে গিয়ে দাঁড়াতে হতো তাদের। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে কাতালানদের ভাগ্যের বৃহস্পতি যেন তুঙ্গে।
বার্সেলোনার সৌভাগ্যের দ্বার খুলে রিয়াল মাদ্রিদ ২ ফেব্রুয়ারি এস্পানিওলের কাছে হেরেছে ১-০ গোলে। শনিবার মাদ্রিদ ডার্বিতে এমবাপ্পেরা পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের কাছে এবং তার পর রোববার রাতে ১০ জন নিয়েও বার্সেলোনা তাদের গোল উৎসব ধরে রাখল সেভিয়াকে ১-৪ গোলে হারিয়ে। এই তিনটি ম্যাচেই ওলট-পালট লা লিগার পয়েন্ট টেবিল। যেখানে কিছুদিন আগেও বার্সার সঙ্গে শীর্ষস্থানে থাকা দলের ৯ পয়েন্টের ব্যবধান ছিল। সেখানে এখন ঢিল ছোড়া দূরত্বের ব্যবধান ২ পয়েন্টের।
নিশ্চয় ভীষণ খুশি বার্সার জার্মান কোচ হ্যান্সি ফ্লিক, তবে তাঁকে এতদিনে যারা চিনে নিয়েছেন, তারা অন্তত এটা জানেন তৃপ্ত তিনি এত সহজে হন না। ‘লিগে যে চার-পাঁচটি দল ভালো করছে, তাদের মধ্যে আমরা রয়েছি। লিগে এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। তাই এই ছন্দটা ধরে রাখাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।’
ছন্দটা বার্সার শুরু হয়েছে গত মাসে জেদ্দায় সুপার কাপের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে ধরাশায়ী করার পর থেকেই। দলের দুই গোল মেশিন লেভানডস্কি ও রাফিনিয়াও ছুটছেন ঝড়ের বেগে। এদিন সেভিয়ার মাঠে ম্যাচের ৭ মিনিটেই গোল করে বার্সাকে এগিয়ে দেন লেভানডস্কি।
প্রথমার্ধে ১-১ গোলের ম্যাচের পরবর্তী সময়ে শুধুই বার্সার আধিপত্য। বদলি নেমে গোল করেন ফের্মিন লোপস। বাকি গোল দুটি করেন রাফিনিয়া ও গার্সিয়া। পরিসংখ্যান বলছে, এই মৌসুমে সব আসরে বার্সা যে ১১৩টি গোল করেছে, তার মধ্যে লেভার গোল সংখ্যা ৩১ এবং রাফিনিয়ার ২৪। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক গোলই এসেছে এই দুই মেশিন থেকে। লা লিগায় ১৯ গোল করে এই মুহূর্তে শীর্ষে আছেন লেভা, ১৬ গোল করে রিয়ালের এমবাপ্পে দ্বিতীয়তে আর ১৩ গোল করে রাফিনিয়া তৃতীয়তে।
এদিন ম্যাচে বার্সার মূল চ্যালেঞ্জ ছিল অবশ্য লোপেসের লাল কার্ড দেখা। রেফারি প্রথমে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখালেও ভিএআরের রায়ে পরে লাল কার্ড দেখান। আর ম্যাচের পরবর্তী ১০ মিনিট ১০ জনকে নিয়ে লিড ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে পড়ে বার্সা। আর এখানেই কোচ ফ্লিকের ৪-৪-১ কৌশল সফল হয়। শুরুতে তিনি একাদশ সাজিয়েছিলেন ৪-২-৩-১ ফরমেশনে, একজন খেলোয়াড় কমে গেলে পরে তাঁকে মাঝমাঠে কৌশলী হতে হয়। ‘যেভাবে আমরা ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পেরেছি, তাতে খুশি আমি। ১০ জন নিয়ে এই ফরমেশনে খেলাটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় ব্যাপার ছিল এবং এই ফরমেশনে আমরা চতুর্থ গোলটি সেট পিসে করতে পেরেছি।’ দারুণ এক সপ্তাহ কাটানোর পর দলের সবাইকে তিন দিনের বিশ্রামের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। কারণ সামনে বড় সব পরীক্ষায় নামতে হবে তাদের।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শবে কদরের বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত
লাইলাতুল কদর, যাকে শবে কদরও বলা হয়, তার অর্থ—মহিমান্বিত রজনী। কদর শব্দের অর্থ: ১. সম্মান করা: বিভিন্ন ফজিলতের কারণে এই রজনি সম্মানের অথবা যে ব্যক্তি উদ্যাপন করে সে সম্মানের পাত্র; ২। নির্ধারণ করা: এ রজনিতে পরবর্তী বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।
এ রাতে মুসলিমদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তাই একে লাইলাতুল কদর নামে অভিহিত করা হয়েছে।
শবে কদরের বৈশিষ্ট্য
মূলত কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণেই লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়েছে। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে শবে কদরের রাতে মক্কার জাবালে নুর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত রাসুলের (সা.) ওপর সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয়। আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে।’ (সুরা কদর, আয়াত: ১)
এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, সবকিছুর পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাদের লিখে দেওয়া হয়, এমনকি কে হজ্জ করবে, তাও লিখে দেওয়া হয়। যেমন, আল্লাহ বলেনন, ‘সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আমার নির্দেশে।’ (সুরা দুখান, আয়াত: ৩-৫)
এ রাতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ–তাআলা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ করেছেন, সুরা কদর; যা কিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে।
আরও পড়ুনরমজানে মহানবীর (সা.) আল্লাহভীতি২২ মার্চ ২০২৫ফজিলত
আল্লাহ বলেন, ‘শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত: ৩)
অর্থাৎ এ-রাতে ইবাদত করা তিরাশি বছর চার মাস ইবাদত করার চেয়ে উত্তম। এ ছাড়া এ রাতে সৎ ও ধার্মিক মুসলিমদের ওপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও নেয়ামত বর্ষিত হয়। রাসুল (সা.) সাহাবিদের এ রাতের ফজিলত বর্ণনা করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও একনিষ্ঠতা নিয়ে এ রাত্রি জাগরণ করবে, তার পূর্বের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৮০২)
এ-রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করে ইবাদতরত মানুষের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে থাকেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সে রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’ (সুরা কদর, আয়াত: ৪-৫)
হাদিসের বর্ননা অনুযায়ী, এ-রাতে যারা আল্লাহর আরাধনায় নিরত থাকবে, আল্লাহ তার ওপর থেকে দোজখের আগুন নিষিদ্ধ করে দেবেন।
আরও পড়ুনরমজানে মহানবী (সা.) যেভাবে বক্তব্য রাখতেন২১ মার্চ ২০২৫