Samakal:
2025-02-11@07:40:15 GMT

গবেষণার নামে ‘ ভোজনবিলাস’

Published: 11th, February 2025 GMT

গবেষণার নামে ‘ ভোজনবিলাস’

সুদূর আফ্রিকা থেকে গবেষণার জন্য দু’দফায় উড়িয়ে আনা হয়েছিল ১১ জোড়া উটপাখি। এর মধ্যে এখন মাত্র দুই জোড়া আছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) শেডে। গবেষণার বাকি উটপাখি নাই হয়ে গেছে। মাংসের স্বাদ পরখের জন্য চড়ানো হয় ‘রান্নার হাঁড়িতে’! একে একে গবেষণার উটপাখি চলে যায় কর্তাদের পেটে। গবেষণার নামে ‘ভোজনবিলাস’ হয়েছে ২০২৩ সালেও। সে সময় বিএলআরআই শেড থেকে গবেষণার ৩৮ মোরগ চুরি গেছে বলে আওয়াজ তোলা হয়। এ নিয়ে তদন্ত তদন্ত খেলা হলেও প্রতিবেদন আর আলোতে আসেনি। তবে চাউর আছে, সেসব মোরগ জবাই করে খেয়েদেয়ে গবেষণার শেড খালি করা হয়েছে।

শুধু গবেষণার প্রাণী দিয়ে পেটপূজা নয়, অনিয়ম-দুর্নীতি যেন বাসা বেঁধেছে ঢাকার সাভারের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানে। উৎপাদন বাড়িয়ে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বিএলআরআইর আবির্ভাব হলেও প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্তারা বেশি মনোযোগী প্রাণী কেনাকাটায়। কোটি কোটি টাকা খরচা করে নানা জাত উদ্ভাবন করলেও মাঠ পর্যায়ের খামারে নেই সেই প্রাণীর বিচরণ। শতকের কাছাকাছি উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে তিন-চারটি ছাড়া বাকি কোনোটিই খামারির মনে ধরেনি। ফলে মাঠে মারা গেছে গবেষণা।

গবেষণাগারবন্দি গবেষণা
বিএলআরআইর গবেষণালব্ধ ৯৩টি প্রযুক্তি ও প্যাকেজের মধ্যে পিপিআর ভ্যাকসিন, গোল পক্স ভ্যাকসিন, নেপিয়ার ঘাস ছাড়া আর কোনো প্রযুক্তিই খামারির হাতে পৌঁছেনি। এর মধ্যে নেপিয়ার ঘাস বিদেশ থেকে আমদানি করা। মুন্সীগঞ্জ ক্যাটেল, রেড চিটাগং ক্যাটেল (আরসিসি) দেশীয় জাত হলেও এসব উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে বিএলআরআই। রেড চিটাগং ক্যাটল প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি দাবি করেছিলেন, এই জাত উন্নয়নের মাধ্যমে গাভির দুধ উৎপাদনক্ষমতা এক কেজি থেকে ছয় কেজিতে উন্নীত করেছেন। তবে এই জাতের গাভি কৃষকের কাছেই নেই। ১০টি গাভি কেনার অনিয়মের তদন্তে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা দেখেছেন, ১০ গাভির মধ্যে চারটি দুধ দিচ্ছে, ছয়টি দুধ দেওয়ার পর্যায়েই নিতে পারেননি গবেষকরা। যেসব গাভি দুধ দিচ্ছে, সেগুলোও দুই লিটারের কম। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় বাড়তি দাম দিয়ে স্বাস্থ্যহীন রেড চিটাগং ক্যাটল জাতের গাভি কেনারও প্রমাণ মিলেছে।

বিএলআরআইর উদ্ভাবিত ডিমপাড়া মুরগির জাত ‘শুভ্রা’। এটি মাঠ পর্যায়ে না থাকলেও সরকারের ‘সাফল্য’ তালিকায় শুভ্রার নাম আছে। শুভ্রা বিএলআরআইয়ে ‘লেয়ার স্ট্রেইন-১’ নামে পরিচিত। এ জাত উদ্ভাবনে সময় লেগেছে ১১ বছর। শুভ্রার জাত সম্প্রসারণের দায়িত্ব ছিল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, উদ্ভাবন ত্রুটির কারণে শুভ্রার যে সংখ্যক ডিম দেওয়ার কথা ছিল, তা দিতে পারেনি। ফলে শুভ্রার ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন খামারিরা। অথচ ২০১১ সালে উদ্ভাবিত এই মুরগিটির বিষয়ে বিএলআরআইর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, শুভ্রা বছরে ২৮০ থেকে ২৯৫টি ডিম দেয়। বরিশালের খামারি আবদুর রহমান বলেন, শুভ্রা ডিম দেয় কম, খায় বেশি। উৎপাদন খরচে পোষায় না। 
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, শুভ্রাকে সফল উদ্ভাবন হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করার ফলে এর গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। শুভ্রার পেছনে টাকা, শ্রম ও মেধা খরচ হয়েছে। বাস্তবতা হলো, শুভ্রা কোথাও নেই। এই দায় কেউ এড়াতে পারে না।

২০ থেকে ২৫ বছর আগে ভারত থেকে ডিম এনে শখের বশে টার্কি মুরগির পালন শুরু হয়। তবে ২০১৫-১৬ সালের দিকে গণমাধ্যম, ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে টার্কি পালন বিষয়ে সাধারণ মানুষ জানতে পারেন। এ কারণে হঠাৎ টার্কি মুরগি পালন জনপ্রিয়তা পায়। তখন সাতপাঁচ না ভেবে বড় পরিসরে এই মুরগি পালনে খামারিদের উৎসাহ দেয় বিএলআরআই। ২০১৮ সালে ‘খামারি পর্যায়ে টার্কি পালন ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক বিএলআরআইর এক পুস্তিকায় এই মুরগি পালনের লাভজনক দিক তুলে ধরা হয়। বহু তরুণ লাভের প্রতিশ্রুতি দেখে টার্কি পালন শুরু করেন। কয়েক বছর পরই মুখ থুবড়ে পড়ে সেসব উদ্যোগ। আশা দেখানো টার্কি ব্যবসা আর ডানা মেলতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একপর্যায়ে বাজারে টার্কির চাহিদা কমে যায়। ফলে অনেক খামারি ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়ে এই ব্যবসা ছেড়ে দেন।
দুধ উৎপাদনশীল মহিষের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ২০১৪ সাল থেকে দেশে প্রথমবারের মতো মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম চালু করে বিএলআরআই। ২০১৯ সালে ‘মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ৭৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্পটি পাঁচ বছর মাঠে থাকলেও সাফল্য শুধু কাগজে-কলমে। খামার মালিকরা বলছেন, বর্তমানে ৭৪ দেশে মহিষের বাণিজ্যিক উৎপাদন হলেও বাংলাদেশে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে এশিয়ার সব দেশে মহিষের উৎপাদন বাড়লেও বাংলাদেশে উল্টো কমেছে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের খামারি মাহমুদুল হাসান বলেন, খাতা-কলমে মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও বাস্তবে তেমন কাজই হয়নি। ভোলা ও নোয়াখালীর চরাঞ্চলে মহিষ বেশি পালন করা হলেও জাত উন্নয়ন হয়নি। এ কারণে মহিষ পালন থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেন কৃষকরা। 
৮-৯ বছর ধরে গবেষণা করে বিএলআরআই দেশি মুরগির মতো দেখতে এবং একই স্বাদের মাংস উৎপাদনকারী ‘মাল্টিকালার টেবিল চিকেন’ (এমসিটিসি) নামে নতুন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করে। তবে সেই মুরগি এখন খামারির কাছে নেই।

গবেষণার প্রাণীতে ‘ভূরিভোজ’
গরু-খাসির বিকল্প মাংসের জোগান দিতে উটপাখি সম্প্রসারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে একটি গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয় বিএলআরআই। এর গবেষণা ফল ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাওয়ার কথা ছিল। ২০২০ সালে আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল সাতটি উটপাখি। পরে অধিকতর গবেষণার জন্য আরও ১৫টি অপ্রাপ্তবয়স্ক উটপাখি আমদানি করা হয়। তখন প্রকল্প পরিচালক মো.

সাজেদুল করিম সরকার বলেছিলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী আফ্রিকা থেকে আনা এসব প্রাণী সহজেই পালন করা যাবে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি উটপাখি ১০০ থেকে ১৫০ কেজি ওজনের হয়। পাখিগুলো আড়াই বছর বয়সে ডিম দিতে পারে। বছরে ডিম দেয় ২০ থেকে ২৫টি। এ হিসাবে একটি উটপাখি তিনটি দেশীয় গরুর সমান মাংসের চাহিদা পূরণে সক্ষম। এ বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাংস বাজারজাত করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে মাঠ পর্যায়ে উটপাখি এখনও ‘ডুমুরের ফুল’। উল্টো বিএলআরআইর গবেষণার ১৮টি উটপাখি কর্মকর্তাদের পেটে চলে যায়। শুধু উটপাখি নয়, ২০২৩ সালে গবেষণার ৩৮টি মোরগ জবাই করে খাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পোলট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার বলেন, ২২টি উটপাখির প্রতিটিতে ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। চার-পাঁচটি মারা গেছে। বাকিগুলোর মাংসের গুণাগুণ পরীক্ষা করতে জবাই করা হয়েছে।

‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি’
আলোচিত প্রাণীর রোগের নাম ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)’। বিদেশ থেকে এলএসডির টিকা এনে রোগটি প্রতিরোধ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এবার দেশীয় বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত এলএসডি ভ্যাকসিন সিড (টিকা বীজ) প্রযুক্তি হস্তান্তর হতে যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে টিকা বীজ হস্তান্তর করবে বিএলআরআই। এই টিকা বীজ থেকে এলএসডি ভ্যাকসিন তৈরি করবে মহাখালীর প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই)। তবে বিএলআরআইর বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত এলএসডি ভ্যাকসিন সিডের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিএলআরআইর ‘জুনোসিস এবং আন্তঃসীমান্ত প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ গবেষণা’ প্রকল্পের আওতায় এলএসডি সিড উদ্ভাবন করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। গত ১১ জুন প্রকল্প পরিচালক বিএলআরআইর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ তৎকালীন মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে গত ২৭ জুনের মধ্যে এলএসডি সিড হস্তান্তরের কথা জানান। ওই চিঠির দু’দিন পর ১৩ জুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ বিষয়ে চিঠি লেখেন মহাপরিচালক। তবে শেষ পর্যন্ত এলএসডি সিড আর হস্তান্তর হয়নি।
এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তখনকার মহাপরিচালক ডা. রেয়াজুল হক বলেন, এলএসডি ভ্যাকসিনের গুণগত মান নিয়ে সন্দেহ ছিল। একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন এক্সটার্নাল টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা যাচাই-বাছাই করা দরকার ছিল। তবে বিএলআরআই তা কানে তোলেনি। এটি তড়িঘড়ির বিষয় নয়। মাঠ পর্যায়ে উল্টো প্রভাব পড়লে দায়ভার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঘাড়েই পড়বে।

ভ্যাকসিন ভ্যালিডেশন কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা বলেন, আমরা ১০ গ্রাম নয়, মাত্র দুটি খামারের এক গ্রুপ গরুর ওপর প্রয়োগ করেছি। ফল যা পেয়েছি, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। এখন ভ্যাকসিনটি হস্তান্তর কিংবা মাঠে প্রয়োগের বিষয়টি বিএলআরআই কর্তৃপক্ষ দেখছে।
গত জুনে শেষ হওয়া ৩৯ কোটি টাকার ‘জুনোসিস এবং আন্তঃসীমান্তীয় প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক প্রকল্পে গবেষণাতেই খরচ হয় পাঁচ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন মাঠে নিতে হলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত গাইডলাইন অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। টিকা বীজের তথ্য খামারি বা উৎপাদকের কাছে সরবরাহ করা উচিত। অথচ বিএলআরআই উদ্ভাবিত এলএসডি টিকা বীজের ক্ষেত্রে তা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএলআরআইর একাধিক বিজ্ঞানী বলেন, মাঠপর্যায়ে প্রাণীর বয়স, জাত ও লিঙ্গভেদে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ডোজ নির্ধারণ ও প্রাণিদেহে কার্যকারিতার সময়কাল নির্ধারণের বিস্তারিত তথ্য নেই। 

অজানা রোগের থাবা
গত জানুয়ারির শেষ দিকে হঠাৎ অজানা রোগ ছড়িয়ে পড়ে বিএলআরআইর গবেষণা শেডে। কোয়েল শেড থেকে শুরু হওয়া প্রাণঘাতী রোগ থাবা বসায় হাঁস, টার্কি ও বিদেশি মুরগির জাত পিওর লাইনের শুভ্রা-স্বর্ণা শেডেও। এ ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও বিষয়টি লুকিয়েছেন বিএলআরআইর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে মারা যাওয়া কোয়েল পাখি তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট শেডের পেছনে (উত্তর পাশে) সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে রেখে চাপা দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বার্ড ফ্লু বা এভিয়েন ইনফ্লুয়েন্স ভাইরাস বা কী কারণে এটি মারা গেল, তা নিয়ে প্রস্তুতি নেই। গবেষণার ১৫০টি জাপানি জাতের শুভ্রা-স্বর্ণার মধ্যে ১৩০টিই মারা গেছে। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাজেদুল করিম সরকার বলেন, কোয়েল থেকে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ৪০ থেকে ৪৫টি টার্কিও মারা গেছে। 
এ ব্যাপারে বিএলআরআইর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক বলেন, কোয়েলসহ অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যুর কারণ বার্ড ফ্লু নয়। আমাদের প্রতি শেডে বিভিন্ন জাতের দুই হাজারের মতো প্রাণী থাকে। সেখানে দুই-চারটা মারা যেতেই পারে। তিনি বলেন, বিএলআরআই দেশে প্রাণীর জাত উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রাখছে। এখানে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি নেই। বিজ্ঞানীরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বিভিন্ন জাতের ৬০ থেকে ৭০টি প্রাণী মারা গেছে। তবে মৃত্যুর কারণ বার্ড ফ্লু নয়। বিএলআরআইর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। বিএলআরআই গবেষণায় যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তা জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ঠ পর য য় প রকল প র ন প রকল প ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গবেষণার নামে ‘ ভোজনবিলাস’

সুদূর আফ্রিকা থেকে গবেষণার জন্য দু’দফায় উড়িয়ে আনা হয়েছিল ১১ জোড়া উটপাখি। এর মধ্যে এখন মাত্র দুই জোড়া আছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) শেডে। গবেষণার বাকি উটপাখি নাই হয়ে গেছে। মাংসের স্বাদ পরখের জন্য চড়ানো হয় ‘রান্নার হাঁড়িতে’! একে একে গবেষণার উটপাখি চলে যায় কর্তাদের পেটে। গবেষণার নামে ‘ভোজনবিলাস’ হয়েছে ২০২৩ সালেও। সে সময় বিএলআরআই শেড থেকে গবেষণার ৩৮ মোরগ চুরি গেছে বলে আওয়াজ তোলা হয়। এ নিয়ে তদন্ত তদন্ত খেলা হলেও প্রতিবেদন আর আলোতে আসেনি। তবে চাউর আছে, সেসব মোরগ জবাই করে খেয়েদেয়ে গবেষণার শেড খালি করা হয়েছে।

শুধু গবেষণার প্রাণী দিয়ে পেটপূজা নয়, অনিয়ম-দুর্নীতি যেন বাসা বেঁধেছে ঢাকার সাভারের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানে। উৎপাদন বাড়িয়ে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বিএলআরআইর আবির্ভাব হলেও প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্তারা বেশি মনোযোগী প্রাণী কেনাকাটায়। কোটি কোটি টাকা খরচা করে নানা জাত উদ্ভাবন করলেও মাঠ পর্যায়ের খামারে নেই সেই প্রাণীর বিচরণ। শতকের কাছাকাছি উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে তিন-চারটি ছাড়া বাকি কোনোটিই খামারির মনে ধরেনি। ফলে মাঠে মারা গেছে গবেষণা।

গবেষণাগারবন্দি গবেষণা
বিএলআরআইর গবেষণালব্ধ ৯৩টি প্রযুক্তি ও প্যাকেজের মধ্যে পিপিআর ভ্যাকসিন, গোল পক্স ভ্যাকসিন, নেপিয়ার ঘাস ছাড়া আর কোনো প্রযুক্তিই খামারির হাতে পৌঁছেনি। এর মধ্যে নেপিয়ার ঘাস বিদেশ থেকে আমদানি করা। মুন্সীগঞ্জ ক্যাটেল, রেড চিটাগং ক্যাটেল (আরসিসি) দেশীয় জাত হলেও এসব উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে বিএলআরআই। রেড চিটাগং ক্যাটল প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি দাবি করেছিলেন, এই জাত উন্নয়নের মাধ্যমে গাভির দুধ উৎপাদনক্ষমতা এক কেজি থেকে ছয় কেজিতে উন্নীত করেছেন। তবে এই জাতের গাভি কৃষকের কাছেই নেই। ১০টি গাভি কেনার অনিয়মের তদন্তে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা দেখেছেন, ১০ গাভির মধ্যে চারটি দুধ দিচ্ছে, ছয়টি দুধ দেওয়ার পর্যায়েই নিতে পারেননি গবেষকরা। যেসব গাভি দুধ দিচ্ছে, সেগুলোও দুই লিটারের কম। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় বাড়তি দাম দিয়ে স্বাস্থ্যহীন রেড চিটাগং ক্যাটল জাতের গাভি কেনারও প্রমাণ মিলেছে।

বিএলআরআইর উদ্ভাবিত ডিমপাড়া মুরগির জাত ‘শুভ্রা’। এটি মাঠ পর্যায়ে না থাকলেও সরকারের ‘সাফল্য’ তালিকায় শুভ্রার নাম আছে। শুভ্রা বিএলআরআইয়ে ‘লেয়ার স্ট্রেইন-১’ নামে পরিচিত। এ জাত উদ্ভাবনে সময় লেগেছে ১১ বছর। শুভ্রার জাত সম্প্রসারণের দায়িত্ব ছিল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, উদ্ভাবন ত্রুটির কারণে শুভ্রার যে সংখ্যক ডিম দেওয়ার কথা ছিল, তা দিতে পারেনি। ফলে শুভ্রার ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন খামারিরা। অথচ ২০১১ সালে উদ্ভাবিত এই মুরগিটির বিষয়ে বিএলআরআইর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, শুভ্রা বছরে ২৮০ থেকে ২৯৫টি ডিম দেয়। বরিশালের খামারি আবদুর রহমান বলেন, শুভ্রা ডিম দেয় কম, খায় বেশি। উৎপাদন খরচে পোষায় না। 
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, শুভ্রাকে সফল উদ্ভাবন হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করার ফলে এর গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। শুভ্রার পেছনে টাকা, শ্রম ও মেধা খরচ হয়েছে। বাস্তবতা হলো, শুভ্রা কোথাও নেই। এই দায় কেউ এড়াতে পারে না।

২০ থেকে ২৫ বছর আগে ভারত থেকে ডিম এনে শখের বশে টার্কি মুরগির পালন শুরু হয়। তবে ২০১৫-১৬ সালের দিকে গণমাধ্যম, ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে টার্কি পালন বিষয়ে সাধারণ মানুষ জানতে পারেন। এ কারণে হঠাৎ টার্কি মুরগি পালন জনপ্রিয়তা পায়। তখন সাতপাঁচ না ভেবে বড় পরিসরে এই মুরগি পালনে খামারিদের উৎসাহ দেয় বিএলআরআই। ২০১৮ সালে ‘খামারি পর্যায়ে টার্কি পালন ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক বিএলআরআইর এক পুস্তিকায় এই মুরগি পালনের লাভজনক দিক তুলে ধরা হয়। বহু তরুণ লাভের প্রতিশ্রুতি দেখে টার্কি পালন শুরু করেন। কয়েক বছর পরই মুখ থুবড়ে পড়ে সেসব উদ্যোগ। আশা দেখানো টার্কি ব্যবসা আর ডানা মেলতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একপর্যায়ে বাজারে টার্কির চাহিদা কমে যায়। ফলে অনেক খামারি ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়ে এই ব্যবসা ছেড়ে দেন।
দুধ উৎপাদনশীল মহিষের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ২০১৪ সাল থেকে দেশে প্রথমবারের মতো মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম চালু করে বিএলআরআই। ২০১৯ সালে ‘মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ৭৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্পটি পাঁচ বছর মাঠে থাকলেও সাফল্য শুধু কাগজে-কলমে। খামার মালিকরা বলছেন, বর্তমানে ৭৪ দেশে মহিষের বাণিজ্যিক উৎপাদন হলেও বাংলাদেশে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে এশিয়ার সব দেশে মহিষের উৎপাদন বাড়লেও বাংলাদেশে উল্টো কমেছে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের খামারি মাহমুদুল হাসান বলেন, খাতা-কলমে মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও বাস্তবে তেমন কাজই হয়নি। ভোলা ও নোয়াখালীর চরাঞ্চলে মহিষ বেশি পালন করা হলেও জাত উন্নয়ন হয়নি। এ কারণে মহিষ পালন থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেন কৃষকরা। 
৮-৯ বছর ধরে গবেষণা করে বিএলআরআই দেশি মুরগির মতো দেখতে এবং একই স্বাদের মাংস উৎপাদনকারী ‘মাল্টিকালার টেবিল চিকেন’ (এমসিটিসি) নামে নতুন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করে। তবে সেই মুরগি এখন খামারির কাছে নেই।

গবেষণার প্রাণীতে ‘ভূরিভোজ’
গরু-খাসির বিকল্প মাংসের জোগান দিতে উটপাখি সম্প্রসারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে একটি গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয় বিএলআরআই। এর গবেষণা ফল ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাওয়ার কথা ছিল। ২০২০ সালে আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল সাতটি উটপাখি। পরে অধিকতর গবেষণার জন্য আরও ১৫টি অপ্রাপ্তবয়স্ক উটপাখি আমদানি করা হয়। তখন প্রকল্প পরিচালক মো. সাজেদুল করিম সরকার বলেছিলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী আফ্রিকা থেকে আনা এসব প্রাণী সহজেই পালন করা যাবে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি উটপাখি ১০০ থেকে ১৫০ কেজি ওজনের হয়। পাখিগুলো আড়াই বছর বয়সে ডিম দিতে পারে। বছরে ডিম দেয় ২০ থেকে ২৫টি। এ হিসাবে একটি উটপাখি তিনটি দেশীয় গরুর সমান মাংসের চাহিদা পূরণে সক্ষম। এ বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাংস বাজারজাত করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে মাঠ পর্যায়ে উটপাখি এখনও ‘ডুমুরের ফুল’। উল্টো বিএলআরআইর গবেষণার ১৮টি উটপাখি কর্মকর্তাদের পেটে চলে যায়। শুধু উটপাখি নয়, ২০২৩ সালে গবেষণার ৩৮টি মোরগ জবাই করে খাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পোলট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার বলেন, ২২টি উটপাখির প্রতিটিতে ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। চার-পাঁচটি মারা গেছে। বাকিগুলোর মাংসের গুণাগুণ পরীক্ষা করতে জবাই করা হয়েছে।

‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি’
আলোচিত প্রাণীর রোগের নাম ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)’। বিদেশ থেকে এলএসডির টিকা এনে রোগটি প্রতিরোধ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এবার দেশীয় বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত এলএসডি ভ্যাকসিন সিড (টিকা বীজ) প্রযুক্তি হস্তান্তর হতে যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে টিকা বীজ হস্তান্তর করবে বিএলআরআই। এই টিকা বীজ থেকে এলএসডি ভ্যাকসিন তৈরি করবে মহাখালীর প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই)। তবে বিএলআরআইর বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত এলএসডি ভ্যাকসিন সিডের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিএলআরআইর ‘জুনোসিস এবং আন্তঃসীমান্ত প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ গবেষণা’ প্রকল্পের আওতায় এলএসডি সিড উদ্ভাবন করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। গত ১১ জুন প্রকল্প পরিচালক বিএলআরআইর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ তৎকালীন মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে গত ২৭ জুনের মধ্যে এলএসডি সিড হস্তান্তরের কথা জানান। ওই চিঠির দু’দিন পর ১৩ জুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ বিষয়ে চিঠি লেখেন মহাপরিচালক। তবে শেষ পর্যন্ত এলএসডি সিড আর হস্তান্তর হয়নি।
এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তখনকার মহাপরিচালক ডা. রেয়াজুল হক বলেন, এলএসডি ভ্যাকসিনের গুণগত মান নিয়ে সন্দেহ ছিল। একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন এক্সটার্নাল টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা যাচাই-বাছাই করা দরকার ছিল। তবে বিএলআরআই তা কানে তোলেনি। এটি তড়িঘড়ির বিষয় নয়। মাঠ পর্যায়ে উল্টো প্রভাব পড়লে দায়ভার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঘাড়েই পড়বে।

ভ্যাকসিন ভ্যালিডেশন কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা বলেন, আমরা ১০ গ্রাম নয়, মাত্র দুটি খামারের এক গ্রুপ গরুর ওপর প্রয়োগ করেছি। ফল যা পেয়েছি, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। এখন ভ্যাকসিনটি হস্তান্তর কিংবা মাঠে প্রয়োগের বিষয়টি বিএলআরআই কর্তৃপক্ষ দেখছে।
গত জুনে শেষ হওয়া ৩৯ কোটি টাকার ‘জুনোসিস এবং আন্তঃসীমান্তীয় প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক প্রকল্পে গবেষণাতেই খরচ হয় পাঁচ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন মাঠে নিতে হলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত গাইডলাইন অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। টিকা বীজের তথ্য খামারি বা উৎপাদকের কাছে সরবরাহ করা উচিত। অথচ বিএলআরআই উদ্ভাবিত এলএসডি টিকা বীজের ক্ষেত্রে তা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএলআরআইর একাধিক বিজ্ঞানী বলেন, মাঠপর্যায়ে প্রাণীর বয়স, জাত ও লিঙ্গভেদে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ডোজ নির্ধারণ ও প্রাণিদেহে কার্যকারিতার সময়কাল নির্ধারণের বিস্তারিত তথ্য নেই। 

অজানা রোগের থাবা
গত জানুয়ারির শেষ দিকে হঠাৎ অজানা রোগ ছড়িয়ে পড়ে বিএলআরআইর গবেষণা শেডে। কোয়েল শেড থেকে শুরু হওয়া প্রাণঘাতী রোগ থাবা বসায় হাঁস, টার্কি ও বিদেশি মুরগির জাত পিওর লাইনের শুভ্রা-স্বর্ণা শেডেও। এ ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও বিষয়টি লুকিয়েছেন বিএলআরআইর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে মারা যাওয়া কোয়েল পাখি তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট শেডের পেছনে (উত্তর পাশে) সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে রেখে চাপা দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বার্ড ফ্লু বা এভিয়েন ইনফ্লুয়েন্স ভাইরাস বা কী কারণে এটি মারা গেল, তা নিয়ে প্রস্তুতি নেই। গবেষণার ১৫০টি জাপানি জাতের শুভ্রা-স্বর্ণার মধ্যে ১৩০টিই মারা গেছে। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাজেদুল করিম সরকার বলেন, কোয়েল থেকে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ৪০ থেকে ৪৫টি টার্কিও মারা গেছে। 
এ ব্যাপারে বিএলআরআইর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক বলেন, কোয়েলসহ অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যুর কারণ বার্ড ফ্লু নয়। আমাদের প্রতি শেডে বিভিন্ন জাতের দুই হাজারের মতো প্রাণী থাকে। সেখানে দুই-চারটা মারা যেতেই পারে। তিনি বলেন, বিএলআরআই দেশে প্রাণীর জাত উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রাখছে। এখানে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি নেই। বিজ্ঞানীরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বিভিন্ন জাতের ৬০ থেকে ৭০টি প্রাণী মারা গেছে। তবে মৃত্যুর কারণ বার্ড ফ্লু নয়। বিএলআরআইর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। বিএলআরআই গবেষণায় যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তা জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ