জিম্মি মুক্তি স্থগিত করল হামাস, ‘সর্বোচ্চ সতর্কতায়’ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
Published: 11th, February 2025 GMT
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে হামাস। এর জেরে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জিম্মি মুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এ ঘোষণার পর হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের পাল্টা অভিযোগ এনেছে ইসরায়েল। গাজায় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে দেশটি। এতে ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলের কারণে যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরতে দেরি হয়েছে। তাঁদেরকে গুলির লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে দেয়নি ইসরায়েল। তাই পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি স্থগিত থাকবে। হামাসের এই বিবৃতির পর পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। তিনি বলেন, ‘হামাস জিম্মি মুক্তি বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছে, তা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির পুরোপুরি লঙ্ঘন। আমি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে গাজায় সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি।’ আর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, হামাসের ঘোষণার বিষয়ে জিম্মি ব্যক্তিদের পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হামাস বলেছে, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি বিলম্বিত করছে।’ তারা আরও বলেছে, ‘উত্তর গাজায় বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত করা, বিভিন্ন এলাকায় তাদের লক্ষ্যবস্তুতে গোলাবর্ষণ ও গুলি চালানো এবং মানবিক সাহায্যের সমস্ত সম্মত জায়গায় প্রবেশের অনুমতি দিতে ব্যর্থতা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত।’
অপরদিকে ইসরায়েল হামাসের এই সিদ্ধান্তকে গত মাসে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির ‘সম্পূর্ণ লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘গাজায় সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্য’ প্রস্তুত। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্বে ১৭ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বাকি ছিল, যাদের মধ্যে আটজন মৃত বলছে ইসরায়েল। বাকি জিম্মিদের পরবর্তী মুক্তির তারিখ শনিবার ছিল।
এদিকে আরেকটি বিবৃতিতে হামাস বলেছে, জিম্মিদের মুক্তির জন্য এগিয়ে যাওয়ার ‘দরজা খোলা আছে’। এ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েল শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার গাজা কিনে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। সংগঠনটির নেতারা বলেন, ট্রাম্প এ ধরনের উদ্যোগ নিলে আবারও বিপর্যয় নেমে আসবে। গাজা কারও সম্পত্তি নয় যে, এটা কেনাবেচা যাবে।
ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, তিনি গাজা ‘কিনে নিতে ও এর মালিকানা পাওয়ার অঙ্গীকার’ করেছেন। এ বক্তব্যের পর হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক বিবৃতিতে জানান, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অবাস্তব। আবাসন ব্যবসায়ীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
১৫ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এরই মধ্যে হামাসের কাছে বন্দী থাকা ১৬ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মুক্তি পাচ্ছেন ইসরায়েলে বন্দী কয়েক শ ফিলিস্তিনিও। এ ধারাবাহিকতায় আগামী শনিবার আরও তিনজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল হামাসের।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী চুক্তির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই বন্দি বিনিময় হবে। একইসঙ্গে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘরে ফেরার অনুমতি পাবে। পাশাপাশি ত্রাণবাহী লরিগুলোকে প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা বাকী জিম্মিরা মুক্তি পাবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে। এর মাধ্যমে ‘টেকসই শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে’।
তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে গাজা পুনর্গঠন হবে- যা শেষ করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। একই সাথে মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেয়া হবে।
পশ্চিম তীরের বিখ্যাত পাঠাগারে অভিযান
সিএনএন জানায়, অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে পাঠাগারে অভিযান চালিয়ে বই জব্দ ও মালিক ইয়াদ মুনাসহ দু’জনকে আটক করেছে ইসরায়েলের পুলিশ। ছবিতে দেখা যায়, বই, নোটবুক ও লেখার উপকরণ মাটিতে ছড়িয়ে রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র ত র জন য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
২১ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কিলার মাসুম গ্রেপ্তার
ফতুল্লায় কিশোর মুরাদ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মাসুম ওরফে দাদা মাসুমকে গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জ আদমজীনগর র্যাব-১১।
দীর্ঘ ২১ বছর পর নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লায় কিশোর মুরাদ হত্যা মামলায় মাসুম নামের এক যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেছে অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. মোমিনুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা দেন।
নারায়ণগঞ্জর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মাসুম ফতুল্লা তল্লা ছোট মজিদ মসজিদ এলাকার আব্দুল আহাদের ছেলে এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। নিহত কিশোর মুরাদ একই এলাকার পনির হোসেনের ছেলে।
গত ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে সাজাপ্রাপ্ত আসামী মো: মাসুম’সহ তার সহযোগিরা মিলে মুরাদকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে।
এই ঘটনায় মুরাদের মা সাহারা খাতুন বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। সেই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষে এই রায় ঘোষণা করেন।
আলোচিত হত্যাকান্ডের দীর্ঘ একুশ বছর পর গত (১০ এপ্রিল) এ রায় ঘোষনা করা হয়। রায় ঘোষনার সময় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মাসুম পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মোঃ মাসুম (৪৭) পিতা-আব্দুল আহাদ, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা তল্লা ছোট মসজিদ এলাকা থেকে তাকে( ১৫ এপ্রিল)রাত্রে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ আদমজীনগর এর অভিযানিক দল র্যাব-১১
নারায়ণগঞ্জ আদমজীনগর র্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মো. ইশতিয়াক হোসাইন স্বাক্ষরিত প্রেস রিলিজে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেফতারকৃতকে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
একটি সূত্রে জানাগেছে, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কিলার মাসুম ওরফে দাদা মাসুম নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তার বিরুদ্ধে শহরের তল্লা এলাকার পনিরের ছেলে মুরাদ (১) হত্যা, তল্লা গঞ্জে আলী শাহ্ রোড়ের রহিমের ছেলে মুরাদ (২) হত্যা, নগরখানপুরের রনি হত্যা, তল্লা গঞ্জে আলী শাহ্ রোড়ের হাওয়া বেগম হত্যা এবং নারায়ণগঞ্জের ডনচেম্বারের খোকা ও মেজরকে দাউদকান্দি নিয়ে জোড়া হত্যাসহ বেশ কিছু হত্যা মামলার আসামি। পনিরের ছেলে মুরাদ (১) হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে খুন, মাদক, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। তার কাছে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ অস্ত্র যা দিয়ে তিনি এ সকল অপকর্মগুলো করে বেড়ায়। শুধু তাই নয় তার রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী।
তার অন্যতম সহযোগীরা হলেন- তল্লা ছোট মসজিদ এলাকার ভাগিনা পারভেজ, বরফকল শীতালক্ষ্যা হাউজিংয়ের তুষার, গঞ্জেআলী শাহ্ রোড় এলাকার বাবু ও তল্লা রেল লাইন এলাকার মুদি দোকানদার টুকুর ছেলে অন্তু। তারা খুন, মাদক, চাঁদাবাজি,ডাকাতি ও ছিনতাইসহ অসংখ্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে একাধিক বা কারাগারভোগ করেছেন।
মাসুম ওরফে দাদা মাসুম ও তার সহযোগীদের অত্যাচার ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে অতিষ্ঠ ১১নং ওয়ার্ডবাসী। আর সেই খুনসহ ডাকাতি মাদক, চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলার আসামি মাসুকে শেল্ডার দিচ্ছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ এক নেতা।
শুধু তাই নয় মাসুমকে ১১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক করার জন্য চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।