সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিপেটা, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বেলা একটার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছিলেন তাঁরা। বেলা দুইটার দিকে তাঁদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। পুলিশের লাঠিপেটার পর আন্দোলনকারীরা সড়ক ছেড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।

এদিকে গতকাল একই সময়ে আরও একটি দল শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। তাঁরা সরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়োগবঞ্চিত দাবি করে আন্দোলনে নামেন। তাঁদের ওপরও লাঠিপেটা করে পুলিশ। রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করছিলেন।

শাহবাগ ছাড়াও প্রেসক্লাব, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পেছনে টিঅ্যান্ডটি ভবনের সামনে আরও দুটি দল দাবি আদায়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান করে। মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে প্রথমে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আগের দিন রোববার তাঁরা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন। গতকাল ছয় দফা দাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত প্রবাসী শ্রমিকেরা টিঅ্যান্ডটি ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

এক দিনে রাজধানীর চার জায়গায় দিনভর বিক্ষোভ–সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শাহবাগ হয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনকারীরা রাস্তায় অবস্থান নেওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়ে মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। এ সময় তাঁরা রাস্তা থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে বাধ্য হন।

শাহবাগ অবরোধ ও পুলিশি তৎপরতা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ দাবিতে আন্দোলনকারীরা বেলা একটার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। তখন শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ দফায় দফায় লাঠিপেটা, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন।

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জেমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নিয়োগ বাতিল করে যে রায় দেওয়া হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। বর্তমান সরকারই আমাদের নিয়োগের সুপারিশ করে আবার তা বাতিল করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তা থেকে সরব না।’

আন্দোলনকারীরা বলেছেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে প্রহসন চলছে।

আন্দোলনকারীদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় একই বছরের ২১ এপ্রিল। ১২ জুন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ৩১ অক্টোবর ফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সুপারিশপ্রাপ্ত হননি, এমন ৩১ জন হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ ফেব্রুয়ারি বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।

এদিকে শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদ এক বিবৃতিতে বলেন, সভা-সমাবেশসহ যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ দিয়ে বলপ্রয়োগ করে দমন করা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী।

ছয় মাসে শতাধিক আন্দোলন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক যৌক্তিক বা অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষার্থী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ আন্দোলনের নামে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এতে ঢাকার যানজট আরও তীব্র হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তি-কষ্ট বাড়ছে।

গত ছয় মাসে ছোট-বড় মিলিয়ে রাজধানীতে শতাধিক আন্দোলনের তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো। এর মধ্যে অনেক সংগঠন ও গোষ্ঠীর আন্দোলন এখনো চলমান। এমন অনেক সংগঠনের ব্যানারেও আন্দোলন হচ্ছে, যেসব সংগঠনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। শুধু দাবি জানানোর জন্য বেশ কিছু সংগঠনের জন্ম হয়েছে। আবার কেউ কেউ কোনো ব্যানার বা সংগঠন ছাড়াই আন্দোলনে নেমেছে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক আন্দোলন ও দাবিদাওয়া আসছে। দাবিগুলোর মধ্যে কোনটি যৌক্তিক আবার কোনোটি অযৌক্তিক। অতীতে কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময় অনেকে যৌক্তিক দাবিও প্রকাশ করতে পারেনি।

এসব দাবি ও আন্দোলন নিয়ে সরকারের করণীয় সম্পর্কে হাসানুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে তো সবার সব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট করে বলা উচিত, যেসব যৌক্তিক দাবি এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো মানা হবে। অন্য সব যৌক্তিক দাবি একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রয়োজনে পরবর্তী সরকার অন্য যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র র স মন অবর ধ স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

স্ত্রীকে বিদায় বলে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন স্বামী

স্ত্রীকে মোবাইল ফোনে বিদায় বলে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন খায়রুল বাসার সুজন (৩৫) নামের এক পোশাকশ্রমিক। পরক্ষণে স্ত্রী শুধু চলন্ত ট্রেনের শব্দ শুনতে পান। পরে একাধিকবার কল দিলেও সাড়াশব্দ মেলেনি। ঘটনাটি ঘটে আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শ্রীপুর রেলস্টেশন এলাকায়।

নিহত সুজন কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার কুরশা গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে উপজেলার চন্নাপাড়া গ্রামের জনৈক সুলতানের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।

স্থানীয়রা জানান, আজ সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ঢাকাগামী দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন তিনি। এ সময় চলন্ত ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় তার। দেহ থেকে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে শ্রীপুরের স্টেশনমাস্টারকে জানানো হয়।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ফাতেমা বলেন, ‘সকালে একসঙ্গে বাসা থেকে বের হই। পরে আর বাসায় ফেরেনি। বিকেলে কোথায় আছে জানতে ফোন করি। তখন তিনি  জানায়, শ্রীপুরে। একটু পর ফোন করে শুধু বলে, বিদায়। তখন আমি শুধু ট্রেনের শব্দ শুনতে পাই। এরপর বারবার ফোন করলে সে ফোন ধরেনি। সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনার খবর পাই। ঘটনাস্থলে এসে স্বামীর মরদেহ দেখতে পাই। আমাকে বিদায় বলে সে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছে।’

শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার শামীমা জাহান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ