Samakal:
2025-02-11@07:14:28 GMT

নেতারা না চেনায় ৪৮ কর্মী ছাঁটাই

Published: 10th, February 2025 GMT

নেতারা না চেনায় ৪৮ কর্মী ছাঁটাই

২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর। নগরের চকবাজারের কাঁচাবাজারে হাজির হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তাঁকে ঘিরে ধরেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী। চকবাজার ওয়ার্ডে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও জড়ো হন। তাদের হাজিরা নেবেন স্বয়ং মেয়র। একে একে নাম ধরে ডাকছেন। সামনে এসে দাঁড়ান পরিচ্ছন্নতাকর্মী। মেয়র স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চান, একে কাজ করতে দেখেছেন? কারও জন্য ‘হ্যাঁ’ বলছেন নেতাকর্মীরা, কারও বেলায় বলেছেন ‘না’।
তারা যাদের কাজের স্বীকৃতি দেননি, তাদের গত ৩০ জানুয়ারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কোনো সুযোগ নেই। সুপারভাইজারদের হাজিরার পাশাপাশি ওয়ার্ড কার্যালয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়। তা ছাড়া তিন শিফটে কাজ করেন তারা। স্থানীয় বিএনপি নেতারা স্বাভাবিকভাবে তাদের চেনার কথা নয়। তাদের অভিযোগ, দুর্মূল্যের বাজারে হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। চাকরিচ্যুতদের স্থলে বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টির ৪৮ পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে ডোর টু ডোর কর্মসূচির আওতায় তাদের নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গত ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘মেয়র বিভিন্ন ওয়ার্ডের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে ৪৮ জন ডোর টু ডোর অস্থায়ী শ্রমিককে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পেয়েছেন। ৪৮ জন ডোর টু ডোর শ্রমিক দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে বেতন-ভাতাদি বন্ধ করাসহ সিটি করপোরেশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে ১৫ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।’ ১৬ জানুয়ারি থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪৮ জনের মধ্যে ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ১৭ জন, ১৬ নম্বর চকবাজারে ৯ জন, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে ৬ জন, ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড ও ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে তিনজন করে ছয়জন, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড ও ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ২ জন করে আটজন, ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড ও ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে একজন করে দুজন।
চকবাজার ওয়ার্ডের চাকরি হারানো পরিচ্ছন্নতাকর্মী হৃদয় দাশ বলেন, ‘মেয়র যেদিন আমাদের হাজিরা নেন, সেদিন আমার ও বাবার নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি উত্তর দিয়েছি। এর মধ্যে মেয়রের সঙ্গে যারা ছিলেন তারা মেয়রকে বলেন, তারা আমাকে কাজ করতে দেখেননি। অথচ আমি ৩০ দিনই কাজ করি। গত ২২ নভেম্বর আমার মা মারা যান। সেদিনও আমি কাজ করেছি। প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করছি। একেক দিন একেক জায়গায় কাজ করি। তারা আমাদের চিনবেন কী করে? আমার বেতনের টাকায় পরিবার চলে। এভাবে চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে কোথায় যাব আমি?’ ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের শ্রমিক মো.

দেলোয়ার বলেন, ‘মেয়র যেদিন হাজিরা নেন, সেদিন তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতারা ছিলেন। তারা বলেছেন, আমাকে দেখেননি। আমি কাজ করি কালামিয়া বাজারের অলিগলিতে, আমাকে বলিরহাটের লোকজন কীভাবে চিনবেন? তাদের একটি কথার কারণে প্রতিদিন কাজ করার পরও চাকরিটা হারাতে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনটি ওয়ার্ডের তিনজন সুপারভাইজার বলেন, ‘কোন ওয়ার্ডে কোন শ্রমিক ফাঁকি দেন, তা সুপারভাইজাররা ভালো জানবেন। বিএনপি নেতারা তো তা জানবেন না। সুপারভাইজারদের কাছ থেকে তথ্য না নেওয়ায় প্রকৃত শ্রমিকরা চাকরি হারিয়েছেন।’
গত বছরের ৫ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেন ডা. শাহাদাত হোসেন। ১০ নভেম্বর নগরের ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শনে যান। কালামিয়া বাজারে পৌঁছলে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা তাকে ঘিরে ধরেন। ভিড়ের মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা নেন মেয়র। একইভাবে ১৪ নভেম্বর চকবাজারের কাঁচাবাজারে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা নেন মেয়র। এ সময়ও তাঁকে ঘিরে ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। উপস্থিত নেতারা যাদের কাজের স্বীকৃতি দেননি তারা অব্যাহতি পেয়েছেন।
চকবাজার ওয়ার্ডের হাজিরার দিন উপস্থিত ছিলেন নগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা। কীসের ভিত্তিতে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি দিয়েছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়র স্থানীয় নেতাকর্মীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, কারা কাজ করেন আর কারা করেন না। বিএনপি নেতাকর্মীরা যাদের নিয়মিত কাজ করতে দেখেন, তাদের দেখেছেন বলে বলেছেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র পরিদর্শনে গিয়ে যাদের অনুপস্থিত পেয়েছেন, তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি নেতাদের স্বীকৃতি নয়, মেয়র রাজনৈতিক নেতা। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন, কোন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন আর কে কাজ করেন না। যারা কাজ করেন না বলে জানিয়েছেন, তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স থ ন য় ব এনপ ন ত কর ম ত কর ম র ক জ কর ন চকব জ র ব কল য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি

হাসপাতালে ভর্তি বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ‘আমি বাংলায় গান গাই’খ্যাত এই শিল্পী।

হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শারীরিক অসুস্থতার কারণে এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয় প্রতুলকে। তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এরপর স্নায়ু এবং নাক-কান-গলার (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাকে পরীক্ষা করে দেখেন। প্রতুলের শারীরিক অবস্থা এখনো স্থিতিশীল নয়। চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

ভারতীয় আরেকটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রতুল মখোপাধ্যায়ের অন্ত্রের একটি অপারেশনের পরে হার্ট অ্যাটাক হয়। পরবর্তীতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের শিকার হন। আপাতত ঘোর সঙ্কটে রয়েছেন অশীতিপর গায়ক। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত প্রতুল।

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গতকাল বিধানসভার অধিবেশন শেষে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের ফোন করে প্রতুলের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন মমতা। শুধু তা-ই নয়, এই শিল্পীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং অরূপ বিশ্বাসকে হাসপাতালে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী।

১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। তার বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। দেশভাগের সময় সপরিবারে ভারতে পাড়ি জমান। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের শৈশব কেটেছে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুঁড়ায়। ছোটবেলা থেকেই নিজের লেখা গানে সুর দিতেন। তার অনেক সৃষ্টির মধ্যে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি বিশেষভাবে সমাদৃত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ