২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর। নগরের চকবাজারের কাঁচাবাজারে হাজির হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তাঁকে ঘিরে ধরেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী। চকবাজার ওয়ার্ডে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও জড়ো হন। তাদের হাজিরা নেবেন স্বয়ং মেয়র। একে একে নাম ধরে ডাকছেন। সামনে এসে দাঁড়ান পরিচ্ছন্নতাকর্মী। মেয়র স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চান, একে কাজ করতে দেখেছেন? কারও জন্য ‘হ্যাঁ’ বলছেন নেতাকর্মীরা, কারও বেলায় বলেছেন ‘না’।
তারা যাদের কাজের স্বীকৃতি দেননি, তাদের গত ৩০ জানুয়ারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কোনো সুযোগ নেই। সুপারভাইজারদের হাজিরার পাশাপাশি ওয়ার্ড কার্যালয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়। তা ছাড়া তিন শিফটে কাজ করেন তারা। স্থানীয় বিএনপি নেতারা স্বাভাবিকভাবে তাদের চেনার কথা নয়। তাদের অভিযোগ, দুর্মূল্যের বাজারে হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। চাকরিচ্যুতদের স্থলে বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টির ৪৮ পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে ডোর টু ডোর কর্মসূচির আওতায় তাদের নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গত ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘মেয়র বিভিন্ন ওয়ার্ডের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে ৪৮ জন ডোর টু ডোর অস্থায়ী শ্রমিককে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পেয়েছেন। ৪৮ জন ডোর টু ডোর শ্রমিক দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে বেতন-ভাতাদি বন্ধ করাসহ সিটি করপোরেশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে ১৫ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।’ ১৬ জানুয়ারি থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪৮ জনের মধ্যে ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ১৭ জন, ১৬ নম্বর চকবাজারে ৯ জন, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে ৬ জন, ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড ও ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে তিনজন করে ছয়জন, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড ও ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ২ জন করে আটজন, ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড ও ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে একজন করে দুজন।
চকবাজার ওয়ার্ডের চাকরি হারানো পরিচ্ছন্নতাকর্মী হৃদয় দাশ বলেন, ‘মেয়র যেদিন আমাদের হাজিরা নেন, সেদিন আমার ও বাবার নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি উত্তর দিয়েছি। এর মধ্যে মেয়রের সঙ্গে যারা ছিলেন তারা মেয়রকে বলেন, তারা আমাকে কাজ করতে দেখেননি। অথচ আমি ৩০ দিনই কাজ করি। গত ২২ নভেম্বর আমার মা মারা যান। সেদিনও আমি কাজ করেছি। প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করছি। একেক দিন একেক জায়গায় কাজ করি। তারা আমাদের চিনবেন কী করে? আমার বেতনের টাকায় পরিবার চলে। এভাবে চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে কোথায় যাব আমি?’ ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের শ্রমিক মো.
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনটি ওয়ার্ডের তিনজন সুপারভাইজার বলেন, ‘কোন ওয়ার্ডে কোন শ্রমিক ফাঁকি দেন, তা সুপারভাইজাররা ভালো জানবেন। বিএনপি নেতারা তো তা জানবেন না। সুপারভাইজারদের কাছ থেকে তথ্য না নেওয়ায় প্রকৃত শ্রমিকরা চাকরি হারিয়েছেন।’
গত বছরের ৫ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেন ডা. শাহাদাত হোসেন। ১০ নভেম্বর নগরের ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শনে যান। কালামিয়া বাজারে পৌঁছলে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা তাকে ঘিরে ধরেন। ভিড়ের মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা নেন মেয়র। একইভাবে ১৪ নভেম্বর চকবাজারের কাঁচাবাজারে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা নেন মেয়র। এ সময়ও তাঁকে ঘিরে ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। উপস্থিত নেতারা যাদের কাজের স্বীকৃতি দেননি তারা অব্যাহতি পেয়েছেন।
চকবাজার ওয়ার্ডের হাজিরার দিন উপস্থিত ছিলেন নগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা। কীসের ভিত্তিতে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি দিয়েছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়র স্থানীয় নেতাকর্মীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, কারা কাজ করেন আর কারা করেন না। বিএনপি নেতাকর্মীরা যাদের নিয়মিত কাজ করতে দেখেন, তাদের দেখেছেন বলে বলেছেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র পরিদর্শনে গিয়ে যাদের অনুপস্থিত পেয়েছেন, তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি নেতাদের স্বীকৃতি নয়, মেয়র রাজনৈতিক নেতা। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন, কোন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন আর কে কাজ করেন না। যারা কাজ করেন না বলে জানিয়েছেন, তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স থ ন য় ব এনপ ন ত কর ম ত কর ম র ক জ কর ন চকব জ র ব কল য়
এছাড়াও পড়ুন:
আইপিএলে মাঠেই কেন ব্যাট পরীক্ষা করা হচ্ছে
টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাট ও বলের লড়াইয়ে ভারসাম্য নেই। এবার আইপিএল শুরুর আগে কথাটা বলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। এর আগে–পরে বলেছেন আরও অনেকেই। কারণটা প্রায় সবার জানা। টি–টোয়েন্টিতে এখন দলগুলো ২০০ পেরিয়ে ৩০০ রান তোলার চেষ্টায় মত্ত। রাবাদার মতে, এভাবে চলতে থাকলে খেলাটির নাম ‘ক্রিকেট’ পাল্টে ‘ব্যাটিং’ রাখা উচিত।
রাবাদার এ কথা নিশ্চয়ই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কানেও পৌঁছেছে। তাই গত রোববার জয়পুর ও দিল্লিতে আইপিএলের দুটি ম্যাচে দেখা গেছে অন্য রকম এক দৃশ্য। দুটি ম্যাচেই মাঠের আম্পায়াররা ক্রিজে আসা ব্যাটসম্যানদের ব্যাটের আকার পরীক্ষা করেন। আইপিএলের ইতিহাসে এমন কিছু এর আগে দেখা যায়নি। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, আইপিএলে এবারই প্রথমবারের মতো মাঠের আম্পায়ারদের ম্যাচের মধ্যেই ব্যাটের আকার পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে বিসিসিআই।
আরও পড়ুনচূড়ান্ত হলো ভারতের বাংলাদেশ সফরের সূচি৫ ঘণ্টা আগেব্যাট নিয়মসিদ্ধ আকার অনুযায়ী বানানো হয়েছে কি না, সেটা একটি মাপার বস্তুর মাধ্যমে মাঠেই পরীক্ষা করেন আম্পায়াররা। অতীতে এ পরীক্ষাগুলো ড্রেসিংরুমে করা হতো। কিন্তু রোববার খেলার সময় মাঠেই তা দেখা গেছে। ব্যাটসম্যানদের ব্যাট যদি নিয়ম অনুযায়ী বানানো হয়, তাহলে এ যন্ত্রের সঙ্গে খাপে খাপে মিলে যাবে কিংবা সহজেই এই মাপের মধ্যে প্রবেশ করবে। আকার বড় হলে প্লাস্টিকের এই ত্রিভুজাকৃতির গেজের মধ্যে ব্যাটটি প্রবেশ করবে না কিংবা বাধাপ্রাপ্ত হবে। গেজের গায়ে ব্যাটের নিয়মসিদ্ধ আকারও লেখা আছে—পুরুত্ব ২.৬৮ ইঞ্চি, চওড়া ৪.৩৩ ইঞ্চি, কানা ১.৬১ ইঞ্চি এবং ব্যাটের উল্টো দিকে থাকা বাঁকানো অংশ হবে ০.২০ ইঞ্চির মধ্যে।
ব্যাটের আকার মাপার গেজ