Samakal:
2025-02-11@07:23:23 GMT

মাসে আড়াই কোটি টাকার দুধ বিক্রি

Published: 10th, February 2025 GMT

মাসে আড়াই কোটি টাকার দুধ বিক্রি

নদীর দুই পাড় ঘেঁষে হাঁটা পথ। সেই পথে হেঁটে চলছেন সাড়ে তিনশ থেকে চারশ কিষান-কিষানি। প্রত্যেকের মাথায় দুধভর্তি সিলভারের কলস। তাদের গন্তব্য মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার গোপালপুর বাজার। 
প্রতিদিন এই বাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ দুধ বিক্রি হয়। প্রতি লিটার দুধের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বাজারটিতে দিনে আট থেকে ৯ লাখ ও মাসে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার দুধ বেচাকেনা হয়। 
উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাড়ে গোপালপুর বাজারটি অবস্থিত। নদীর পশ্চিম পাশে রাজৈর, কাকর্দাসহ আরও কয়েকটি গ্রাম। গ্রামগুলো থেকে কিষান-কিষানির পাশাপাশি তাদের সন্তানরাও গোপালপুর বাজারে নিয়ে দুধ বিক্রি করে। এসব দুধ কিনে ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সাটুরিয়ার রাজৈর, বরাইদ, ধুনট, কাকরাইদ, গালা, তিল্লির চর, নাটুয়াবাড়ীসহ আশপাশের ১৫ গ্রামের প্রায় বাড়িতেই গরু লালনপালন করা হয়।
যেভাবে গড়ে ওঠে বাজার
আশির দশকের শুরুর দিকে গোপালপুর গ্রামের আশপাশে চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাজার ছিল না। নিজেদের ফসল ও গরুর দুধ বিক্রি করতে গোপালপুরসহ আশপাশের গ্রামগুলোর কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। নৌকায় করে তাদের উপজেলা সদরে ফসল ও দুধ বিক্রি করতে যেতে হতো। পরে গোপালপুর গ্রামে বাজার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৮৫ সালে বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আব্দুল হাই গোপালপুর গ্রামে কিছু জমি কেনেন। পরে সে বছর ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ওই জমিতে হাট বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। গ্রামের লোকজন তাদের উৎপাদিত ফসল, দুধ ও কৃষিপণ্য এই বাজারে নিয়ে বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে কয়েক গ্রামের মানুষও এই বাজারে বেচাকেনা শুরু করেন। শুরুতে গোপালপুর ও আশপাশের মানুষই এসব দুধের ক্রেতা ছিলেন। ফলে তারা আশানুরূপ দাম পেতেন না। নব্বই দশকের শুরু থেকেই এ বাজারে বিপুল পরিমাণ দুধ বেচাকেনা শুরু হয়। স্থানীয় পাইকাররা এসব দুধ কিনে মিষ্টির দোকানগুলোতে সরবারহ করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, তিনি জমি কিনে সেখানে বাজার বসিয়েছেন। পরে এসব জমি দান করে দেন। দুধের বাজার হিসেবে এখন গোপালপুর বাজারের পরিচিতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। 
আয়ের অন্যতম উৎস গরু পালন
রাজৈর, কাকরাইদ, বরাইদ ও গোপালপুর গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর ও কৃষিজীবী। তারা ভুট্টা, ধান, পাট ও সর্ষের আবাদ করেন। তবে এখানকার মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস গরু পালন। গ্রামগুলোর প্রায় প্রত্যেক কৃষকের বাড়িতে দুই থেকে ১০টি পর্যন্ত গরু লালনপালন করা হয়। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে কয়েকশ কিষান-কিষানি দুধভর্তি কলস নিয়ে গোপালপুর খেয়াঘাটের পশ্চিম পাশে আসেন। খেয়া নৌকায় নদী পার হয়ে ১০-১৫ মিনিট হাঁটার পর গোপালপুর বাজারে পৌঁছান। বাজারে যাওয়ার পরপরই পাইকারি ব্যবসায়ীদের লোকজন দুধ পরিমাপ করে প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি করেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যায় দুধ বিক্রি। পরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পিকআপভ্যানে করে ড্রামভর্তি দুধ নিয়ে যান।
সম্প্রতি সকাল ৭টার দিকে কাকরাইদ গ্রামের কয়েকজন কৃষকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকের বাড়িতেই রয়েছে গোয়ালঘর। গোয়ালঘরগুলোতে বাঁধা গাভিগুলোকে খাবার খাওয়াচ্ছেন বাড়ির কিষান-কিষানি। এরপর শুরু হয় দুধ দোহানোর কর্মযজ্ঞ। বাড়ির উঠানে গাভির খামার করেছেন কাকরাইদ গ্রামের কৃষক মো.

লুৎফর রহমান। খামারে তিনি চারটি দেশি ক্রস জাতের গাভি লালনপালন করছেন। গাভি চারটি দোহানো শেষ হলে পাতিল থেকে দুধ ঢেলে কলসে ভরেন। পরে কলসের দুধ নিয়ে বাজারের দিকে ছোটেন লুৎফর ও তাঁর বড় ছেলে ওয়াসিম। 
লুৎফর রহমান বলেন, ২৫ বছর ধরে তিনি বাড়িতে গাভি লালনপালন করছেন। বর্তমানে তাঁর খামারে ছয়টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি গাভি ও দুটি ষাঁড়। চারটি গাভি প্রতিদিন ৩২ থেকে ৩৫ লিটার দুধ দেয়। প্রতি লিটার দুধ বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। 
রাজৈর গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমানও বাড়ির সামনে উঠানে ছোট খামারে চারটি গাভি পালন করছেন। তিনি বলেন, চারটি গাভি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩২ লিটার দুধ দেয়। দুধ বিক্রি করেই তাঁর সংসার চলে।
আছে কিছু সমস্যাও
গোপালপুর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে দীর্ঘদিন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকার লোকজন। সেতু না থাকায় কিষান-কিষানিদের দুধ নিয়ে বাজারে আসতে খেয়া নৌকার ওপর ভরসা করতে হয়। এতে বাজারে দুধ আনতে বেশি সময় লেগে যায়। এ ছাড়া ফসল ও কৃষিপণ্য নিতেও কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। রাজৈর গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। সেতুটি হলে দুধ নিয়ে বাজারে যেতে কষ্ট করতে হতো না। 
গোপালপুর বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ মণ দুধ বিক্রি হয়। যার মূল্য ৮ লাখ টাকার বেশি। এ হিসাবে প্রতি মাসে বাজারটিতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার দুধ বেচাকেনা হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দুধ কিনে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র রহম ন ব যবস য় আশপ শ র

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ-আদালত ঠিকমতো কাজ করলে মবের প্রকোপ কমবে: আইন উপদেষ্টা

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

পুলিশ আর আদালত যখন ঠিকমতো কাজ করবে তখন মবের প্রকোপ কমবে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর আসিফ নজরুল।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজারবাগে আইন ও বিচার নিয়ে এক কর্মশালায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকার চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বিচারকদের উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানান, হুটহাট যাকে-তাকে যেন জামিন দেয়া না হয়। কেননা জামিনের পর ভয়াবহ অপরাধীরা বেরিয়ে আবারও অপরাধ করতে পারে।

কর্মশালায় উপস্থিত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে একই আহ্বান জানান। উপদেষ্টার অভিযোগ, পতিত সরকারের দোসররা পাচার করা অর্থ খরচ করে এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই অপারেশন ডেভিল হান্ট চলবে। এ অভিযান সফল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

এম জি

সম্পর্কিত নিবন্ধ