‘বয়স্ক ভাতা’ বাড়িয়েছে প্রবীণের সম্মান
Published: 10th, February 2025 GMT
দেশে বয়স্ক ভাতা গ্রহণকারীর ৯৮ শতাংশ মনে করেন, এই ভাতা সমাজে তাদের সম্মান বাড়িয়েছে। সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের আমন্ত্রণ পাওয়ার হার বেড়েছে ৭৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্ব বেড়েছে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ প্রবীণের। জিটুপি (গভর্নমেন্ট টু পারসন) প্রক্রিয়ায় ভাতা বিতরণকে ইতিবাচক মনে করছেন তাদের ৯০ শতাংশ।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে ‘বয়স্ক ভাতা ‘জিটুপি পেমেন্ট ব্যবস্থায় বিতরণ: একটি মূল্যায়নধর্মী সমীক্ষা’ শিরোনামে চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচটি জেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও দুটি ওয়ার্ডে পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে। জরিপে ৩৫০ জন বয়স্ক ভাতাভোগীর কাছ থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি পরিচালনা করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়। সারাদেশে বয়স্ক ভাতা নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে এই জরিপ করা হয়। পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক, বর্তমানে জাতীয় সমাজসেবা একাডেমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ। আট ক্যাটেগরিতে অর্ধশত প্রশ্নের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সম্প্রতি চূড়ান্ত প্রতিবেদন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
জরিপের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বয়স্ক ভাতা ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবীণের আংশিক মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম। ভাতা পাওয়ায় ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবীণের পারিবারিক সম্মান, তাদের সেবাযত্ন বেড়েছে। এই ভাতা স্বাস্থ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে সক্ষম– বলেছেন ৮৪ শতাংশ। উত্তরদাতাদের মধ্যে স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ালেখা সম্পন্ন করেছেন ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, প্রাথমিক পর্যায়ে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ভাতা গ্রহণকারীর ৪১ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রবীণ তাদের পরিবারের খরচ চালান। ৪৪ শতাংশ সন্তানের ওপর নির্ভরশীল। ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। জিটুপি পেমেন্ট ব্যবস্থাকে ৯৬ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবীণ ইতিবাচক ও সহজ মনে করেন। ভাতা গ্রহণে ৬২ শতাংশ প্রবীণ নিজস্ব মোবাইল ফোনসেট ব্যবহার করেন, ৩৭ শতাংশ ব্যবহার করেন অন্যেরটা। এই ভাতা বিতরণের প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রশ্ন উঠছে। দেশে বিভাগভিত্তিক বয়স্ক ভাতা বিতরণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬২ জন প্রবীণ বয়স্ক ভাতা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭১ জন, খুলনায় ৭ লাখ ২০ হাজার ৮২৪, রাজশাহীতে ৭ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৪, রংপুরে ৮ লাখ ৫১ হাজার ৯০০, বরিশালে ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬১, ময়মনসিংহে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৩ এবং সিলেটে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৫ জন বয়স্ক ভাতা গ্রহণ করেন। মাসে একজনকে ৬০০ টাকা দেওয়া হয়।
জরিপ প্রতিবেদনে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ বাড়ানো, বিনোদন চাহিদা পূরণে উৎসবে বিশেষ ভাতা প্রদানসহ নানা সুপারিশ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ সমকালকে বলেন, ‘প্রবীণদের বাস্তব অবস্থা ও সঠিকভাবে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরতে গ্রাম পর্যায়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এমন জরিপ দেশে এটি প্রথম।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) মোশাররফ হোসেন বলেন, ৯০ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণদের আলাদাভাবে আর্থিক সুবিধা দেওয়া যায় কিনা, সেটি বিবেচনা করা উচিত। গবেষণাকাজে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা ঢাবি অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বয়স ক ভ ত পর চ ল গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায়, পরা যাবে না মুখোশ
আগামীকাল পয়লা বৈশাখ। চারুকলা অনুষদের আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও বের হবে শোভাযাত্রা। তবে শোভাযাত্রায় পরা যাবে না কোনো ধরনের মুখোশ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সঙ্গে নিতে হবে পরিচয়পত্র।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' শুরু হবে।
রবিবার(১৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সব জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে।
বিজ্ঞপ্তির বর্ণনায় বলা হয়, সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। শেষ প্রান্ত দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪ এর চেতনাকে ধারণ করে আরো বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এবছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিবৃন্দ অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এ বছর থাকবে ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, পয়লা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ থেকে প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট, চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেইট এবং বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
শৃঙ্খলা বজায়ের স্বার্থে যানবাহন সম্পর্কিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষে সব ধরনের অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে।
নববর্ষ উপলক্ষে আজ ১৩ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোন ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
নববর্ষ উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পয়লা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এ কর্মসূচি। তবে বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভযাত্রা’ নামটি এবারের আয়োজনে থাকছে না। এই শোভাযাত্রার নাম থেকে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন নামকরণ হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
ঢাকা/সৌরভ/ইভা