দীর্ঘদিন বাড়িয়ে দেখানোর পর দেশের পণ্য রপ্তানি আয় সংশোধন করা হয় গত বছরের এপ্রিলে। সংশোধনীতে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় কমেছে ১৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এত বড় অঙ্কের অর্থ কমে যাওয়ার প্রভাব মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএসের চূড়ান্ত হিসাবে, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় কমে হয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। 
গতকাল সোমবার সামষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ নির্দেশকগুলোর চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, বিবিএসের সাময়িক হিসাব এবং চূড়ান্ত হিসাবের মধ্যে ব্যবধানটা বেশ বড়। যেমন– চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাময়িক হিসাবের চেয়ে ১ দশমিক ৬০ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। গত বছরের মে মাসে বিবিএস জানায়, সাময়িক হিসাবে গত অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। 
এদিকে চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা গত তিন অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। 

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছর সাময়িক হিসাবের চেয়ে চূড়ান্ত হিসাবে রপ্তানির পরিমাণ কম এসেছে ২১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরও চূড়ান্ত হিসাবে রপ্তানি সাময়িক হিসাবের চেয়ে  ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ কম হয়। তবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড.

কে এ এস মুর্শিদ মনে করেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এতােটা কমে যাওয়ার পেছনে রপ্তানিই একমাত্র কারণ নয়। এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। যেমন– বিনিয়োগ তো কমছেই। একাধারে বিনিয়োগ কমতে থাকলে অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব থাকে। আগামীতে বিনিয়োগ বাড়াতে যা যা করণীয় তাই করতে হবে। করণীয় কী, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভালো করেই জানে। 
জিডিপি ও রপ্তানির সম্পর্কের বিষয়টি ব্যাখ্যায় বিবিএস বলেছে, জিডিপির হিসাব প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে রপ্তানি আয়ের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল  ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। এ বিবেচনা থেকে গত অর্থবছরের সাময়িক হিসাব প্রাক্কলন করা হয়। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানির সংশোধিত হিসাব সাময়িক প্রাক্কলিত হিসাবের তুলনায় ২১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কম হয়েছে। 
রপ্তানিতে সাময়িক ও চূড়ান্ত হিসাবের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকলেও কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। সাময়িক হিসাবে কৃষির প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, যা চূড়ান্ত হিসাবে বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কাছাকাছিই রয়েছে। এ খাতে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসাবে যা দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অবশ্য শিল্পের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬৬ থেকে কমে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে নেমে এসেছে। শিল্প খাতে দুই হিসাবের মধ্যে বড় ব্যবধানের কারণও রপ্তানি খাত। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থবছরে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা, যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা। 
মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৩৮ ডলার

বিবিএসের চূড়ান্ত হিসাব বলছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার, যা সাময়িক হিসাবের চেয়ে ৪৬ ডলার কম। সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। বিবিএসের  প্রতিবেদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিন বছর ধরে মাথাপিছু আয় কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ব এস র ৫ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

মন্ত্রিসভার পদত্যাগ চান প্রেসিডেন্ট, গভীর সংকটে কলম্বিয়া সরকার

কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি বৈঠকে নিজের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তীব্র সমালোচনার পর এবার নিজের মন্ত্রী ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে বলেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।

গত মঙ্গলবার এক বৈঠকে পেত্রো তাঁর মন্ত্রিসভার ওপর রীতিমতো ক্ষোভ ঝাড়েন। পাঁচ ঘণ্টার ওই বৈঠক রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সেখানে পেত্রো বলেন, কলম্বিয়ার বর্তমান সরকার ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না।

পেত্রো আরও বলেন, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গতকাল রোববার এক পোস্টে পেত্রো লেখেন, ‘আমি প্রশাসনিক অধিদপ্তরের মন্ত্রী ও পরিচালকদের পদত্যাগ করার অনুরোধ জানাই। জনগণের নির্দেশিত কর্মসূচির সঙ্গে আরও বেশি মানানসই হতে মন্ত্রিসভায় কিছু পরিবর্তন আনা হবে।’

মঙ্গলবারের ওই বৈঠকের পর রোববার রাত পর্যন্ত তিন মন্ত্রী ও দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগের অনুরোধ জানিয়ে পেত্রোর পোস্টের পরপরই শ্রমমন্ত্রী গ্লোরিয়া রামিরেজ এক্সে এক পোস্টে তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

রামিরেজ লেখেন, রাজনীতিকে গোষ্ঠীতন্ত্র ও অস্পষ্টতা ছাড়াই এগিয়ে যেতে দিতে হবে।

আরও পড়ুনঅভিবাসীবাহী উড়োজাহাজ নামতে দিল না কলম্বিয়া, শুল্ক নিয়ে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি ট্রাম্প-পেত্রোর২৭ জানুয়ারি ২০২৫

এর আগে কলম্বিয়ার পরিবেশমন্ত্রী মারিয়া সুসানা মুহামেদ গঞ্জালেজ পদত্যাগ করেন।

মঙ্গলবারের বৈঠকে পেত্রোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরমান্দো বেনেদেত্তি উপস্থিত ছিলেন, যা নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছিলেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। বেনেদেত্তির বিরুদ্ধে ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় অবৈধ অর্থের লেনদেন নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে তাঁর সাবেক স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে লরা সারাবিয়াকে নিয়োগ দেওয়া নিয়েও মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য আপত্তি তুলেছিলেন। নানা কেলেঙ্কারিতে পেত্রোর সাবেক চিফ অব স্টাফ সারাবিয়ার নাম জড়িয়েছে। কলম্বিয়ার বর্তমান সরকারে রকেটগতিতে তাঁর উত্থান হয়েছে।

আরও পড়ুনকলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন গুস্তাভো পেত্র০৭ আগস্ট ২০২২

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাথাপিছু আয় কমেছে ৪৬ ডলার
  • চূড়ান্ত হিসাবে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৪.২২ শতাংশ
  • মন্ত্রিসভার পদত্যাগ চান প্রেসিডেন্ট, গভীর সংকটে কলম্বিয়া সরকার
  • মাথাপিছু আয় কমে ২,৭৩৮ ডলার, কমেছে প্রবৃদ্ধির হার
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে যমুনা অয়েলের
  • ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.২২ শতাংশ
  • এবার অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও জ্যাক সুলিভানের নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রত্যাহার
  • বিপিএলের কোন আসরের চ্যাম্পিয়ন কারা
  • চারে এসে সফল শান্ত-হৃদয়