গর্ভাবস্থায় ফাইব্রয়েড টিউমার কতটা ভয়ের?
Published: 10th, February 2025 GMT
ফাইব্রয়েড টিউমার জরায়ুর একটি অতি পরিচিত টিউমার। এই টিউমারের লক্ষণগুলো হলো, মাসিকের সময় অধিক রক্তপাত ও ব্যথা হওয়া। যদিও ৭৫ শতাংশের ক্ষেত্রে এই টিউমার কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। অবস্থানভেদে এই টিউমার তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- সাব সেরাস, ইন্ট্রা মুরাল এবং সাব মিউকাস। এর মধ্যে সাধারণত সাব মিউকাস টিউমারই অধিক জটিলতার কারণ হয়ে থাকে। গর্ভধারণের আগে যদি এই টিউমার ধরা পড়ে, তবে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। টিউমার অপসারণ করা দরকার হবে যদি দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে এবং বন্ধ্যত্বের আর কোনো কারণ না পাওয়া গেলে।
বন্ধ্যত্ব সমস্যার জন্য টিউমার অপারেশন করার আগে কিছু শর্ত পূরণ করা জরুরি। যেমন বন্ধ্যত্বের জন্য অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা দেখে নেওয়া, হিস্টারো স্যালফিংগোগ্রাম বা ল্যাপারোস্কপি করে ফেলোপিয়ান টিউব (ডিম্বনালি) খোলা কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। স্বামীর শুক্রাণু বা বীর্য নরমাল থাকতে হবে। জরায়ুতে টিউমার থাকা অবস্থায় গর্ভধারণ হয়ে থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা কোনো অসুবিধা করে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিউমারের
কারণে মা এবং সন্তানের বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে, যেমন-
গর্ভপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে, বিশেষ করে টিউমারটি যদি সাব মিউকাস হয়। কারণ সাব মিউকাস টিউমার জরায়ুর ভেতরে অবস্থিত হওয়ায় ভ্রূণ এবং প্লাসেন্টার স্থাপনকে বাধাগ্রস্ত করে। গর্ভধারণের কারণে এই টিউমারেরও কিছু পরিবর্তন হয়, যা জটিলতা তৈরি করে। যেমন– জরায়ু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিউমারের আকার ও সাইজ পরিবর্তন হতে পারে। অনেক সময় টিউমারের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়ে, অথবা পানি জমা হয়ে পেটে প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। প্লাসেন্টা যদি টিউমারের ওপর অবস্থিত হয় তবে অনেক সময় প্লাসেন্টা সেপারেশন হয়ে অ্যান্টি পারটাম হেমোরেজ (রক্তপাত) হতে পারে। এ ছাড়া বাচ্চার ওজন কম হওয়া, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা), সময়ের আগে ডেলিভারি হওয়া ইত্যাদি জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফাইব্রয়েডের কারণে অনেক সময় নরমাল ডেলিভারির পথ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সিজারের প্রয়োজন হতে পারে। তা ছাড়াও ডেলিভারির সময় এবং এর পরবর্তী সময়ে অধিক রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। টিউমার ফেলে দেওয়া হবে কিনা তা নির্ভর করে টিউমারটি কোথায় অবস্থিত এবং এর আকার-আকৃতির ওপরে। আবার ডেলিভারির পর অনেক টিউমার আকারে ছোট হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে কোনো অপারেশন নাও লাগতে পারে।
[গাইনি বিশেষজ্ঞ]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন ১৫ মার্চ
আগামী শনিবার (১৫ মার্চ) সারা দেশে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয় হয়।
এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে অপুষ্টির হার কমেছে এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব নেতৃত্বের পুষ্টি ফোরামের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে আসছে।
আরো পড়ুন:
মাগুরায় সেই শিশুর মৃত্যু
আসামিদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
ঠাকুরগাঁওয়ের হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু উদ্ধার
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগের হার ৪ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল। ১৯৭৪ সালে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম গ্রহণ করে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো শুরু হয়। পরবর্তীতে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো অব্যাহত রাখার ফলে বর্তমানে ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে।
ভিটামিন ‘এ’ শুধু অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে না। এর পাশাপাশি ৫ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুর হারও প্রায় এক চতুর্থাংশ কমিয়ে আনে যা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪ (শিশু মৃত্যুর হার কমানো) অর্জনে খুবই সহায়ক ছিল। আমাদের সব শিশু সঠিকভাবে মায়ের দুধ বা সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারে না। ফলে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সের শিশুদের বিরাট অংশ ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিতে ভুগছে এবং ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে এই ঘাটতি পূরণে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বছরে দুইবার শতকরা ৯৮ শতাংশ শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর ফলে ভিটামিন ‘এ’ অভাবজনিত অন্ধত্বের হার শতকরা এক শতাংশের নিচে কমে এসেছে এবং শিশু মৃত্যুর হারও কমেছে। এই সাফল্য ধরে রাখতে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৬-৫৯ মাস বয়সী সব শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো চলমান রাখতে হবে।
শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু তাদের একটি অংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। অন্ধত্ব একটি পরিবারের জন্য অভিশাপ তথা একটি দেশের জন্য বোঝা। বছরে দুই বার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের এ অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে বহুলাংশে মুক্ত করা যায় এবং শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিও কমানো সম্ভব।
অন্তর্বর্তী সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের সব শিশুর অপুষ্টি দূরীকরণ ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে শনিবার সারাদেশে ৬-৫৯ মাস বয়সী প্রায় ২ কোটি ২৬ লাখ শিশুকে ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী ইপিআই কেন্দ্রের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
স্বল্প সময়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। ক্যাম্পেইনকে সফল করতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আর তা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ার সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রয়োজন। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পর্যালোচনার জন্য ক্যাম্পেইনের দিন প্রতিটি উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোলরুম চালু থাকবে।
একটি শিশুও যেন বাদ না পড়ে, সব শিশুকেই যেন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। যাদের ঘরে ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু আছে সেই সব মা-বাবা এবং অভিভাবকরা যেন অবশ্যই তাদের শিশুদের নিকটস্থ কেন্দ্রে (ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র) নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ান।
ঢাকা/এএএম/এসবি