Samakal:
2025-04-14@02:35:25 GMT

ভালুকায় নতুন কমিটি

Published: 10th, February 2025 GMT

ভালুকায় নতুন কমিটি

ভালুকার সুহৃদ সমাবেশের আগের কমিটি বিলুপ্ত করে ১১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ও ৫১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি বিকেলে অ্যাপোলো ইনস্টিটিউট অব কম্পিউটার এইচএসসি (বিএমটি) কলেজের হলরুমে সম্মেলনের মাধ্যমে ওই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সম্মেলনে শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক আবু সাঈদ জুয়েলকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১০ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের অন্যরা হলেন– মো.

মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, মো. ছারোয়ার জাহান এমরান, মো. আব্দুল কাইয়ুম রিপন,  মো. মোকলেসুর রহমান, বীরেন রায়, মো. মোকছেদুর রহমান মামুন, ডা. মাকছুদা বেগম, সৌমিক হাসান সোহাগ। বিএমটি কলেজের অধ্যক্ষ এআরএম শামছুর রহমান লিটন সভাপতি ও এমএম কবিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন– আ ফ ম আফজাল হাসান, কামরুল ইসলাম, শেখ মো. এমরান, লুৎফর রহমান নাদিম, মো. আল আমিন, মো. আশিক ইকবাল, আশফাকুজ্জামান, সানজান তালুকদার, মাইনুল হাসান মনি, মাশফিক আহমেদ, তামান্না আক্তার, মারিয়া আক্তার মিলি, সানোয়ার হোসেন আকাশ, মনিরুজ্জামান মনির, সোহানা আক্তার,  খোরশেদ এনাম, শিপন খান, আরমান আহমেদ প্রমুখ। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র রহম ন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার অনুপ্রেরণায় বদলে গেল হামিদুরের ভাগ্য

মানুষ মানুষকে ঠকালেও পশুপাখি ঠকায় না। হাঁস-মুরগি ডিম পাড়ে, ছাগল–গাভি দুধ ও বাচ্চা দেয়। গাভি–ছাগলের খামার করলে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। নিজের যেটুকু জায়গাজমি আছে সেখানেই খামার গড়তে হবে। বাবার মুখে এসব কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন প্রতারণার শিকার হামিদুর রহমান। দিনের পর দিন সেটা ঘুরপাক খাচ্ছিল তাঁর মাথায়।

একদিন খামার করার সিদ্ধান্ত নেন হামিদুর। সেটাও সাত বছর আগের কথা। সে সময় তিনি ছয়টি গাভি কিনে খামার শুরু করেন। সেই খামারে এখন গরু-ছাগল ১৫০টি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পুকুরে হাঁস ও মাছ চাষ। সমন্বিত সেই খামার থেকে খরচ বাদে এখন তাঁর মাসে আয় দুই লাখ টাকা। তাঁর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বেকার যুবক খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

হামিদুরের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ভীমপুর হাজীপাড়া গ্রামে। বাড়ির পাশেই দুই একর জমিতে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত খামার। খামারে নাম দিয়েছেন এনআর। তাঁর খামারে দেশি–বিদেশি জাতের ৫০টি গরু, ১০০টি ছাগল এবং এক একরের দুটি পুকুরে মাছ ও হাঁসের খামার রয়েছে। এসব দেখাশোনা করতে খামারে সারা বছর বেতনভুক্ত চারজন শ্রমিক কাজ করেন।

সম্প্রতি হামিদুর রহমানের খামারে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। দুই পুকুরের মাঝামাঝিতে গরু রাখার দুটি শেড। একটিতে বিদেশি জাতের গাভি ও বাছুর, আরেকটি শেডে ষাঁড় রাখা হয়েছে। ছাগল রাখার জন্য পুকুরের পূর্ব দিকে মাচা করে শেড করা হয়েছে। পুকুরের চারদিকে খেজুরগাছ শোভাবর্ধন করছে। দিনের বেলা ছাগলগুলো নেট দিয়ে ঘেরা ফাঁকা জায়জায় ঘুরে ঘাসপাতা খায়। ৫০ শতক জায়গায় ঘাসের চাষ করা হয়েছে। খামারের ভেতরে গরু ও ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে ব্যস্ত হামিদুর রহমান। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে খামার থেকে বেরিয়ে এলেন। পুকুরপাড়ে গাছের নিচে বসতে দিয়ে খামার গড়ার গল্প শোনালেন।

হামিদুর প্রথম আলোকে জানান, বাবা মোফাজ্জাল হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ১০ একর জমির মালিক। তাঁরা চার বোন ও এক ভাই। ২০০৫ সালে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) পাস করেন তিনি। ২০১২ সালে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে শুরু করেন গার্মেন্ট কারখানা। সেখানে তৈরি জ্যাকেট ও থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের বাজারে যায়। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে ২২ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে উধাও হন ভারতীয় দুই ব্যবসায়ী। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। খাওয়াদাওয়ায় একপ্রকার ছেড়ে দেন। বিষয়টি জেনে হামিদুরকে গ্রামের বাড়িতে ডেকে নিয়ে ওই কথাগুলো বলেন বাবা মোফাজ্জল। বাবার কথা মনে ধরে। খামার গড়ার পুঁজির জন্য ২০১৬ সালে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিডেট কোম্পানিতে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিতে থাকাকালীন ২০১৮ সালে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় আমবাড়ি হাট থেকে বিদেশি জাতের ছয়টি গরু কিনে খামার শুরু করেন। ধীরে ধীরে খামারের পরিধি বাড়ে, লাভ বাড়ে, বাড়ে বিনিয়োগ। পুরোদস্তুর খামারি হয়ে ওঠেন হামিদুর। ২০২০ সালে বাবা মারা গেলে পুরো সংসারের হাল ধরেন তিনি। খামারে আয়ে স্ত্রী, দুই সন্তান ও মাকে নিয়ে এখন সংসার তাঁর।

হামিদুর রহমান বলেন, ‘খামারে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। চারজন স্থায়ী কর্মচারী কাজ করছে। আরও তিনজন অস্থায়ী শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। খামারে মোট সাতজনের কর্মসংস্থান হয়েছে। খরচ বাদে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। এসি রুমে বসে চাকরি করে যে শান্তি পাইনি; রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে খামার করে তার চেয়ে কয়েক গুণ তৃপ্তি পাচ্ছি। আমার ইচ্ছে খামারে যেন ৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। খামারের আয়ের টাকায় স্ত্রী, দুই সন্তানকে নিয়ে সুখে আছি। সৈয়দপুর শহরে বাড়ি করেছি।’

স্বামীর কাজে গর্ব করেন স্ত্রী নিলুফা বেগম বলেন, ‘গ্রামে থেকে মাটির সঙ্গে মিশে লাখ টাকা আয় করছেন। গ্রামের লোকজন, পাড়া–প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হচ্ছে। আত্মীয়স্বজনের কাছাকাছি আছি। পাঁচ–দশজন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর থেকে সুখের আর কি আছে।’

স্থানীয় লোকজন জানান, খামার করে হামিদুর শুধু নিজের ভাগ্যই বদল করেনি, অন্য যুবকদেরও পরামর্শ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলছেন। আলমপুর ইউনিয়নের জুয়েল ইসলাম, আবদুল মজিদ, শামিম হোসেনসহ অনেকেই হামিদুরের পরামর্শে খামার করে এখন সুখে সংসার চালাচ্ছেন।

ভীমপুর গ্রামের আবদুল মোতালেব বলেন, সমন্বিত খামার করে এলাকার যুবকদের চোখ খুলে দিয়েছেন হামিদুর। দেশি-বিদেশি উন্নত জাতের গরু ও ছাগল পালন করে সফল হয়েছেন। এখন এলাকার অনেকেই তাঁর কাছ থেকে গরু ও ছাগল পালন করার শিখছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, মানুষকে খাওয়াবেন, মানুষ বেইমানি করবে। কিন্তু পশুপাখি কখনো বেইমানি করে না। তার ফিডব্যাক হামিদুর পেয়েছেন। তিনি সমন্বিত খামার গড়ে সফল হয়েছেন। তাঁকে দেখে অনেকেই খামার গড়ছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ