অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুনশিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে: মির্জা ফখরুল
Published: 10th, February 2025 GMT
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুনশিয়ানা দেখাতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে লিখিতভাবে দেওয়া ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস, বিরাজমান রাষ্ট্র পরিস্থিতি বিষয়ে পরামর্শে’ বিএনপির মহাসচিব এসব কথা উল্লেখ করেন। সোমবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে পরামর্শের একটি অনুলিপি গণমাধ্যমকর্মীদের দেন বিএনপির মহাসচিব।
এতে বলা হয়, সামাজিক নৈরাজ্য বিস্তারের ফলে গণ-অভ্যুত্থানের জন–আকাঙ্ক্ষা ম্রিয়মাণ হতে শুরু করেছে। পতিত ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। দেশের বাইরে থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এই তৎপরতা চালাচ্ছেন। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আনা দরকার।
সরকার ছয় মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে উল্লেখ করে বিএনপি। এ কারণে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে জনগণ উৎসাহিত হচ্ছে বলে মনে করে দলটি।
সরকার জনপ্রত্যাশা বা গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু পূরণ করেছে, সে বিষয়টি বিশাল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি বলেছে, সরকার জনগণের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার বিষয়ে মুনশিয়ানা দেখাতে পারছে না। জনগণের আশা-ভরসা, প্রত্যাশা দ্রুত ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচিত সরকার না থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেশ পিছিয়ে পড়ছে।
মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করে বিএনপি বলেছে, দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। নির্বাচনমুখী অতি আবশ্যকীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা। যে সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হবে। অবিলম্বে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবিও জানায় দলটি।
এখনো দেশের বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ উপদেষ্টা পরিষদেও পতিত সরকারের অপকর্ম এবং অপশাসনের দোসররা রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, এসব ব্যক্তির একটি কুচক্রী মহল ‘যোগ্য ও অভিজ্ঞ’ বলে বহাল রাখার অপচেষ্টায় রত। শিগগিরই তাদের অপসারণ করা না হলে নিজ স্বার্থেই এরা পতিত ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনে সহযোগিতা করে জুলাই-আগস্টের শহীদদের আত্মদানকে ব্যর্থ করে দেবে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও তা কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপি উল্লেখ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়িত করেছে মর্মে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে। যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেও সুখকর নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র র উপদ ষ ট ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
দিল্লিতে বিজেপির বড় জয়
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে দেশটির কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দুই যুগেরও বেশি সময় পর দিল্লির ক্ষমতায় ফিরছে দলটি। নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (এএপি)। দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজ আসনেও হেরেছেন কেজরিওয়াল। গত দুই নির্বাচনে এএপির ঝোড়ো ফলাফল উল্টে ৪৮টি আসনে ফুটেছে পদ্মফুল। এএপি জয় পেয়েছে ২২টিতে। কোনো আসনে জয় পায়নি কংগ্রেস। খবর এনডিটিভির।
গতকাল শনিবার সকালে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিজেপি বড় ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরে বেলা আড়াইটার দিকে ৮৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হলে কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায় ফলাফল।
দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজ আসনে বিজেপি প্রার্থী প্রবেশ ভার্মার কাছে হারেন। পরাজয় মেনে নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় কেজরিওয়াল বলেন, ‘আজ দিল্লি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা জনগণের রায় শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমি বিজেপিকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানাই। আশা করি তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবেন।’
এদিকে দিল্লির বিধানসভায় বিজেপির বড় জয়কে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন ও সুশাসন বিজয়ী হয়েছে’। ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, দিল্লির সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন নিশ্চিত এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করতে বিজেপি চেষ্টায় কমতি রাখবে না। পাশাপাশি একটি উন্নত ভারত গঠনে দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনও নিশ্চিত করবেন তারা।
এর আগে এএপি ২০১৫ সালের নির্বাচনে ৬৭টি ও ২০২০ সালে ৬২টি আসনে জয় পেয়েছিল। অন্যদিকে বিজেপি ২০১৫ সালে মাত্র তিনটি ও ২০২০ সালে আটটি আসন জিতেছিল। ভোটের মাঠে কংগ্রেস থাকায় আম আদমি পার্টির ভোট ভাগাভাগি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।