অমর একুশে বইমেলার স্টলে ‘মব’ হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এই হামলা বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকার ও দেশের আইনের লঙ্ঘন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, একুশে বইমেলা এ দেশের লেখক ও পাঠকদের প্রাণের মেলা। এ দেশের সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিন্তক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মিলনস্থল। বইমেলায় এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিকচর্চাকে ক্ষুণ্ন করে, ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে।  

অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ ও বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে এ ঘটনার তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং এই তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া দেশে ‘মব ভায়োলেন্সের’ (দলবদ্ধ সহিংসতা) যেকোনো ঘটনা প্রতিরোধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় একদল ব্যক্তি বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকা ‘সব্যসাচী’ নামের স্টলে গিয়ে হট্টগোল করেন। তাঁরা ওই স্টল থেকে তসলিমা নাসরিনের বইগুলো সরিয়ে ফেলতে বলেন। স্টলে থাকা ব্যক্তি তাঁদের কথার প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। স্টলের সামনে জড়ো হওয়া ব্যক্তিদের বিভিন্ন স্লোগানের মধ্যে স্টলের ওই ব্যক্তি পাল্টা স্লোগান দেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলার মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্টলের ওই লোককে সরিয়ে নেয়। পরে স্টলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনতসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা–হট্টগোল, একটি স্টল বন্ধ৪ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে হবিগঞ্জে দুজনকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, শরীরে আগুন

হবিগঞ্জে ছিনতাই ও মুঠোফোন চুরির অভিযোগে এক তরুণকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করছেন কিছু লোক। পরে সেই তরুণের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী তরুণ চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনাটি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সিলিমনগর গ্রামে। তবে একজন নয়, দুই তরুণের সঙ্গে গত শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণদের একজন আজ বৃহস্পতিবার ১৩ জনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেছেন।

বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে দুই তরুণকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় আজ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাহুবল উপজেলার সিলিমনগর গ্রামের আবদুল কাইযুমের ছেলে সোহেল মিয়া গত শনিবার পশুর হাটে একটি গরু বিক্রি করে বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত ৯টার দিকে উপজেলার কটিয়াদি বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নির্জন রাস্তায় কয়েকজন ছিনতাইকারী সোহেলকে ঘিরে ধরে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এ সময় তিনি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তখন ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় সোহেল উপস্থিত লোকজনের কাছে সহিদুল ইসলাম (২৪) নামের এক তরুণকে দেখিয়ে দাবি করেন, তিনি ছিনতাই জড়িত। এরপর ওই তরুণকে ধরে সিলিমনগরে সোহেলের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। পরে সোহেল পাশের বনদক্ষিণ গ্রামের আরেক তরুণ জাহেদ আলীকে (২০) ফোন করে ‘জরুরি কাজ আছে’ বলে বাড়িতে ডেকে আনেন। জাহেদ তাঁর বাড়িতে গেলে তাঁর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তুলে গাছে বেঁধে নির্যাতন শুরু করেন। পরে তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভুক্তভোগী দুই তরুণ বর্তমানে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন চৌধুরী দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, জাহেদ আলীর শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসাধীন আরেক তরুণ সহিদুলের বাঁ হাতের কিছু অংশ ঝলছে গেছে।

জাহেদ আলী বলেন, তিনি কটিয়াদি বাজারে একটি দর্জির দোকানে কাজ করেন। তাঁকে মুঠোফোনে কল করে সোহেল বাড়িতে ডেকে নেন। যাওয়ার পর সোহেল দাবি করেন, তাঁর দুটি মুঠোফোন বাড়ি থেকে চুরি হয়েছে। চুরির সঙ্গে তিনি জড়িত। পাশাপাশি ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অপবাদ দিয়ে সোহেল ও তাঁর স্বজনেরা অমানসিক নির্যাতন করেন। পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘আমি যদি জড়িত হতাম, তাহলে সোহেলের ফোনে তাঁদের বাড়িতে যেতাম না। আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয়।’

ভুক্তভোগী সহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করেন। ওই দিন রাতে কটিয়াদি বাজারে কাজে গেলে রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে সোহেলের নেতৃত্বে কিছু লোক তাঁকে ধরে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেন। তাঁরা তাঁকে নির্যাতন করে জাহেদ আলীর নাম বলতে বলেন। তিনি নাম না বলায় নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ে।

সিলিমনগর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, ‘গত শনিবার রাতে আমরা গ্রামের আবদুল কাইযুমের বাড়িতে দুজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার দৃশ্য দেখেছি। তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও মোবাইল চুরির অভিযোগ করেন।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সোহেল মিয়া বলেন, সহিদুল ও জাহেদ এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। তাঁরা চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ওই দিন রাতে আজমিরীগঞ্জে গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। তখন সহিদুল ও জাহেদ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। এ ছাড়া আগের দিন তাঁর বাড়ি থেকে দুটি মুঠোফোন চুরি হয়। ওই চুরির সঙ্গেও তাঁরাই জড়িত বলে তিনি দাবি করেন।

বাহুবল থানার ওসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ওই অপরাধে তাঁরা জড়িত কি না, তা তদন্তের বিষয়। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি চুরির মামলা আছে বাহুবল থানায়। ওসি বলেন, দুই তরুণকে নির্যাতনের ঘটনায় জাহেদ আলী বাদী হয়ে আজ হবিগঞ্জ আদালতে ১৩ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। মামলার পর আমির মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মামলার ৫ নম্বর আসামি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ