ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী বাসগুলোকে একই ছাতার নিচে আনার লক্ষ্যে ভোলার চরফ্যাসন পৌরসভা ২০ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছিল টার্মিনাল। ২০১৮ সালের আগস্টে উৎসবমুখর পরিবেশে সেটি উদ্বোধন করা হয়। সাত বছর ধরে সেখান থেকেই বাস চলাচল করছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত নভেম্বরে সেখান থেকে আগের স্ট্যান্ডে ফিরে 
গেছেন বাসমালিকরা। এতে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে টার্মিনালটি। শহর থেকে বাস আসা-যাওয়া করায় যানজট বেড়ে জনগণকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 
এলাকাবাসী জানিয়েছে, মুখারবান্ধার বাস টার্মিনালটি পরিত্যক্ত হওয়ার পর থেকে সেখানে সন্ধ্যার পর বসছে মাদকের আসর। 
এসব কারণে আশপাশের এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। 
পাশাপাশি ওই টার্মিনালকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। 
চরফ্যাসন পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌর এলাকার যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুখারবান্ধায় বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। 
পৌরসভার অর্থায়নে তিন একর জমির ওপর প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক টার্মিনালটি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে নির্মাণকাজ শুরুর পর উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের ২ আগস্ট। সাত বছর ধরে চরফ্যাসন 
থেকে ভোলা, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও উপজেলার দক্ষিণ আইচা, দুলারহাট, চেয়ারম্যান বাজারসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলে আসছিল। দিনে দুই শতাধিক বাস এখান থেকে চলাচল করত। বর্তমানে পৌরসভার সদর বাজারের দুটি স্ট্যান্ড থেকে এসব বাস চলাচল করছে। 
টার্মিনালটিতে রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার স্কয়ার ফুট আয়তনের উন্নত মানের কাচে মোড়ানো তিনতলা ভবন। এখানে সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার ছাড়াও অত্যাধুনিক সুবিধার ভিআইপি বিশ্রামাগার 
রয়েছে। পাশাপাশি আছে রেস্তোরাঁ, মসজিদ, হলরুম, মিটিং রুম, ১০টি চায়ের স্টল, পর্যাপ্ত শৌচাগার। প্রতিটি রুটের জন্য পৃথক টিকিট কাউন্টারও রয়েছে এখানে। 
রোববার সরেজমিন দেখা যায়, বাস টার্মিনাল ভবনের কোটি টাকার আসবাব নষ্ট হতে 
বসেছে। চারপাশসহ মূল ভবনের অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। পশ্চিম পাশে এলাকার লোকজনের ফেলা ময়লার কারণে টেকাই মুশকিল। টিকিট কাউন্টারগুলোতে জমেছে ধুলাবালি। 
মুখারবান্ধার বাসিন্দা আরিফ হাওলাদারের ভাষ্য, বাস টার্মিনালটি দুই মাস ধরে বন্ধ থাকায় পুরো এলাকায় ভূতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। 
সন্ধ্যা হলেই বহিরাগত তরুণ-যুবকদের আনাগোনা বাড়ে। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে মাদকের আসর বসায়। স্থানীয় শিশু-কিশোররা উঁকিঝুঁকি দিয়ে তাদের হাতে পিটুনি খেয়েছে।
সোহেল নামে আরেকজন বলেন, রাত হলেই পরিত্যক্ত রুমে মিটিমিটি আলো জ্বলে। গাঁজার গন্ধে ভারী হয়ে উঠে বাতাস। গভীর রাতে জুয়ার আসরও বসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে পালিয়ে যায় তারা। এদের কারণে আশপাশের সড়কে ছিনতাই বেড়েছে। 
এমনকি বসতবাড়িতেও ইদানীং চোরের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে।
বাস টার্মিনাল চালু হওয়ার পর সেখানে দোকান দিয়েছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যাত্রীদের আনাগোনা থাকায় তাঁর ব্যবসা ভালো হতো। পাঁচ সদস্যের সংসার এই ব্যবসার ওপরই নির্ভরশীল। টার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর মতো অন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। 
অটোরিকশাচালক মহসিনের ভাষ্য, পৌর সদর থেকে বাস টার্মিনালটি কিছুটা দূরে থাকায় ভোলা-বরিশালগামী বাসযাত্রীদের আনা-নেওয়া করে বাড়তি আয় হতো। পৌর শহরেও যানজট ছিল না। বাসমালিকদের খামখেয়ালিতে টার্মিনালটি এখন বাসশূন্য। এতে বিপাকে পড়েছেন অটোরিকশা চালকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসচালক দাবি করেন, চরফ্যাসন বাজারে একটি সিএনজি স্টেশন হয়েছে। যে কারণে ভোলাগামী বাসে যাত্রী কমেছে। বাসমালিকরা তাই বাস টার্মিনাল ছেড়ে আগের মতো সদর বাজারে বাসস্ট্যান্ড করেছেন। তাদের এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সচেতন ব্যক্তিরা। তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছে আধুনিক এই টার্মিনাল। বাজারের ভেতর যাত্রী ওঠানামা করায় শহরে যানজট বেড়েছে। এতে নাকাল হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী-পথচারীরা। 
পৌর বাজারের ব্যবসায়ী শাহারিয়ার বলেন, এত দিন ধরে বাজারের বাইরের টার্মিনালে বাস থাকত। এতে বাজার ছিল যানজটমুক্ত। বাস মালিক সমিতির খামখেয়ালিতে আবার বাজারে বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছে। দুটি জায়গায় বাস রাখা ও যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট বেড়েছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তাঁর মতো ব্যবসায়ীরা চান, বাসগুলো যেন টার্মিনালে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। 
এসব বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন ভোলা জেলা বাস মালিক সমিতির চরফ্যাসন আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক মো.

সবুজ মিয়া। তাঁর দাবি, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাস ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। সদর থেকে অটোরিকশা দিয়ে টার্মিনালে যেতে যাত্রীদের অতিরিক্ত ৫০ টাকা গুনতে হয়। অনেক সময় ছিনতাইয়ের শিকারও হন। এসব দিক বিবেচনা করে পৌর সদর বাজারসংলগ্ন স্ট্যান্ডেই বাস রেখে সব রুটে চলাচল করছে।চরফ্যাসন থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, দুই মাস ধরে টার্মিনালটিতে কোনো বাস আসা-যাওয়া করছে না। এতে ওই এলাকায় অপরাধ প্রবণতা দেখা দিতে পারে। রাতে প্রায় সময়ই সেখানে পুলিশ টহল দেয়। 
পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, গত বছরই টার্মিনালটি ইজারা দিয়েছে পৌরসভা। ইজারার মেয়াদ এখনও চলছে। বাসমালিকরা নিজস্ব স্ট্যান্ডে বাস রেখে পরিচালনা করছেন। সব বাস টার্মিনালে স্থানান্তর বিষয়ে পৌরসভা থেকে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব যবস য় প রসভ য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

মাটির নিচের পানি ব্যবহারে কারখানাকে দিতে হবে কর: সৈয়দা রিজওয়ানা

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, কারখানাগুলোয় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে কর বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সাসটেইনেবল এপারেল ফোরামের ষষ্ঠ সংস্করণে যোগ দিয়ে এ কথা জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত মাটির নিচের পানি ব্যবহার করতে সরকারকে কোনো টাকা পয়সা দিতে হয় না। তবে, এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরিতে কাজ করছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, গার্মেন্টসগুলোয় টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে। এপারেল ফোরামের এবারের সংস্করণে অংশ নিচ্ছেন নেদারল্যান্ডসের একটি প্রতিনিধি দল, যেখানে রয়েছে ১৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

দেশটির রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কার্সটেন্স বলেন, তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বাংলাদেশ। বিনিয়োগ ও পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্প টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এম জি

সম্পর্কিত নিবন্ধ