Samakal:
2025-04-28@12:29:38 GMT

সৌন্দর্য বাড়াতে গাছে কোপ!

Published: 10th, February 2025 GMT

সৌন্দর্য বাড়াতে গাছে কোপ!

বগুড়া জিলা স্কুলের অর্ধশত বছরের ১৮টি গাছ কেটে দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে এ কাজ হচ্ছে বলা হলেও একসঙ্গে এতগুলো গাছ কাটায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে অভিভাবক, পরিবেশবিদসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
আক্ষেপ করে পরিবেশবাদী সংগঠন বাপার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, সৌন্দর্যের ধারণার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রকৃতি। সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগে প্রকৃতিই থাকে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। সৌন্দর্যের দোহাই দিয়ে পাখির আবাসস্থল গাছ কাটার যুক্তি বোধগম্য নয়। এ ছাড়া যেখানে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করি, সেখানে এ ধরনের উদ্যোগ তাদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এসব কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাছ না কাটাই ভালো।
জানা গেছে, অর্ধশত বছর আগে জিলা স্কুলের প্রবেশমুখে ও মাঠের চারপাশে মেহগনি, মিনজিরি, প্লাম্প ট্রি, বকুল, লম্বু ও দেবদারু গাছ লাগানো হয়। গাছগুলো স্কুলের সৌন্দর্য বাড়িয়েছিল। গাছের নিচে বিশ্রামের জন্য পাকা বেদি করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা শেষে সেখানে বিশ্রাম নিত। হঠাৎ করেই গতকাল সোমবার ১৮টি গাছ কাটা হয়। কাটা গাছ দেখে অভিভাবক ও শিক্ষার্থী হতভম্ব হয়ে যান। 
গত ১২ ডিসেম্বর জিলা স্কুলের সভাপতি জেলা প্রশাসক হোসনে আফরোজের সভাপতিত্বে এক সভায় গাছগুলো কাটার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। ২৯ জানুয়ারি গাছগুলো বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। চার সদস্যের কমিটি দরপত্র যাচাই শেষে শহরের কালীতলা হাটের কাঠ ব্যবসায়ী তোফায়েল আহম্মেদকে কার্যাদেশ দেয়। কমিটিতে বন বিভাগের একজন কর্মকর্তাও ছিলেন। ১৮টি গাছ ৩০ হাজার ৭৭২ টাকায় বিক্রি করা হয়। বন বিভাগের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। 
সূত্রাপুর এলাকার নাসিমা আক্তারের ছেলে বগুড়া জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। সে যখন শ্রেণিকক্ষে থাকে, তখন তিনি গাছের নিচে থাকা পাকা বেদিতে বসে বিশ্রাম নেন। তাঁর মতো শতাধিক অভিভাবক এখানে বসে বিশ্রাম নেন। পাঠ বিরতির সময় বাচ্চারাও মাছে খেলাধুলা শেষে জিরিয়ে নেয়। এভাবে গাছ কেটে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিশু ও অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, গাছগুলোতে অনেক পাখির বসবাস ছিল। দেখতেও ভালো লাগত। ফটকের অবস্থান অনুযায়ী সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দুই-তিনটি কাটলেই হতো। একসঙ্গে অর্ধশত বছরের পুরোনো ১৮টি গাছ কাটা হলো। গত বছরও ভবন নির্মাণের জন্য ৫৫টি গাছ কাটা হয়, যা দুঃখজনক।
শিক্ষার্থী অমিত হাসান জানায়, খেলাধুলা শেষে তারা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিত। গাছগুলো কাটায় আর বিশ্রাম নেওয়া যাবে না।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ডানিয়েল তাহের বলেন, শিক্ষা প্রকৌশলের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ টাকায় দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণ করা হবে। এর জন্য গাছগুলো কাটতে হচ্ছে। বন বিভাগের অনুমতিও নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও স্কুল কমিটির সভাপতি হোসনে আফরোজ বলেন, স্কুলের ফটক নির্মাণের জন্য নিয়ম মেনে ১৮টি গাছ কাটা হচ্ছে।
সামাজিক বন বিভাগ বগুড়ার উপ-বন সংরক্ষক মতলুবর রহমান বলেন, গাছ রক্ষা করে ফটক নির্মাণ করতে পারলে ভালো হতো। উন্নয়নের স্বার্থে গাছগুলো কাটতে হয়েছে। দুই-তিনটি গাছ কেটে ফটক নির্মাণ করা যেত– অভিভাবকদের এ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ স ন দর য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চেরনোবিলে কিসের ভুলে পারমাণবিক চুল্লিতে ইতিহাসের ভয়াবহতম বিস্ফোরণ হয়েছিল

১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল (২৫ এপ্রিল দিবাগত রাত)। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিলে অবস্থিত ভি আই লেনিন নামের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চতুর্থ চুল্লিতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। সেই সময় একদল প্রকৌশলী চুল্লিটিতে একটি পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করেন। তবে তা করতে গিয়ে নানা ভুল পদক্ষেপ নেন তাঁরা। এ ঘটনায় পারমাণবিক কেন্দ্রটির ভেতরে হঠাৎ বিদ্যুৎপ্রবাহ বেড়ে চুল্লিটি উত্তপ্ত হয়ে যায়। এরপর একের পর এক বিস্ফোরণ হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক চুল্লির মূল অংশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে লাগা একাধিক আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা করেন। পরে হেলিকপ্টার থেকে বালু ও অন্যান্য পদার্থ ছড়িয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও তেজস্ক্রিয়তার বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। পারমাণবিক দুর্ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আনাটাকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি বলে বিবেচনা করা হচ্ছিল। তারা শুরুতে এ দুর্ঘটনার কথা গোপন রাখে। বাতাসের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয়তা ইতিমধ্যে সুইডেন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সেখানকার একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীরা তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি টের পেয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে এর ব্যাখ্যা চায়। প্রথমে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলেও অবশেষে ২৮ এপ্রিল তারা দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পারমাণবিক শক্তি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৭৭ সালের শুরুর দিকে সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা ইউক্রেন ও বর্তমান বেলারুশ সীমান্তের ঠিক দক্ষিণে চারটি আরবিএমকে ধরনের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করেন। প্রিপিয়াত নদীর তীরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান। প্রতিটি চুল্লি ১ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদনে সক্ষম ছিল।

প্রকৌশলীদের অদক্ষতা

১৯৮৬ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় একদল প্রকৌশলী চেরনোবিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ নম্বর চুল্লিতে একটি বৈদ্যুতিক প্রকৌশলভিত্তিক পরীক্ষা শুরু করেন। চুল্লির টারবাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও তার জড়তাজনিত শক্তি ব্যবহার করে জরুরি পানির পাম্পগুলো চালানো সম্ভব কি না, তা দেখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে এই প্রকৌশলীরা পারমাণবিক চুল্লির পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে খুব বেশি জানতেন না। তাঁদের পরীক্ষণ পরিকল্পনাটি ছিল ভুলে ভরা। পরীক্ষা চালাতে গিয়ে প্রথমেই তাঁরা চুল্লির জরুরি নিরাপত্তাব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। এরপর তারা খুব কম বিদ্যুৎপ্রবাহ দিয়ে চুল্লিটি চালাতে থাকেন। এতে চুল্লিটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় বিদ্যুৎপ্রবাহ আবার স্বাভাবিক করার চেষ্টায় তাঁরা অনেকগুলো কন্ট্রোল রড সরিয়ে ফেলেন।

এতে চুল্লির উৎপাদন ২০০ মেগাওয়াটের বেশি হয়ে ধীরে ধীরে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। তবে রাত ১টা ২৩ মিনিটের দিকেও প্রকৌশলীরা পরীক্ষা চালিয়ে যেতে থাকেন। তাঁরা টারবাইন জেনারেটর বন্ধ করে দেন। তাঁরা দেখতে চেয়েছিলেন, টারবাইনের ঘূর্ণনশীল জড়তা দিয়ে চুল্লির পানির পাম্প চালানো যায় কি না, তবে সেই শক্তি যথেষ্ট ছিল না। চুল্লি যথাযথভাবে ঠান্ডা না হওয়ায় ভেতরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় গলন ঠেকাতে অপারেটররা একসঙ্গে প্রায় ২০০টি কন্ট্রোল রড চুল্লির ভেতরে ঢুকিয়ে দেন।

তবে সমস্যা হলো, রডগুলোর নকশায় ত্রুটি ছিল। প্রতিটি রডের ডগায় ছিল গ্রাফাইট টিপ। এতে রডের পাঁচ মিটার দীর্ঘ শোষণকারী অংশ ঢোকার আগেই একসঙ্গে ২০০টি গ্রাফাইট টিপ চুল্লিতে প্রবেশ করে। এ কারণে তাপমাত্রা আরও বেড়ে গিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে চুল্লির ভারী ইস্পাত ও কংক্রিটের ঢাকনা উড়ে যায়।

স্বাস্থ্যগত প্রভাব

ঘটনার পর দ্রুতই বিশ্ববাসী বুঝতে পারে, তারা একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে যাচ্ছেন। চেরনোবিলের চুল্লির মোট ১৯০ মেট্রিক টন ইউরেনিয়ামের প্রায় ৩০ শতাংশ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন সেখান থেকে ৩ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয় এবং চুল্লির চারপাশে প্রায় ১৯ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকাকে ‘এক্সক্লুশন জোন’ বা ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ অঞ্চল’ ঘোষণা করে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্য বলছে, দুর্ঘটনার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে অন্তত ২৮ জন প্রাণ হারান এবং ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হন।

জাতিসংঘের পারমাণবিক বিকিরণের প্রভাববিষয়ক বৈজ্ঞানিক কমিটি (ইউএনএসসিইএআর) বলেছে, বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কারণে ছয় হাজারের বেশি শিশু-কিশোর থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ এই সংখ্যার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আন্তর্জাতিক গবেষকেরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, উচ্চমাত্রার বিকিরণের সংস্পর্শে আসা প্রায় চার হাজার মানুষ এবং অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায় আক্রান্ত আরও প্রায় ৫ হাজার মানুষ ভবিষ্যতে বিকিরণ-সংশ্লিষ্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন।

চুল্লির অবশিষ্টাংশের চারপাশ এখন বিশাল ইস্পাতের কাঠামো দিয়ে ঘিরে রাখা আছে। তেজস্ক্রিয়তার বিস্তার ঠেকাতে ২০১৬ সালের শেষ দিকে এ ইস্পাতের কাঠামোটি স্থাপন করা হয়।

পরিবেশগত প্রভাব

চেরনোবিল বিপর্যয়ের পরপরই প্রায় ৪ বর্গমাইল এলাকা ‘রেড ফরেস্ট’ বা ‘লাল বন’ হিসেবে পরিচিতি পায়। কারণ, ওই অঞ্চলের অসংখ্য গাছ উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা শোষণ করে লালচে-বাদামি রং ধারণ করে এবং মরে যায়।

বর্তমানে চেরনোবিলের প্রবেশ নিষিদ্ধ এলাকাটিতে একদিকে যেমন ভুতুড়ে নীরবতা, আবার অন্যদিকে জীবনের এক আশ্চর্য উপস্থিতি দেখা যায়। সেখানে অনেক গাছপালা আবার গজিয়ে উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানীরা কিছু বন্য প্রাণীর মধ্যে চোখে ছানি পড়া, উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ঘাটতি থাকার মতো কিছু প্রমাণ পেয়েছেন।

চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত একটি অংশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনাগাজীতে ইজারা চুক্তি না মেনে চলছে পশুর হাট
  • জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে চলে যেতে বলছে না
  • ঢাবি প্রশাসনকে রাজনীতির বাইরে রাখতে চান উপাচার্য
  • বগুড়ায় একসঙ্গে জন্ম নিল চার নবজাতক, মা নাম রাখলেন মোহাম্মদ, আহম্মেদ, ওমর ও রহমান
  • লোডশেডিং সীমিত রাখার চেষ্টা করা হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা
  • বগুড়ায় একসঙ্গে ৪ সন্তান জন্ম দিলেন জুঁই
  • পুকুরে গোসলে নেমে একসঙ্গে তলিয়ে গেল দুই শিশু, লাশ উদ্ধার
  • চেরনোবিলে কিসের ভুলে পারমাণবিক চুল্লিতে ইতিহাসের ভয়াবহতম বিস্ফোরণ হয়েছিল