বগুড়া জিলা স্কুলের অর্ধশত বছরের ১৮টি গাছ কেটে দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে এ কাজ হচ্ছে বলা হলেও একসঙ্গে এতগুলো গাছ কাটায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে অভিভাবক, পরিবেশবিদসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
আক্ষেপ করে পরিবেশবাদী সংগঠন বাপার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, সৌন্দর্যের ধারণার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রকৃতি। সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগে প্রকৃতিই থাকে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। সৌন্দর্যের দোহাই দিয়ে পাখির আবাসস্থল গাছ কাটার যুক্তি বোধগম্য নয়। এ ছাড়া যেখানে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করি, সেখানে এ ধরনের উদ্যোগ তাদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এসব কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাছ না কাটাই ভালো।
জানা গেছে, অর্ধশত বছর আগে জিলা স্কুলের প্রবেশমুখে ও মাঠের চারপাশে মেহগনি, মিনজিরি, প্লাম্প ট্রি, বকুল, লম্বু ও দেবদারু গাছ লাগানো হয়। গাছগুলো স্কুলের সৌন্দর্য বাড়িয়েছিল। গাছের নিচে বিশ্রামের জন্য পাকা বেদি করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা শেষে সেখানে বিশ্রাম নিত। হঠাৎ করেই গতকাল সোমবার ১৮টি গাছ কাটা হয়। কাটা গাছ দেখে অভিভাবক ও শিক্ষার্থী হতভম্ব হয়ে যান।
গত ১২ ডিসেম্বর জিলা স্কুলের সভাপতি জেলা প্রশাসক হোসনে আফরোজের সভাপতিত্বে এক সভায় গাছগুলো কাটার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। ২৯ জানুয়ারি গাছগুলো বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। চার সদস্যের কমিটি দরপত্র যাচাই শেষে শহরের কালীতলা হাটের কাঠ ব্যবসায়ী তোফায়েল আহম্মেদকে কার্যাদেশ দেয়। কমিটিতে বন বিভাগের একজন কর্মকর্তাও ছিলেন। ১৮টি গাছ ৩০ হাজার ৭৭২ টাকায় বিক্রি করা হয়। বন বিভাগের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সূত্রাপুর এলাকার নাসিমা আক্তারের ছেলে বগুড়া জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। সে যখন শ্রেণিকক্ষে থাকে, তখন তিনি গাছের নিচে থাকা পাকা বেদিতে বসে বিশ্রাম নেন। তাঁর মতো শতাধিক অভিভাবক এখানে বসে বিশ্রাম নেন। পাঠ বিরতির সময় বাচ্চারাও মাছে খেলাধুলা শেষে জিরিয়ে নেয়। এভাবে গাছ কেটে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিশু ও অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, গাছগুলোতে অনেক পাখির বসবাস ছিল। দেখতেও ভালো লাগত। ফটকের অবস্থান অনুযায়ী সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দুই-তিনটি কাটলেই হতো। একসঙ্গে অর্ধশত বছরের পুরোনো ১৮টি গাছ কাটা হলো। গত বছরও ভবন নির্মাণের জন্য ৫৫টি গাছ কাটা হয়, যা দুঃখজনক।
শিক্ষার্থী অমিত হাসান জানায়, খেলাধুলা শেষে তারা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিত। গাছগুলো কাটায় আর বিশ্রাম নেওয়া যাবে না।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ডানিয়েল তাহের বলেন, শিক্ষা প্রকৌশলের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ টাকায় দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণ করা হবে। এর জন্য গাছগুলো কাটতে হচ্ছে। বন বিভাগের অনুমতিও নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও স্কুল কমিটির সভাপতি হোসনে আফরোজ বলেন, স্কুলের ফটক নির্মাণের জন্য নিয়ম মেনে ১৮টি গাছ কাটা হচ্ছে।
সামাজিক বন বিভাগ বগুড়ার উপ-বন সংরক্ষক মতলুবর রহমান বলেন, গাছ রক্ষা করে ফটক নির্মাণ করতে পারলে ভালো হতো। উন্নয়নের স্বার্থে গাছগুলো কাটতে হয়েছে। দুই-তিনটি গাছ কেটে ফটক নির্মাণ করা যেত– অভিভাবকদের এ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ স ন দর য র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কুমার নদে নিখোঁজের ৩ দিন পর একসঙ্গে দুই ভাই-বোনের ভাসমান লাশ উদ্ধার
মাদারীপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর কুমার নদ থেকে ভাই-বোনের ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে শহরের থানতলি এলাকা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই শিশুরা হলো বরিশালের গৌরনদী উপজেলার লিটন মাতুব্বরের মেয়ে কুলসুম আক্তার (১২) ও ছেলে মিরাজ মাতুব্বর (৭)। তারা মাদারীপুর শহরের তরমুগরিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকত। ওই শিশুরা স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল। এর আগে গত বুধবার দুপুরে শহরের তরমুগরিয়া হাইক্কারমার ঘাট এলাকায় কুমার নদে গোসলে নেমে এই দুই ভাইবোন নিখোঁজ হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার মাদ্রাসা থেকে পাশের কুমার নদে গোসল করতে যায় কুলসুম ও মিরাজ। বেলা একটার দিকে তারা গোসলে নেমে নিখোঁজ হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল তাদের সন্ধানে নদের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। তবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শিশুদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে আজ সকালে দুই ভাইবোনের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে থানতুলি এলাকায় ভেসে উঠে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি দেখতে পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দুটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
লিটন মাতুব্বর ও মিনোয়ারা বেগমের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। একসঙ্গে দুই সন্তানের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পরিবারটিতে মাতম চলছে। শিশুদের বাবা লিটন আহাজারি করে বলেন, ‘আমি তো কোনো অন্যায় কাজ করি না। আমি কীভাবে এই মৃত্যু মেনে নিব!’
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই। পরিবার যদি চায়, তাহলে লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। না হলে লাশগুলো পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।