কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় খাসজমি মালিকানা দাবি করে হিসনা নদী দখল করছে প্রভাবশালীরা। ইতোমধ্যে দখলের কারণে উপজেলার কয়েকটি জায়গায় নদীর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এরই মধ্যে ১০-১৫ দিন আগে হিসনা সেতু পয়েন্ট থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত আধা কিলোমিটার এলাকায় মাটি-বালু ফেলে দখল শুরু হয়েছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে জেলার দৌলতপুর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে হিসনা নদী। ভেড়ামারার ধরমপুর দিয়ে প্রবেশ করে পাশের মিরপুর উপজেলা পর্যন্ত বয়ে গেছে ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি। ভেড়ামারা উপজেলায় নদীর দীর্ঘ ১৫-২০ কিলোমিটারের মতো। এ ছাড়া এর শাখা নদীগুলোও আশপাশে বয়ে গেছে। ভেড়ামারার পৌরসভাসহ ধরমপুর, জুনিয়াদহ, চাঁদগ্রাম, মোকারমপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম এই নদীর তীরে অবস্থিত।
সরেজমিন শনিবার ও গতকাল সোমবার ভেড়ামারা পৌরসভার সীমানায় অবস্থিত হিসনা ব্রিজের দক্ষিণ পাশে গিয়ে দেখা যায়, এখানে নদী মাত্র ১০ মিটার চওড়া। একপাশে নদীর অংশে প্রায় দুই বিঘা জমি ভরাট করেছেন আব্দুল গণি নামের এক ব্যক্তি। অন্যপাশে নিজের জমির বাইরে সাত-আট ফুট নদীর জমি দখল করেছেন স্থানীয় অটো পার্টস ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য, এই দু’জনই প্রভাবশালী। যে কারণে কেউ প্রতিবাদের সাহস পান না।
উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, হিসনা ব্রিজ পয়েন্ট থেকে কাঠেরপুলের শেষ সীমানা পর্যন্ত আধা কিলোমিটার অংশের ১৩৬০, ১৩৬২, ১৩৫৩, ১৩৪০-৪১, ১৩২৪-২৫, ১৩১৮, ১৩১৬ নম্বর দাগের জমিগুলো নদীর অন্তর্ভুক্ত। তবে ১৩৫৩ দাগের জমিটির রেকর্ড সালেহা খানমের নামে। সেটি সালেহা খানমের থেকে কিনে নেন আমেরিকান দূতাবাসে কর্মরত আব্দুল গণি। বাকি দাগগুলো নদীর খাসজমি। এলাকাবাসী সেখানে চাষাবাদ করেন। জানা গেছে, ১৯৫৬-৫৭ সালে অনেকেই স্থায়ী বন্দোবস্তের (পিআর) মাধ্যমে নদীর খাসজমি সরকারের থেকে ইজারা নেন। পরে ১৯৭৬ সালে রিভিশনাল সার্ভের (আর.

এস) মাধ্যমে অনেকেই তা নিজ নামে রেকর্ড করেন।
কাঠেরপুলের বাসিন্দা বকুল শেখ বলেন, ‘আমরা বারবার চেষ্টা করেও দখলবাজদের রুখতে পারি নাই। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় সবকিছুই ম্যানেজ করেন তারা।’
এই নদী ভেড়ামারার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জানিয়ে সাতবাড়িয়া গ্রামের ওমর ফারুক বলেন, দখলদারদের কাছে তারা অসহায়। যে কারণে প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না। 
আবদুল গণির কাছ থেকে নদীর ভেতরকার দুই কাঠা জায়গা কেনেন প্রবাসী মিলনের স্ত্রী পিংকি খাতুন। তিনি সেখানে মাটি ভরাট করছেন। পিংকির দাবি, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই সেখানে মাটি ফেলছেন।
আব্দুল গণির ভাষ্য, ‘এই জমি আমার কেনা 
সম্পত্তি; সব কাগজপত্র ঠিক আছে। আমি বাড়িতে এসে আপনাদের দেখাব।’
ব্যবসায়ী রুবেল হোসেনও দাবি করেন, নিজের কেনা জমিতেই মাটি ফেলেছেন। জমির সীমানা নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে পৌরসভায় আবেদনও করেছেন তিনি।
ধরমপুর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সেলিম হোসেন বলেন, আব্দুল গণি প্রায় ১০ বছর আগে নদীর এই জমি কেনেন। এটি বকচর নামে পরিচিত। বর্তমানে গণি ওই জমি প্লট আকারে বিক্রি করছেন।
হিসনা নদী ভরাটের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসাইন। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কাজ বন্ধ করেছি। এদের শোকজের নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’
ভেড়ামারার ইউএনও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, গত ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি প্রশাসন নদীতে চলমান তিনটি কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। খাস জমি স্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ইজারার পর ব্যক্তি মালিকানায় নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি বিধি অনুযায়ী আরএস নয়, সিএস রেকর্ড অনুযায়ী নদী সংস্কার হবে।
কুষ্টিয়া জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী 
রাশিদুর রহমান বলেন, নদীর ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জায়গা জেলা প্রশাসনের আওতাধীন। তারা বললে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেন। নদীর ভেঙে যাওয়া জমি বা চর দখল আইনে নিষিদ্ধ। আদালত এক রায়ে জানিয়েছেন, নদীর তীর থেকে ১০ মিটার জমি ব্যক্তিগত হলেও কেউ দাবি করতে পারবে না। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ছেলেকে বড় আলেম বানাতে চান সাফিয়া বোরহান দম্পতি

পহেলা বৈশাখে ভোর। তখনো সূর্য ওঠেনি, কিন্তু উজ্জ্বল চরাচর জানান দিচ্ছে জীর্ণ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন আরেকটি বাংলা বছর। এমন মুহূর্তেই জীবনের এক কাঙ্খিত সুখবর পেলেন সাফিয়া নূরি ও মো. বোরহান দম্পতি। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পহেলা বৈশাখে ভোর ৫টা ১২ মিনিটে জন্ম নিলো তাদের তৃতীয় সন্তান। ধীরে ধীরে সময় গড়ায় আর বাইরে সবার মধ্যে বৈশাখী আনন্দ। শহরে হয়তো চলছে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি, পাহাড় আনন্দে রঙিন বৈসাবী উৎসবে। তখন নবজাতক ছেলে সন্তানকে কাছে পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থাতেও মা সাফিয়ার চোখে মুখে যে হাসি খেলে গেছে, সে আনন্দ তো আসলে হার মানায় পার্থিব অন্য সব আয়োজনকেই। বাবা বোরহান তো বলেই দেন, এটা আমাদের স্মরণীয় পহেলা বৈশাখ।

সাফিয়া ও বোরহান দম্পতি নবজাতকের এখনো নাম রাখেননি। তবে এখন থাকতেই ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। সাফিয়া জানান, পহেলা বৈশাখে তার সন্তান জন্মগ্রহণ করায় খুবই খুশি। ছেলে বড় হলে তাকে নামকরা আলেম বানাতে চান। তিনি ছেলে ও তার সুস্থ্যতার জন্য সবার দোয়া কামনা করেন।

জানা গেছে, গত রোববার সকালে সাফিয়া নূরি রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের বাড়ি রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের সুগার মিল এলাকার আদর্শ গ্রামে। সোমবার পহেলা বৈশাখের ভোরে জন্ম নেওয়া তাদের ছেলেটি সুস্থ্য ও সবল আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। জন্মের পর শিশুটির ওজন হয়েছে ৩ দশমিক ১ কেজি।

নবজাতকের খালা শারমিনা নূরি বলেন, পহেলা বৈশাখের দিনে সন্তান পেয়ে ওর বাবা-মার মতো আমরাও অনেক আনন্দিত। বাচ্চার মা ও তাদের পরিবারের ইচ্ছে শিশুটি বড় হলে একজন নামকরা আলেম হবে। তিনিও মা ও শিশুর জন্য সবার দোয়া কামনা করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ