Samakal:
2025-03-14@06:18:54 GMT

বিজ্ঞানচর্চা কতটা নারীবান্ধব

Published: 10th, February 2025 GMT

বিজ্ঞানচর্চা কতটা নারীবান্ধব

প্রতিবছর ১১ ফেব্রুয়ারি ‘বিজ্ঞানে নারী ও মেয়েদের আন্তর্জাতিক দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও অবদান দিন দিন বাড়ছে। তবে জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এই জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এখনও বেশ চ্যালেঞ্জিং। এ ক্ষেত্রে নীতিগত, সামাজিক ও শিক্ষাগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীশিক্ষায় দেশে গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। প্রাথমিক (৫১.

২১ শতাংশ) ও মাধ্যমিক (৫৫.০৫ শতাংশ) পর্যায়ে ছাত্রীদের উপস্থিতি ছাত্রদের চেয়ে বেশি। তবে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা (২৯.৫৩ শতাংশ), উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণায় (৩৭.৪৭ শতাংশ) নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম (ব্যানবেইস, ২০২৩)। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম) শিক্ষায় তারা পিছিয়ে। বর্তমানে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী এসটিইএম শিক্ষায় নিয়োজিত। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্বে এসটিইএম শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম। এসটিইএম স্নাতকের মধ্যে নারীর হার মাত্র ৩৫ শতাংশ। ১০ বছর ধরে এ সংখ্যা অপরিবর্তিত! বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি জেন্ডার অ্যাসেসমেন্ট ২০২১-এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সালের প্রেক্ষাপটে এসটিইএম পেশাজীবীর মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী ছিল। দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায় এসটিইএমে নারীর অনুপাত বিশ্বে সর্বনিম্ন এবং বাংলাদেশ একেবারে তলানির দিকে। 

এসটিইএম শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গড়ার সময় নারীরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, তার সরাসরি ফল আত্মবিশ্বাসের এই ঘাটতি। ইউনিসেফের মতে, মেয়েদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা জেন্ডার প্রেক্ষাপট দ্বারা প্রভাবিত। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অধিক সংখ্যায় বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী (৭৮টি দেশের মধ্যে ৭২টিতে) অথবা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পেশাদার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী। এসটিইএমকে একটি পুরুষতান্ত্রিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা এবং মেয়েরা এসটিইএমে কী করতে পারে এবং কী করা উচিত, সে সম্পর্কে সামাজিক রীতিনীতি ও ভ্রান্ত ধারণা  অভিভাবকদের প্রত্যাশাকেও প্রভাবিত করে। এগুলো এসটিইএম সম্পর্কে মেয়েদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নারীদের উৎসাহিত করতে কার্যকর প্রণোদনার অভাব রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় স্কলারশিপ, মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিংয়ের অপ্রতুলতা বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অনেক নারী বিজ্ঞানী ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। যেমন গবেষণায় অবদানের জন্য ২০২৩ সালে ১০০ জন ‘সেরা এবং উজ্জ্বল’ এশিয়ান বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন দুই বাংলাদেশি নারী। তারা হলেন ডা. গাওসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী ও ডা. সেঁজুতি সাহা। এই দু’জন ছাড়াও অনেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদাহরণ স্থাপন করেছেন। এসব সফল নারী বিজ্ঞানীর অভিজ্ঞতা ও অর্জনকে সবার সামনে তুলে ধরলে অনেক মেয়ে তাদের মতো হতে আগ্রহী হবেন। 
সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্প যেমন–‘নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন’, ‘এসটিইএমে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ ইতোমধ্যে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নারীদের জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে রোবোটিক্স, কোডিং ও ডেটা অ্যানালিটিকসে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণ মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে দক্ষ করে তুলছে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে। 

তবুও নারীদের উল্লেখযোগ্যভাবে গবেষণার সুযোগ বাড়াতে এবং উদ্ভাবনে সম্পৃক্ত করতে বিশেষ অনুদান ও ফান্ডিং প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। দেশের সব নারী যদি তাদের যোগ্যতা অনুসারে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে নিজ প্রতিভা ও দক্ষতা প্রয়োগ করার সুযোগ পান, তবে তা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তাই এ বিষয়ে দেশের সব পর্যায় থেকে আশু পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক। 
 
মো. রমজান আলী: ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ফর এডুকেশন, ইউনেস্কো, ঢাকা অফিস;
ফাতেমা বেগম পপি: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ, নগর হিসেবে তৃতীয় ঢাকা

বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ নগর ছিল ঢাকা। আগের বছর (২০২৩) এ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল আর নগর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এবার বায়ুদুষণে শীর্ষ দেশটি হলো আফ্রিকার দেশ চাদ। আর নগর হিসেবে শীর্ষে আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি।

আজ মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৪’–এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক আইকিউএয়ারের সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।

বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান পিএম ২.৫ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান ধরেই এই বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। আর গত বছর তা ছিল ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম।

এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত ১৫ গুণ বেশি।

দেশের নিরিখে বাংলাদেশের পরই আছে পাকিস্তান। দেশটির বায়ুতে ২০২৩ সালে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ছিল ৭৩ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক গবেষণা করে। ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার আজ এই প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দেশ হিসেবে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ যে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান পেল, এটা আমাদের জন্য মোটেও ভালো সংবাদ নয়। দেখা যাচ্ছে গত বছরের চেয়ে আমরা তেমন কোনো উন্নতি করতে পারিনি। এ প্রতিবেদন ২০২৪ সালের পরিস্থিতি নিয়ে। কিন্তু আমরা দেখেছি, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস আগের নয় বছরে চেয়ে বেশি দূষিত ছিল। চলতি বছরে বায়ুদূষণ আরও বেড়ে যাচ্ছে।

২০২২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের দূষিত বাতাসের দেশের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে ছিল এবং ভারতের অবস্থান ছিল অষ্টম। আর ২০২২ সালে বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ছিল ৬৫ দশমিক ৮।

নগর হিসেবে দূষণের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। এ নগরের বায়ুতে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। ২০২৩ সালে এর পরিমান ছিল ৮০ দশমিক ২ মাইক্রোগ্রাম। আর এ তালিকায় শীর্ষে থাকা নয়াদিল্লির বাতাসে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ৯১ দশমিক ৮। ২০২৩ সালে তা ছিল ৯২ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ সর্বোচ্চ দূষিত এ নগরীরও বায়ুর মান কিছুটা হলেও উন্নত হয়েছে।

১৩৮টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজার নজরদারি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইকিউএয়ার প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যেভাবে পরিকল্পনা করে ছিনতাই করা হয় ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা
  • ৪৪১ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে লাফার্জহোলসিম
  • গত বছর ৭৪৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রাইম ব্যাংক
  • ভারত নেই বলে লর্ডসের লোকসান ৬৩ কোটি টাকা
  • রোহিতের ভারত কি ওয়ানডেতে সর্বকালের সেরা দল—প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন স্টার্ক
  • ভর্তির ৭ মাসেও পরিচয়পত্র পাননি চবি শিক্ষার্থীরা
  • বিমা খাতে দুর্নীতি নির্মূল করবোই: বিআইএ সভাপতি
  • বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০ শহরের মধ্যে ১৩টিই ভারতে
  • বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ, নগর হিসেবে তৃতীয় ঢাকা
  • যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় চমক, প্রবৃদ্ধি ৪৬%