রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ৭৬ বছর বয়সী আবদুল করিম। বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। এই শরীরেও আজ সোমবার দুপুরে বেগুনবাড়ি দীপিকার মোড় এলাকায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য—ট্রাক থেকে কম দামে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর কেনা।

টিসিবির ওই ট্রাকের পেছনে তখন অন্তত আড়াই শ মানুষের ভিড় ছিল। ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে একাধিকবার পড়েও যান তিনি। প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কেনার সুযোগ পান আবদুল করিম। পণ্য নিয়ে ফেরার পথে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ঘরে বাজার করার টাকা নেই। টিসিবির ট্রাকে বিক্রি এক মাস বন্ধ ছিল। আজ (সোমবার) থেকে তারা কম দামে ডাল–তেল দেবে শুনে কিছু টাকা ধার করে এখানে এসেছি।’

টানা ১ মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আজ থেকে আবারও ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। আজ ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করেছে সংস্থাটি।

আজ সকাল থেকে রাজধানীর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। চারটি স্থানেই ট্রাকের পেছনে মানুষের লম্বা সারি ছিল। বিশেষ করে লম্বা বিরতি দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করায় নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষেরা বেশি ভিড় করেছেন।

যেমন আজ কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে বেলা সাড়ে ১১টায় টিসিবির ট্রাক আসে। মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে ট্রাকটির পেছনে তিন শতাধিক মানুষের সারি তৈরি হয়। টিসিবির একটি ট্রাকে ২৫০ মানুষের জন্য পণ্য থাকে, অর্থাৎ সেখানে উপস্থিত অনেকে শেষ পর্যন্ত পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন না। একই চিত্র দেখা গেছে অন্যান্য স্থানেও।

উল্লেখ্য, নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করেছিল টিসিবি। তবে ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আজ থেকে আবার এ কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি।

অবশ্য টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রি নিয়ে মানুষের কিছু অভিযোগ রয়েছে। উপস্থিত মানুষেরা জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা জানতে পারেন না যে কোথায় ও কবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আবার দেখা যায়, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিচ্ছেন। এ ছাড়া লাইনে বিশৃঙ্খলা ও ধাক্কাধাক্কি যেন নিয়মিত ঘটনা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে টানা ১০ মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর রয়েছে। সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। বাজারে সবজি ছাড়া অন্য পণ্যের দাম সেভাবে কমেনি; বরং গত দেড় মাসের মধ্যে চালের দাম কেজিতে ৮–১০ টাকা করে বেড়েছে। খুচরা দোকানে সহজে পাওয়া যায় না বোতলজাত সয়াবিন তেল। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া টিসিবির পণ্যের চাহিদা বেড়েছে।

টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও এক কেজি খেজুর ১৫৫ টাকায় বিক্রি করছে সংস্থাটি। মূলত আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে।

তাতে সব মিলিয়ে একজন ক্রেতার ব্যয় হবে ৫৮৮ টাকা। বাজার থেকে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে প্রায় এক হাজার টাকা লাগে, অর্থাৎ টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনলে ৪০০ টাকার মতো বাঁচবে। কাজীপাড়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শফিকুল ইসলাম দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ মাসে টিসিবির ট্রাকে যে পাঁচ পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তার সবগুলোই জরুরি। বাইরে থেকে কিনতে গেলে অন্তত ৪০০ টাকা বেশি লাগবে। তাই অফিস থেকে কিছু সময় ছুটি নিয়ে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়েছি।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হাবীবুল্লাহ বাহারের উপাধ্যক্ষকে হত্যা, ফরিদপুর থেকে দম্পতি গ্রেপ্তার

রাজধানীর উত্তরখানের ভাড়া বাসায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় শান্তিনগরের হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুর রহমান ভুঁইয়াকে (৫০)। এ ঘটনায় নাজের ও রুপা নামের দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ফরিদপুর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে উত্তরখান থানা পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, নিহতের ভাই মুজাহিদুর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করেন। পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ওই ফ্ল্যাটে ২০-২২ বছর বয়সী একজন তরুণ ও একজন তরুণীকে ঘিরে সন্দেহ তৈরি হয়। ইতোমধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন নাজের ও রুপা, তারা স্বামী-স্ত্রী।
 
উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘‘উত্তরখানের পুরান পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় খুন হন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া। ওই ফ্ল্যাটে কয়েকদিন আগে রুপা ও নাজের নামের ওই দম্পতি ওঠেন। এরপর সোমবার ভোরে তারাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।’’
 
এদিকে মঙ্গলবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে উপাধ্যক্ষের মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে পুলিশ মরদেহ আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর করে।
 

ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি-সদস্যদের সম্মানী বন্ধ, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর
  • সব প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি
  • বাংলাদেশ সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মতো শিল্পপতিদেরই চায়
  • আলোচনার মধ্যেই ইসরায়েলের হামলা জোরদার
  • বাবা-মা সন্তানের বন্ধু হতে পারেন না: অভিষেক
  • পাবনায় পৃথক ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ২
  • আইসিসির পরোয়ানায় গ্রেপ্তার হলেও দুতার্তের বিচার করা কি সম্ভব হবে
  • শ্রীলীলা-কার্তিকের প্রেম, গুঞ্জনের আগুনে ঘি ঢাললেন অভিনেতার মা
  • উচু করা হচ্ছে সীমানা প্রাচীর বেষ্টনী, চারদিকে বসছে কাঁটাতারের বেড়া
  • হাবীবুল্লাহ বাহারের উপাধ্যক্ষকে হত্যা, ফরিদপুর থেকে দম্পতি গ্রেপ্তার