একই ফ্যাসিবাদী আচরণ, একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের অন্যায্য ব্যবহার: উমামা ফাতেমা
Published: 10th, February 2025 GMT
দেশে একই ফ্যাসিবাদী আচরণ, একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের অন্যায্য ব্যবহার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের পলিসিগুলোই ভিন্নভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ কথা বলেন উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, ‘নতুন করে কালচারাল বাইনারি তৈরির চেষ্টা চলছে। এই কাজ আওয়ামী লীগ অনেক সফলভাবে করেছিল। মতাদর্শের সব গ্রে এরিয়াকে মোছার চেষ্টা হতো পপুলিজমের চাপে। হাসিনা যে একটা গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতিত হবে সেটা অনেকেই টের পাচ্ছিল। কারণ, হাসিনা কালচারাল বাইনারির ওপর ভর করে তার শাসনব্যবস্থাকে আর জায়েজ করতে সক্ষম হচ্ছিল না। তবে হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে এই সাংস্কৃতিক মেরুকরণের অনেক উগ্র প্রকাশ বিনা বাধায় ডালপালা মেলার সুযোগ পাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল কারণ, আওয়ামী ব্যবস্থাগত নিপীড়ন সব সাংস্কৃতিক ব্যবধান মুছে ফেলেছিল।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাজ তো ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী সরকার দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক বিভক্তিকে রাজনীতিকরণের সুযোগ করে দিচ্ছে যা আওয়ামী লীগের ফিরে আসার জমিন তৈরি করবে। আমাদের ভাই-ব্রাদাররা ভয় পায় লীগ ফেরত আসবে, আওয়ামী লীগ কি প্রক্রিয়ায় ফিরে আসবে তা নিয়ে বিশ্লেষণে ব্যস্ত। ধানমণ্ডি ৩২ ভাঙার পরবর্তী সময়ে দেশের জঘন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উলঙ্গ প্রকাশ ঘটেছে। আওয়ামী লীগকে কাগজে–কলমে নিষিদ্ধের মাধ্যমে কখনোই নিষিদ্ধ করা সম্ভব না। যদি না আওয়ামী লীগের তৈরি করে সাংস্কৃতিক বিভাজন, আওয়ামী লীগের তৈরি করা রাজনৈতিক বিভাজনকে প্রশ্ন না করা যায়।’
উমামা ফাতেমা আরও বলেন, ‘খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়। আওয়ামী লীগের পলিসিগুলোই জাস্ট ভিন্নভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একই ফ্যাসিবাদী আচরণ, একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের অন্যায্য ব্যবহার। আমাদের শহীদেরা নিশ্চয়ই একটা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। নব্বইয়ের অভ্যুত্থানের নির্লজ্জ পুনরাবৃত্তির জন্য জীবন দেননি।’
আরও পড়ুন‘মবে’র মহড়া এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করব: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রকৃতির আছে নিজস্ব ইন্টারনেট
ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল ছাড়া এখন আমাদের জীবন চলে না। এর মাধ্যমে আমরা তারবিহীন উপায়ে হাজারো মাইল দূরে বার্তা পাঠাতে পারি। ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ফোনকল– সবই আমাদের যোগাযোগকে করেছে সহজতর। আর তা সম্ভব হয়েছে অদৃশ্য অন্তর্জালের কারণেই। কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্যরা কি এ তারবিহীন যোগাযোগে সক্ষম?
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে যুগান্তকারী তথ্য। প্রকৃতির নিজস্ব ‘ইন্টারনেট’ রয়েছে, যা সম্পর্কে এতদিন আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতিতে জন্তু-জানোয়ার, গাছগাছালি থেকে শুরু করে জীবাণু ক্রমাগতভাবে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে। তারা সংকেত দিচ্ছে, ঘ্রাণ শনাক্ত করছে, তাপমাত্রার পরিবর্তনে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। সেই সঙ্গে অন্যদের আচরণ বিশ্লেষণ করছে। এ ধরনের বিনিময় প্রায়ই তাদের কাজকর্মে দৃশ্যমান।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ ছাড়া প্রকৃতির অন্য বাসিন্দাদের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে অদৃশ্য সুতার জাল। জার্মান সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ বায়োডাইভারসিটি রিসার্চ (আইডিআইভি) এবং ফ্রিডরিখ শিলার ইউনিভার্সিটি জেনার ডক্টর উলরিখ ব্রোসের নেতৃত্বে এ গবেষণা প্রকৃতিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণাকে প্রসারিত করে।
বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব, বাস্তুতন্ত্রগুলো একটি বিশাল তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করে। যাকে গবেষকরা ‘প্রকৃতির ইন্টারনেট’ বলে থাকেন। এ ব্যবস্থা দৃশ্যমানতার বাইরেও যায়। কীভাবে তথ্য (কেবল পদার্থ ও শক্তি নয়) বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে প্রবাহিত হয়, এটি তা ট্র্যাক করে। এ তথ্য বিভিন্ন প্রজাতির আচরণ, গতিশীলতা ও পরিবেশগত ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে।
গবেষণায় পাওয়া এ ধারণা বাস্তুতন্ত্রীয় তত্ত্বে বিপ্লব আনতে পারে। ‘প্রকৃতির ইন্টারনেট’ প্রজাতিগুলোকে কেবল ভক্ষক, পরাগায়নকারীই নয়, সংকেত ব্যবহারকারী ও প্রক্রিয়াকরণকারী হিসেবে বিবেচনা করে। এর মাধ্যমে এটি প্রকৃতি আসলে কী, তা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মুক্ত করে।
গত কয়েক দশক ধরে বাস্তুবিদরা খাদ্য-জালের মানচিত্র তৈরি করেছেন। তারা শক্তি স্থানান্তরও ট্র্যাক করেছেন। কে কাকে খায়, কে বীজ বহন করে, কে ফুলের পরাগায়ন করে, তারা তা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ নিদর্শনগুলো এমন মডেল তৈরি করেছে, যা প্রজাতির ভূমিকা ও শক্তির ভারসাম্য ব্যাখ্যা করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুপস্থিত ছিল।
নতুন গবেষণাপত্রটি দেখায়, শুধু ভৌত সংযোগের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর বাদ দেয়। সতর্কতা, ইঙ্গিত, সংকেতসহ তথ্যসংযোগ প্রকৃতিতে থাকা প্রজাতিগুলো কখন ও কোথায় চলাচল করে, তা প্রভাবিত করে। প্রাণীরা কী করে ও বিভিন্ন সম্প্রদায় কীভাবে স্থিতিশীল থাকে বা ভেঙে পড়ে, এগুলো তা প্রভাবিত করে।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক উলি ব্রোস মনে করেন, প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের প্রক্রিয়াগুলো বুঝতে প্রকৃতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যপ্রবাহের বোঝা প্রয়োজন। বিষয়টি জটিল, কিন্তু বাস্তবিক। বাস্তুতন্ত্র কেবল ধ্বংসের শিকল নয়। এটা দর্শণার্থী, শ্রোতা ও সাড়াদানকারীর একটা নেটওয়ার্ক, যার ভিত্তি তথ্যের অংশীদারিত্ব। সূত্র : আর্থ ডটকম।