প্রশাসনের কোটা কমানোর সুপারিশ বাস্তবায়ন না করার অনুরোধ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের
Published: 10th, February 2025 GMT
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসনিক সার্ভিসের (প্রশাসন ক্যাডার) কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। প্রশাসন ক্যাডারের সংগঠনটি বলেছে, এটি উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আজ সোমবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো.
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। তারা সব সার্ভিসের মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সচিবালয়ে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে একটি ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)’ গঠনের সুপারিশ করেছে। সব সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে এখানে নিয়োগ পেতে পারবেন। বর্তমানে উপসচিব পদে পরীক্ষা ছাড়াই প্রশাসন থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ পদোন্নতি হয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বলছে, সব সার্ভিসের মধ্যে সমতা বজায় রাখতে ও জনপ্রশাসনের উচ্চ পদে মেধাবীদের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত প্রশাসনিক সার্ভিসের (বর্তমান প্রশাসন ক্যাডার) ৭৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার বিষয়টি অধিকতর যৌক্তিক হবে। বাকি ৫০ শতাংশ পদ অন্যান্য সার্ভিসের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
অবশ্য কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলার রায় এবং পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তাই বিষয়টির আইনি দিক পরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় দেশের সার্বিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে সরকার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে, যা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। একটি দক্ষ, জনমুখী, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন গড়তে সরকারের এ উদ্যোগকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা শুরু থেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন গোষ্ঠী বৃহত্তর কল্যাণ চিন্তার পরিবর্তে নিজ নিজ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন সার্ভিসের সদস্যদের মধ্যে সৌহার্দ্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সব সংস্কার কর্মসূচিকে সমর্থন করে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের সব কার্যক্রমকে গতিশীল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কমিশনের জমা দেওয়া সুপারিশের মধ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু কিছু প্রস্তাবের বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিয়ে অধিকতর পর্যালোচনা করা উচিত বলে মনে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এর মধ্যে প্রশাসনের উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবকে সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশাসনিক সার্ভিস থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য সার্ভিস থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়াকে অধিকতর যৌক্তিক বলে সংস্কার কমিশন মন্তব্য করেছে।
বিবৃতিতে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, এ বিষয়ে একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে প্রায় ১০ বছর চলার পর আপিল বিভাগের রায় ও রিভিউ শেষে ২০১৬ সালে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়। তাতে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫ শতাংশকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়। সুতরাং কমিশনের এই মতামত উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করা অধিকতর যৌক্তিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কোটা নেই, অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্যই ১৯৮৯ সালে কোটার প্রচলন করা হয়েছিল।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আরও বলেছে, ১৯৯২ সালে বিসিএস (সচিবালয়) ও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার একীভূত হওয়ার পর সচিবালয় সার্ভিসের সব পদ তথা সহকারী সচিব, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপসচিব ইত্যাদি প্রশাসন সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত হয়। যেহেতু উপসচিব প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ, সেহেতু পদসোপান অনুযায়ী উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারকে শতভাগ পদোন্নতি না দিয়ে তার পরিবর্তে পার্শ্ব-নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, যা যৌক্তিক নয়। তাই দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া বিষয় নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত পর্যালোচনা বাস্তবায়ন না করার জন্য অ্যাসোসিয়েশন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপসচ ব প সরক র র র জন য পর ক ষ ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জনবিরোধী: আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশ জনবিরোধী আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। বিসিএস প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডার নিয়ে গঠিত এই পরিষদের নেতারা বলেছেন, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে কোনো কোটা মানা হবে না। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিষদের সমন্বয়ক মো. শওকত হোসেন মোল্যা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও বাকি ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা দিয়ে হাস্যকর ও অযৌক্তিক প্রস্তাব করেছে। এমন কোটা মানা হবে না– ঘোষণা দিয়ে কমিশনের এই প্রস্তাব সংশোধন করে শতভাগ পদোন্নতি সব ক্যাডারের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
শওকত হোসেন বলেন, বিসিএস ২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশ করায় ঢালাওভাবে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত বরখাস্ত করা হয়েছে ১৪ কর্মকর্তাকে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া সামান্য অজুহাতে এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা মৌলিক অধিকার ও চাকরিবিধির পরিপন্থি।
তিনি বলেন, এভাবে বরখাস্ত অব্যাহত থাকলে সিভিল সার্ভিসে অসন্তোষ দেখা দেবে, যা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদভুক্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা কর্মবিরতিসহ ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ থাকলেও সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিষদ নেতারা বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কিছু প্রস্তাব সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রতিবেদনের কিছু প্রস্তাব পরস্পরের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেলে খুঁটিনাটি যাচাই করে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত ক্যাডারের মো. জামিলুর রহমান, স্বাস্থ্য ক্যাডারের ডা. মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন, শিক্ষা ক্যাডারের ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান, প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের ড. মুহাম্মদ আহসান হাবিব, কৃষি ক্যাডারের মো. মমিনুল হক ও ফাতেহা নূর।