তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় অমর একুশে বইমেলার ‘সব্যসাচী’ স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি আগেই দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সোমবার ঘোষণা অনুযায়ী হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লেখক ও প্রকাশক শতাব্দী ভবকে মেলা থেকে বের করে নিয়ে যায় পুলিশ এবং স্টলটিও বন্ধ করে দেয়। তবে বাংলা একাডেমি বলছে তারা কোনো স্টল বন্ধ করেনি।

এই স্টলের বিরুদ্ধে নাস্তিকতা প্রচারের অভিযোগ তুলে সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত রোববার থেকে সামাজিক মাধ্যমে একাধিক পোস্ট দেওয়া হয়। শতাব্দী ভবও হামলা হওয়ার শঙ্কার কথা আগে জানিয়েছিলেন সামাজিক মাধ্যমে। তিনি সেখানে ভিডিও বার্তাও দিয়েছিলেন। প্রকাশনা সংস্থাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সানজানা মেহরিন একাধিক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, তসলিমা নাসরিনের বই রাখার কারণে কিছু লোক তাদের স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একদল শিক্ষার্থী সব্যসাচী স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই দেখে ভিড় জমান। শতাব্দী ভব তখন সেখানে বসে ছিলেন। তসলিমা নাসরিনের বই কেন বেচছেন? শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে তাদেরকে ‘মৌলবাদী’ বলেন এ লেখক। একপর্যায়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাঁকে মারতে যান। তাঁকে কানে ধরে ক্ষমা চাইতে বলেন। একপর্যায়ে তিনি দুই হাত একত্র করে দর্শনার্থীদের কাছে ক্ষমা চান। পুলিশ এসে বাধা দেয় এবং তাঁকে নিয়ে চলে যায়।

মেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আগত দর্শনার্থীরা ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, বাংলাদেশে হবে না’; ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ ঘটনায় পাল্টা মিছিলও হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে তসলিমা নাসরিন গতকাল বিকেলে সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘বইমেলার সব্যসাচী স্টল গুঁড়ো করে দিতে চেয়েছে। বইমেলা কর্তৃপক্ষের কী করা উচিত? সব্যসাচী স্টলের সবার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। যারা স্টল গুঁড়ো করে দেওয়ার, ধ্বংস করে দেওয়ার, প্রকাশককে আর লেখককে খুন করার হুমকি দিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া উচিত। তা না করে তারা প্রকাশককে বলেছে মেলা থেকে বই সরিয়ে নিতে।’

এ বিষয়ে বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক সেলিম রেজা সমকালকে বলেন, ‘এ ঘটনার পর পুলিশের সহযোগিতায় মব থামানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি কোনো স্টল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। কোনো বইও নিষিদ্ধ করেনি।’

শতাব্দী ভবের স্ত্রী সানজানা মেহরিন গতকাল রাতে সমকালকে বলেন, ‘তসলিমা নাসরিনের বই রাখার কারণে দুই দিন ধরে কিছু লোক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে আমাদের স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এই বিষয়টি আমরা পুলিশ এবং বইমেলা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। তারা আমাদের বই সরিয়ে নিতে বললে, আমরা আজ বই সরিয়ে নিয়েছি। তারপরও তারা এসে আমাদের স্টলে হামলা করেছে। ভবকে পুলিশ নিয়ে গেছে।’

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, শতাব্দী ভবকে পুলিশ জিম্মায় নিয়েছে। তাঁর প্রকাশনায় যদি নিষিদ্ধ বই থাকে, তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর স্টল বন্ধ থাকবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল শত ব দ বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘আপত্তিকর আচরণের’ কারণে হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে খুন করা হয়: পুলিশ

রাজধানীর উত্তরখানে নিজ বাড়িতে খুন হওয়া হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর আচরণ’–এর অভিযোগ তুলেছেন পুলিশের হাতে আটক ওই দম্পতি।

আটক দম্পতিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আজ বুধবার পুলিশ জানায়, টাকাপয়সাসহ ব্যাগ হারিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে অসহায় অবস্থায় পড়েছিলেন তাঁরা। দুজনেরই বয়স ২৫–এর কম। তাঁদের অসহায়ত্ব দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া। তাঁর বাসায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে দুজনকে উত্তরখানের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চাকরির কথা বলে নিলেও সাইফুর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল ওই নারীর সঙ্গে ‘আপত্তিকর আচরণ’ করা। সুযোগ পেলেই স্বামীকে বাইরে পাঠিয়ে তরুণীর শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন সাইফুর রহমান।

পুলিশ জানায়, সর্বশেষ গত রোববার রাতে সাইফুর রহমান তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তাঁর স্বামী নাজিম প্রতিবাদ করেন। এতে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে বঁটি দিয়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান দুজন।

আজ দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, আটক দুই ব্যক্তি হলেন মো. নাজিম হোসেন (২১) ও তাঁর স্ত্রী রুপা বেগম ওরফে জান্নাতি (২৩)। গতকাল মঙ্গলবার ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি মুঠোফোন, একটি চাবির রিং ও একটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়। এর আগে নিহত সাইফুর রহমানের ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো বঁটি, একটি ধারালো চাকু, রক্তমাখা জামাকাপড় ও বিছানার চাদর উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, ১০ মার্চ দিবাগত রাত দুইটা থেকে ভোররাত চারটার মধ্যে হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া উত্তরখান থানার পুরানপাড়া বাতান এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে খুন হন। এ খুনের ঘটনায় তাঁর ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় গতকাল মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মহিদুল জানান, পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগের দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমানের সঙ্গে মো. নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে দুজনকে তাঁর ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন সাইফুর রহমান। একপর্যায়ে তিনি রুপাকে তাঁর ফ্ল্যাটে আটকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের রাতে একই শয্যায় ছিলেন সাইফুর রহমান, রুপা ও তাঁর স্বামী নাজিম।

ডিসি মহিদুল আরও বলেন, সেই রাতে নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে রুপাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন সাইফুর রহমান। একপর্যায়ে নাজিম ঘুম থেকে জেগে গেলে রান্নাঘর থেকে বঁটি এনে তাঁকে উপর্যুপরি আঘাত করেন। আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোনাবাড়ীতে বেতনের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
  • মোবাইল চুরির অভিযোগে যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতন
  • ‘আপত্তিকর আচরণের’ কারণে হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে খুন করা হয়: পুলিশ
  • ধর্ষণচেষ্টার কারণে খুন হন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ: পুলিশ