লিলি মিডিয়া ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড জিতলেন তিন গণমাধ্যমকর্মী
Published: 10th, February 2025 GMT
দেশের সম্ভাবনাময় নতুন শিল্পখাত ‘কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার ও পার্সোনাল কেয়ার’ বিষয়ে প্রতিবেদন লিখে ‘লিলি প্রেজেন্টস মিডিয়া ফেলোশিপে’ তিন ক্যাটাগরিতে বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন গণমাধ্যমকর্মী।
প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার জসিম উদ্দিন বাদল, অনলাইন ক্যাটাগরিতে জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের ডিএম নাজমুল হোসাইন এবং টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন আরটিভির সেলিম মালিক।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও পুরস্কারের চেক তুলে দেওয়া হয়।
কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার শিল্প খাতের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এএসবিএমইবি) ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) যৌথ আয়োজনে এই ফেলোশিপ পরিচালিত হয়। ফেলোশিপে প্রিন্ট, অনলাইন ও টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে মোট ৩০ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
অংশগ্রহণকারী ফেলোরা সরেজমিন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে নিজ নিজ গণমাধ্যমে এই খাতের সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা এবং এগুলো থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএনসিআরপির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, ভেজাল ও নকল কসমেটিকস পণ্য প্রতিরোধে ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করছে। এ খাত নিয়ে জনসচেতনতায় এ ধরনের আরও প্রতিবেদন প্রকাশ করা দরকার।
এএসবিএমইবির সেক্রেটারি জেনারেল জামাল উদ্দীন বলেন, এনবিআরের তথ্যমতে, এ খাত থেকে প্রায় ৩০০ কোটি রাজস্ব আয় হয়। তবে ব্যবসায়ীদের ধারণা এ আয় হাজার কোটি টাকার বেশি হবে। দেশীয় কসমেটিকস শিল্পের বিকাশে নীতি সহায়তা দরকার।
এ সময় সিনিয়র সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল জলিল ও ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদসহ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ক র
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী
পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।
তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’ নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।
তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।
নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।
শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।
বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।
পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।
শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।