আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ৫৩ বছরে কোনো রাজনৈতিক দলই সমস্যা সমাধানের রাজনীতি করেনি। কারণ যে শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের জাতিকে দক্ষ জনশক্তি করে উন্নত করে বিশ্বের বুকে তুলে ধরবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থা এখন বেকার তৈরির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যোগ্যতার সার্টিফিকেট এখন রাজনৈতিক দলের লিফলেটে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানহীন সনদ শুধু বেকারত্ব বাড়াচ্ছে।’

আজ সোমবার বিকেলে নেত্রকোনা শহরের ছোটবাজার এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এবি পার্টি নেত্রকোনা জেলা শাখা এ জনসভার আয়োজন করে।

সভায় আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, একজন অনার্স-মাস্টার্স পাস শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের ৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। অথচ সেই নাগরিকেরা যখন বিদেশে যাওয়ার জন্য ইমিগ্রেশনে উপস্থিত হন, তখন তাঁকে প্রবাসী বলে অপমান করা হয়। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থাসহ সবকিছু সংস্কার করতে হবে। আর তৃতীয় ধারার রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে সম্মানিত করার রাজনীতি বিনির্মাণ প্রয়োজন।

নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশে সবচেয়ে বড় নীরব সিন্ডিকেটের শিকার কৃষকেরা। কম দামে কৃষিপণ্য কিনে কোল্ড স্টোরেজের মালিকেরা চড়া দামে বিক্রি করছেন। এমনকি তাঁরা কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ চার্জও দ্বিগুণ করেছেন, যা ২৪–এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বার্থবিরোধী।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে দুর্নীতি-লুটপাট আর চাঁদাবাজির মাধ্যমে যে অপশাসন কায়েম করেছিল, সে রকম চিন্তা নিয়ে এখনো কেউ কেউ চাঁদাবাজি ও নানা ধরনের দুর্নীতি করছেন বলে মন্তব্য করেন আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, তারা যদি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ থেকে শিক্ষা না নেয়, তাদের পরিণতিও ফ্যাসিস্টদের মতোই হবে। এই নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা কায়েম ও দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য এবি পার্টি লড়াই-সংগ্রাম করে যাবে। এবি পার্টির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

এবি পার্টির নেত্রকোনা জেলার আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর জেলা আহ্বায়ক ছানোয়ার হোসেন, সহকারী প্রচার সম্পাদক রিপন মাহমুদ, যুব পার্টির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক আমানুল্লাহ রাসেল, নেত্রকোনা জেলার সদস্যসচিব মাহমুদুল হাসান চৌধুরী, যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রহমান, যুব পার্টির আহ্বায়ক আবদুর জলিল, জামালপুর পৌরসভার আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, এবি যুব পার্টির আহ্বায়ক শিহাব ইসলাম প্রমুখ।

ছানোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, হাঁটি হাঁটি পা পা করে এবি পার্টি আজ বিভাগের প্রতিটি জেলায় তার বিস্তার তৈরি করছে, যা আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের আমলে কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। হত্যা, গুম, খুন গণহত্যা ও লুটপাটের যে রাজনীতি গত ১৬ বছর ধরে চলেছিল, তা শুধু দেশকেই ডোবায়নি বরং ফ্যাসিবাদীদেরও রাজনীতির কবর রচিত করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ র জন ত র র জন

এছাড়াও পড়ুন:

৬৪ জেলায় জনসভা করবে বিএনপি

দেশব্যাপী জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ১০ দিনে দেশের ৬৪ জেলায় এই জনসভা করবে দলটি। পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় শহরগুলোতে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোন জেলা ও মহানগরে কবে এ কর্মসূচি পালন করা হবে তার তারিখ আজ-কালের মধ্যে সাংগঠনিক সভায় ঠিক করা হবে।‌ এই সাংগঠনিক সভায় দশ বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক থাকবেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালে যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘১০ দিনের মধ্যে ৬৪টি জেলায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করবে বিএনপি। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা এসব সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় শহরগুলোতে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’

রিজভী বলেন, ‘১১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি জেলায় জেলায় অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচির তারিখ ও সিনিয়র নেতাদের দলটির শীর্ষ নেতারা বৈঠক করে চূড়ান্ত করবেন। পর্যায়ক্রমে মহানগর, বিভাগীয় শহরে কর্মসূচি পালিত হবে।’ এসব কর্মসূচি রমজানের আগেই শেষ হবে বলেও যোগ করেন তিনি।

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবিতে, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দাবিতে, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে রমজান শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে জেলা ও মহানগরে পর্যায়ক্রমে সভা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরা এখন প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রয়েছে। যারা ৫ আগস্টের পরিবর্তনকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি এমন লোকদেরকে চিহ্নিত করতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সফল হওয়া কঠিন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছেন এবং ষড়যন্ত্রমূলক অডিও রেকর্ড প্রকাশের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক উস্কানি প্রদান করছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উস্কানিতে ইতোমধ্যে গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সারাদেশে গুপ্ত হামলা, ঝটিকা মিছিল ও গণসংযোগ শুরু করেছেন! 

সারা দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নেতিবাচক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, গত ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণহত্যাকারী আওয়ামী দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে যতোটা কঠোর হওয়া দরকার ছিল, উল্টো বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ পর্যন্ত গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের ৫৭২ জন নেতা ও তার দোসরদের জামিন হয়েছে। ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ডিবি অফিসে নিয়ে ছয় কোটি টাকা চাঁদা আদায় চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তারের তিন দিনেই জামিনে মুক্ত হয়েছেন সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের সিন্ডিকেটের প্রধান এসএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক। গণহত্যার মামলার আসামিরা কীভাবে জামিন পাচ্ছে, আমরা সরকারের কাছে সেটির স্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চাই।

রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল পদক্ষেপ সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে কিন্তু এই সরকারের ব্যর্থতা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির ব্যর্থতা হিসেবেই পরিগণিত হবে। এ কারণে বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়। কিন্তু সরকার নিজেদেরকে সফল দেখতে চায় কিনা এটিও ভাববার বিষয় রয়েছে। সরকারের ‘কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপে’ কম গুরুত্তপূর্ণ ইস্যু বাদ দিয়ে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

অভিযোগ করে বিএনপি এই নেতা বলেন, ‘‘গত ২ ফেব্রুয়ারি  ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে রক্তপিপাসু আওয়ামী দুর্বৃত্তরা গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর নারকীয় আক্রমণ চালিয়েছে। ১৫ জনের বেশি গুরুতর জখম হয়েছেন। পতিত সরকারের গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর ফ্যাসিস্টদের নিয়ে ভার্চুয়ালী মিটিং করে বলেছেন, ‘যে শহরে আমরা দিনের বেলা ঘুরতে পারি না সে শহরের কাউকে আমরা ঘুমাইতে দিব না’। লীগের নয়া প্রোজেক্টের মাস্টারপ্ল্যানারদের একজন সে। এমন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীকে এখনও গ্রেপ্তার করতে না পারা সরকারের চরম ব্যর্থতা। দুর্নীতির মাফিয়া চক্রের অন্যতম শিখন্ডি পলাতক সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল কনফারেন্সে ষড়যন্ত্রমূলক সভা করছেন। একটি সভায় অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘পুলিশের ও প্রশাসনের ৯০ ভাগই আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্ল্যান করা হচ্ছে।’ গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নজিরবিহীন দুর্নীতির মহানায়ক সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদরা। বেনজির আহমেদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গোপনীয় ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ্যে আসার পরও প্রশাসন নির্বিকার। বেনজির আহমেদের সাথে ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের ভার্চুয়াল কনফারেন্সে যারা জড়িত তারা আইনের আওতার মধ্যে পড়ে। ইতিমধ্যে হাসিনার নির্দেশে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। পুলিশের গাড়ি থেকে পাবনার সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাবকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।’’

অন্তবতীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা-নাগরিকদের গণঅভ্যুত্থানে বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালানো অপরাধীদের কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে সরকারের কাছে সেটি জানতে চাই। সহস্রাধিক মানুষ হত্যা, হাজার হাজার পঙ্গু ও আহত হওয়ার এই বর্বরোচিত ঘটনা ও ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার সঠিক বিচার না হলে বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ হয়ে পড়বে অনিশ্চিত। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই গণহত্যার বিচার হতে হবে। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তার, জেলে ও দেশের বাইরে রেখে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর নয়। সচিবালয়ে গিজগিজ করছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা। পুলিশ-প্রশাসন-আদালতে তারাই সবকিছু করছে। অবিলম্বে ফ্যাসিস্টদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে আবারো হাসিনার দোসরদের পরাস্ত করা কঠিন হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ, জাপা ও শেখ পরিবারের কাউকে আর রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না: আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
  • আন্দোলনকে ব্যবহার করে কেউ কেউ দল করতে চায়, বাকিদের অবদান অস্বীকার করে: নুরুল হক
  • সারা দেশে রাজনৈতিক ব্যানারে হাট-ঘাট-নদী দখলের প্রতিযোগিতা চলছে: আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
  • ৬৪ জেলায় জনসভা করবে বিএনপি