সংস্কার কমিশনের মত উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
Published: 10th, February 2025 GMT
উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ রাখতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে তাকে উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
সোমবার এক বিবৃতিতে এ মতব্যক্ত করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠনটি।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বিষয় নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত পর্যালোচনা ও বাস্তবায়ন না করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া উপসচিব পদটি শতভাগ প্রশাসন ক্যাডারের বলেও জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ বিষয়ে একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে প্রায় ১০ বছর চলার পর আপিল বিভাগের রায় ও রিভিউ শেষে ২০১৬ সালে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়। সেখানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশকে বৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করা হয়। আপিল বিভাগ প্রশাসন ক্যাডারের প্রাসঙ্গিক কর্ম অভিজ্ঞতা ও ঐতিহাসিকভাবেই প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে উপসচিব পদটির সম্পর্ক বিবেচনায় উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পদে প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত অধিকার আছে। অন্য ক্যাডারের সহজাত অধিকার নেই বলে ঘোষণা করে। সুতরাং কমিশনের এই মতামত উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৯২ সালে বিসিএস (সচিবালয়) এবং বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একীভূত হওয়ার পর সচিবালয় সার্ভিসের সব পদ তথা সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব ইত্যাদি প্রশাসন সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত হয়। পদসোপান অনুযায়ী উপসচিব পদের ফিডার পদ হচ্ছে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিবের ফিডার পদ সহকারী সচিব। যেহেতু উপসচিব প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ, সেহেতু পদসোপান অনুযায়ী উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারকে শতভাগ পদোন্নতি না দিয়ে তার পরিবর্তে পার্শ্ব-নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, যা যৌক্তিক নয়।
অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী এবং সভাপতি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম সাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের সার্বিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। একটি দক্ষ, জনমুখী, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন গড়তে এই উদ্যোগকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা শুরু থেকেই স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজ নিজ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সার্ভিস কর্মকর্তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টির সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জনবিরোধী: আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশ জনবিরোধী আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। বিসিএস প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডার নিয়ে গঠিত এই পরিষদের নেতারা বলেছেন, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে কোনো কোটা মানা হবে না। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিষদের সমন্বয়ক মো. শওকত হোসেন মোল্যা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও বাকি ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা দিয়ে হাস্যকর ও অযৌক্তিক প্রস্তাব করেছে। এমন কোটা মানা হবে না– ঘোষণা দিয়ে কমিশনের এই প্রস্তাব সংশোধন করে শতভাগ পদোন্নতি সব ক্যাডারের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
শওকত হোসেন বলেন, বিসিএস ২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশ করায় ঢালাওভাবে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত বরখাস্ত করা হয়েছে ১৪ কর্মকর্তাকে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া সামান্য অজুহাতে এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা মৌলিক অধিকার ও চাকরিবিধির পরিপন্থি।
তিনি বলেন, এভাবে বরখাস্ত অব্যাহত থাকলে সিভিল সার্ভিসে অসন্তোষ দেখা দেবে, যা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদভুক্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা কর্মবিরতিসহ ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ থাকলেও সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিষদ নেতারা বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কিছু প্রস্তাব সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রতিবেদনের কিছু প্রস্তাব পরস্পরের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেলে খুঁটিনাটি যাচাই করে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত ক্যাডারের মো. জামিলুর রহমান, স্বাস্থ্য ক্যাডারের ডা. মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন, শিক্ষা ক্যাডারের ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান, প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের ড. মুহাম্মদ আহসান হাবিব, কৃষি ক্যাডারের মো. মমিনুল হক ও ফাতেহা নূর।