ঘরে ঘরে আওয়ামী লীগের আমলের তৈরি ডেভিল বইসা রইছে: শামা ওবায়েদ
Published: 10th, February 2025 GMT
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেছেন, ‘আজকে ডেভিল হান্ট শুরু করছে এই ইন্টেরিম সরকার। খামাখা তো করে নাই। কারণ, ঘরে ঘরে আওয়ামী লীগের আমলের তৈরি ডেভিল বইসা রইছে। ডেভিলের বাংলা হইল শয়তান। এহন শয়তান ধরার পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।’
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল এলাকায় সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ নিতে গিয়ে আজ সোমবার দুপুরে এ কথা বলেন শামা ওবায়েদ।
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘যারা মানুষের টাকা খাইছে, জনগণের টাকা শোষণ করে নিজের পকেট ভারী করছে, বাড়িঘর বানাইছে বিদেশে, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে; কিন্তু একটা রাস্তা বানাইতে পারে নাই নিজের গ্রামে, এই সরকার আমরা চাই না। আমরা চাই গণতান্ত্রিক সরকার। যেখানে জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে এবং জনগণের সেবা করবে। নিজের সেবা করবে না, নিজের পরিবারের সেবা করবে না। সুতরাং সেই সরকার, সেই সংসদ আমরা দেখতে চাই।’
পরে বিকেলে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল এলাকায় এক যুব সমাবেশে যোগ দেন শামা ওবায়েদ। কাইচাইল ইউনিয়ন যুবদল আয়োজিত ওই যুব সমাবেশে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আগস্টের ৫ তারিখে বাংলাদেশের যিনি আসল ডেভিল, তিনি পালায় গেছেন। কোথায় গেছেন? তাঁর নিজের বাড়িতে গেছেন। বাংলাদেশকে বাঁচায় গেছেন।’
ছাত্র-নেতাদের উদ্দেশ্যে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বন্ধুরা অনেকে অনেক কথা বলেন। ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি বলছি, ওদের অনেকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়। ছাত্ররা যারা মাঠে নামে, দেশের জন্য কথা বলে, তারা অবশ্যই দেশকে ভালোবেসে কথা বলে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে। তারেক রহমান দিনের পর দিন, রাতের পর রাত বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষকে সংগঠিত করার জন্য, উদ্বেলিত করার জন্য কাজ করে গেছেন।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কাইচাইল ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কাইয়ুম মাতুব্বর। এ সময় বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হাবিবুর রহমান তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত আলী শরিফ প্রমুখ।
এর আগে বেলা দুইটার দিকে শামা ওবায়েদ সালথার ভাওয়ালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ছয় কৃষক পরিবারের খোঁজ নিতে যান। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ছয়জন কৃষক পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থসহায়তা করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভাওয়াল ইউনিয়নের পুরুরা মৃধাপাড়া গ্রামে আগুন লেগে চার কৃষকের বাড়ির অন্তত ১০টি ঘরসহ মালামাল পুড়ে যায়।
সেখানে পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী এমদাদ আলী খসরু, সহসভাপতি শাহিন মাতুব্বর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মডেল মেঘনার পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী সমির রিমান্ডে
মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমের পূর্বপরিচিত ব্যবসায়ী মো. দেওয়ান সমিরকে চাঁদাবাজির মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। সানজানা ম্যানপাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সমির। গত বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিতর্কিত ধারায় প্রতিরোধ আটকাদেশে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি কাশিমপুর-২ নম্বর কারাগারে আছেন। বুধবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছেড়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। আটকের সময় রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মেঘনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্য বিদায় নেওয়া সৌদি রাষ্ট্রদূতের অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মেঘনাকে আটক করেছে পুলিশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ আসার পর এ ব্যাপারে পুলিশ পদক্ষেপ নেয়। এর পর রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার যোগাযোগ থাকার বিষয়টি জানতে পারেন গোয়েন্দারা। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে মেঘনার পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটি ব্যর্থ হলে তাঁকে আটক করা হয়। এদিকে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, নারীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে আসছেন আসামি দেওয়ান সমির। তাঁর বিরুদ্ধে সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেওয়ান সমিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত দেওয়ান সমিরকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়, আসামি গত জানুয়ারি থেকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের কাছ থেকে টাকা আদায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন হয়।
কাশিমপুর-২ কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. আল মামুন সমকালকে বলেন, প্রতিরোধমূলক আটকাদেশের বন্দিদের বিশেষ কক্ষে রাখা হয়। অন্যান্য বন্দির মতো তারা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় গোয়েন্দারা থাকেন।
নিন্দা-প্রতিবাদ
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক মেঘনা আলমের মুক্তিসহ এই আইন বিলোপের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। শনিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। কমিটির পক্ষে এই বিবৃতি পাঠান সংগঠনের সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বিবৃতিতে মেঘনা আলমের আটকের ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের স্বৈরাচারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন। অথচ এই আইন ব্যবহার করেই সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের অন্যায় আচরণ ও প্রতারণা ঢাকতে একজন নারীকে বাড়িতে হামলা করে তুলে নিয়ে একে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু গুম ও স্বেচ্ছাচারী আটকের ভিত্তি তৈরি করে নাগরিকের মানবাধিকারকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার পুনরায় ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের আনা ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ অভিযোগকে বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অবিলম্বে মেঘনা আলমের মুক্তি এবং এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারী পক্ষ। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো নারীপক্ষের আন্দোলন সম্পাদক সাফিয়া আজীম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দ্রুত এই কালো আইন বাতিল, মেঘনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। যে বা যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মেঘনা আলমের ব্যক্তিগত বিষয়কে রাষ্ট্রীয় ইস্যু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত বাহিনী কখনোই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কূটনৈতিক তোষণের যন্ত্র হতে পারে না। বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে।