বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত এক জরুরি নোটিশে কমিটি স্থগিতের কথা জানানো হয়।  

এদিকে, কমিটি স্থগিত হওয়ার খবরে মহাসড়ক ও রেললাইন অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে নিয়েছেন সিরাজগঞ্জে সংগঠনটির একটি অংশের শিক্ষার্থীরা। রাত ৮টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয় বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা প্রধান সমন্বয়ক মুনতাসীর মেহেদী।

এর আগে, নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে আজ বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে যমুনা সেতু পশ্চিম পাড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে বিকেল ৫ টা ৪৭ মিনিটে আন্দোলনকারীরা রেললাইন অবরোধ করেন। এতে যমুনা সেতু পশ্চিম পাড় সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে দুটি ট্রেন আটকা পড়ে।

আরো পড়ুন:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন 
কমিটি বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন 
কমিটি বাতিলের দাবিতে সিরাজগঞ্জে সড়ক অবরোধ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা প্রধান সমন্বয়ক মুনতাসীর মেহেদী বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি স্থগিত করা হলে রাত ৮টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।”

যমুনা সেতু পশ্চিম সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুল আলিম বলেন, “বিকেল ৫ টা ৪৭ মিনিটে স্টেশনে শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করে। এসময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ও কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন আটকা পড়ে। পরে রাত ৭ টা ৫ মিনিটে শিক্ষার্থীরা রেললাইন ছেড়ে দিলে ট্রেন দুইটি গন্তব্যে ছেড়ে যায়।”

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম জানান, “শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ কারণে মহাসড়কের দুই পাশে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে।” 

ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স র জগঞ জ জ ল সড়ক অবর ধ ক অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানে ট্রেন অপহরণে জড়িত কারা এই সশস্ত্র যোদ্ধারা

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে সাম্প্রতিক ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। মঙ্গলবার জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কোয়েটা থেকে পেশাওয়ার যাওয়ার পথে বেলুচিস্তানের একটি পাহাড়ি টানেলের কাছে সশস্ত্র বিএলএ যোদ্ধারা ট্রেনটি হাইজ্যাক করে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কয়েক ঘণ্টার সামরিক অভিযানের পর ট্রেনের ৩৪৬ যাত্রীকে উদ্ধার করে এবং ৩৩ জন হামলাকারীকে হত্যা করে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জেনারেল আহমেদ শরীফ জানায়, এই অভিযানে ২৭ জন সাধারণ নাগরিক, ট্রেনের চালক এবং একজন আধা-সামরিক বাহিনীর সেনা সদস্য নিহত হন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএলএ তাদের হামলার মাত্রা ক্রমাগত বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালে সংগঠনটি ১৫০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী ও চীনা নাগরিকদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে। তবে এই ট্রেন হাইজ্যাক ছিল সংগঠনটির অন্যতম বড় ও প্রকাশ্য হামলা।

বিএলএ কী এবং কেন এই হামলা? 

বেলুচিস্তান,পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় কিন্তু সবচেয়ে কম জনবসতিপূর্ণ প্রদেশ যা বহু বছর ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রদেশটি খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে কয়লা, সোনা, তামা ও প্রাকৃতিক গ্যাস। তবুও এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর একটি।

বিএলএ পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, যা সম্পূর্ণ স্বাধীন বেলুচিস্তান রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। সংগঠনটি ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে আত্মপ্রকাশ করে এবং ২০০০-এর দশকে তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাদের দাবি, পাকিস্তান রাষ্ট্র বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে এবং স্থানীয় জনগণকে বঞ্চিত করছে। 

বিএলএ-এর মূল দাবি ও লক্ষ্য

বিএলএ বরাবরই বলেছে যে তারা পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। যেখানে অন্যান্য বেলুচ জাতীয়তাবাদী দল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন চায় সেখানে বিএলএ সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে। 

পাকিস্তান সরকারের কাছে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন বেলুচিস্তান দাবি করে। তারা চায় পাকিস্তানের অধীন থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করতে।

প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা। সংগঠনটির মতে, বেলুচিস্তানের বিপুল খনিজ সম্পদ যেমন তামা, সোনা, গ্যাস, কয়লা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বেলুচ জনগণের হাতে থাকা উচিত।

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) ও গওয়াদার প্রকল্পের বিরোধিতা করেও তারা কাজ করছে। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের যৌথ উন্নয়ন প্রকল্প বিএলএ-এর অন্যতম প্রধান শত্রু। তারা মনে করে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে চীন ও পাকিস্তান যৌথভাবে বেলুচিস্তানের সম্পদ লুট করছে।

এবং পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ নিতেও তারা বদ্ধ পরিকর। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বহু বছর ধরে বেলুচিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে, যার ফলে অনেক বেলুচ নাগরিক নিখোঁজ বা নিহত হয়েছে। বিএলএ এই দমননীতির জবাব সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে দিচ্ছে। 

কারা দিচ্ছে বিএলএ-এর নেতৃত্ব? 

প্রথম দিকে বিএলএ-এর নেতৃত্ব ছিল বেলুচ উপজাতির মাররি গোষ্ঠীর হাতে। তবে বর্তমানে সংগঠনটি শিক্ষিত বেলুচদের নেতৃত্বে চলছে। বিএলএ বর্তমান প্রধান বশির জায়ব বালোচ। যিনি ২০১৮ সালে আসলাম বালোচ নিহত হওয়ার পর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর যার নাম জানা যায় তিনি হলেন হাম্মাল রেহান। তিনি মজিদ ব্রিগেড নামক আত্মঘাতী ইউনিটের প্রধান, যা চীনা নাগরিক ও পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা পরিচালনা করে। 
এবং রেহমান গুল যিনি বালোচ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য। রেহমান বিদ্রোহীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেন এবং তাদের আক্রমণের কৌশলগত দক্ষতা বাড়ান।

বিএলএ-এর অর্থায়নের মূলে কারা? 

বিএলএ-এর অর্থায়নের মূল উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া কঠিন হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। মাদক পাচার ও চোরাচালান, কয়লা খনির থেকে অবৈধ টোল আদায়, বিচ্ছিন্নতাবাদী বেলুচ অভিবাসীদের অনুদান, চীনা প্রকল্পের ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়।

তবে পাকিস্তান সরকার বারবার অভিযোগ করেছে যে ভারত বিএলএ-কে সমর্থন ও অর্থায়ন করে। যদিও এই দাবির পক্ষে শক্ত কোন প্রমাণ নেই।

কিভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই বিএলএ?

বিএলএ স্বাভাবিকভাবে তরুণ বেলুচদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তারা উচ্চশিক্ষিত বেলুচদের সংগঠনে যুক্ত করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানি সরকারের অব্যবস্থাপনা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বেলুচ জনগণের প্রতি বঞ্চনামূলক নিপীড়ননীতি এই সংগঠনের প্রতি বেলুচদের সমর্থন বৃদ্ধি করছে। যদিও বেলুচ নিখোঁজ ব্যক্তিদের আন্দোলনের ফলে অনেক তরুণ সশস্ত্র সংগ্রামের পথে যাচ্ছে। বিএলএ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয়ভাবে প্রচার চালায় এবং তাদের হামলার ভিডিও ও বিবৃতি প্রকাশ করে তরুণদের মধ্যে নিজেদের সংগঠনের শক্তিশালী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

কেমন হতে পারে বিএলএ-এর ভবিষ্যৎ?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএলএ বিচ্ছিন্নভাবে হামলা করেই চলেছে বাড়িয়েছে। তারা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ছাড়াও চীনা প্রকল্পগুলোকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিএলএ দমনে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে, যার ফলে সংগঠনটির অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে উঠছে। তবে, পাকিস্তান সরকারের দমনমূলক নীতি অব্যাহত থাকলে এবং বেলুচিস্তানের জনগণের জন্য প্রকৃত উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, বিএলএ-এর মতো সংগঠনের প্রতি সহানুভূতি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

বিএলএ বর্তমানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। এর আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিএলএ বিদ্রোহীরা এক বাস থামিয়ে সাতজন পাঞ্জাবি যাত্রীকে হত্যা করে। ২০২৩ সালে সংগঠনের চালানো সমন্বিত হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই জাতিগত পাঞ্জাবি ছিলেন। গত নভেম্বরে কোয়েটার প্রধান রেলস্টেশনে এক বোমা হামলার দায়ও বিএলএ স্বীকার করেছিল, যেখানে ১৪ জন সেনাসদস্যসহ মোট ২৬ জন নিহত হন। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা এখন আরও সংগঠিত ও দক্ষতার সাথে হামলা চালাচ্ছে এবং চীনা নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কঠোর অভিযানের মাধ্যমে সংগঠনটিকে নির্মূল করতে চাইছে। সেনাবাহিনীর দাবি তারা বিএলএ-এর শক্তি দুর্বল করতে সক্ষম হচ্ছে।

তবে যদি পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তানের উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা এবং বেলুচ জনগণের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে ভবিষ্যতে বিএলএ-এর মতো সংগঠন আরও শক্তিশালী হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শিশুদের জন্য ইফতারি
  • জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আত্মপ্রকাশ
  • পাকিস্তানে ট্রেন অপহরণে জড়িত কারা এই সশস্ত্র যোদ্ধা
  • পাকিস্তানে ট্রেন অপহরণে জড়িত কারা এই সশস্ত্র যোদ্ধারা
  • ঘটনায় জড়িত কারা এই সশস্ত্র বিএলএ যোদ্ধা
  • অসহায়-দুস্থ রোজাদারের জন্যই তাদের আয়োজন
  • পাবনায় ৫ বছর ধরে ইফতারি নিয়ে এতিমদের পাশে শিক্ষার্থীরা