সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়া ১১ বছরের মেয়েটিকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনে সংবেদনশীলতার অভাব ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স। মেয়েটিকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করলেও পুরো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং উপস্থাপনের কিছু ক্ষেত্রে শিশু সুরক্ষা নীতি লঙ্ঘন হয়েছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে রানা ফ্লাওয়ার্স এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোনো শিশু যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে, তখন সে নতুন কিছু শেখার সুযোগে ভরপুর এক জগতে প্রবেশ করে। এই জগতে নতুন সব সংযোগ তৈরি করার সম্ভাবনার পাশাপাশি অজানা বিপদের ঝুঁকিও থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে ১১ বছরের একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে তাকে বাড়ি থেকে অনেক দূরে উত্তরবঙ্গের একটি জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠছে—কীভাবে এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে, শিশুরা সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছে কি না এবং শিশুদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট করা হচ্ছে কি না।

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করবে, সেটা আশা করা ভুল। তাদের মস্তিষ্ক আবেগ, মনঃসামাজিক ও শারীরিক বিকাশের কাজে চলমান থাকে। তারা দুর্বল ও অসহায়। তাদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সমাজে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত সব বিষয় এখনো সুস্পষ্ট নয়। তবে এমন সংবেদনশীল ঘটনা কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে ভুক্তভোগীর মানসিক অভিঘাত থেকে বেরিয়ে আসা ও মর্যাদার বিষয়। ইউনিসেফ শিশুটিকে উদ্ধারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রচেষ্টার প্রশংসা করে। তবে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করে যেভাবে পুরো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও উপস্থাপন করা হয়েছে, সে বিষয়ে। বিশেষ করে যেখানে শিশু সুরক্ষা নীতি লঙ্ঘন হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রেও সংবেদনশীলতার অভাব দেখা দিয়েছে।

ইউনিসেফের প্রতিনিধি বলেন, এই শিশুটিকে উদ্ধারের সময় যা যা ঘটেছে, তা গভীর উদ্বেগজনক। পুলিশের মাধ্যমে সুরক্ষিত ও বেষ্টিত থাকার পরিবর্তে তাকে ক্যামেরায় সবার সামনে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা তার মানসিক অবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলেছে। শিশু আইন ২০১৩-এ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আছে, এ ধরনের ঘটনা কীভাবে সামাল দেওয়া উচিত। ধারা ৫৪ (১)–এ কন্যাশিশুদের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রোটোকলের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা আছে, এমন পরিস্থিতিতে কন্যাশিশুদের একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সংবেদনশীলভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করাতে হবে। এ সময় অবশ্যই শিশুটির আস্থাভাজন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সহায়তার জন্য তার সঙ্গে থাকবেন। এ ছাড়া ধারা ৯১–এ আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের জন্য শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আশ্চর্যজনকভাবে শিশুটির সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়। এর চেয়েও ভয়ংকর বিষয় হলো, শিশুটির পরিচয় গোপন না করে সাক্ষাৎকারটির ফুটেজ তখনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা হয়, যা প্রমাণ করে যে আইন মানা হয়নি।

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এই অনৈতিক পোস্টগুলো অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা উচিত ছিল। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো এই ভিডিওগুলো পরবর্তী সময়ে অনেক মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও ব্যবহার করতে দেখা গেছে, যদিও এই সংবাদমাধ্যমগুলো এমন সংবেদনশীল ও নাজুক ঘটনা নিয়ে খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য গোপন রাখার আইন সম্পর্কে অবহিত। সংবাদমাধ্যম এমন বেশ কিছু ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বারবার শেয়ার করেছে। এর চেয়েও ভয়ের বিষয় হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের বর্ণনায় প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষকে শিশুটির ‘বয়ফ্রেন্ড বা প্রেমিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এভাবে একটি বিপজ্জনক ও ভুল ব্যাখ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘আমাদের সবার পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত যে এই শিশুটি ভুক্তভোগী। তাকে আমাদের দোষারোপ করা বা তার ঘটনা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। তার প্রয়োজন সুরক্ষা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং নিজেকে সামলে নেওয়ার সুযোগ ও সহায়তা। সে নিতান্তই ১১ বছরের শিশু। সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে মানসিকভাবে সক্ষম নয়। আর কোনো প্রাপ্তবয়স্কের কখনোই কোনো শিশুর বিশ্বাস, কৌতূহল বা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে শোষণ করা উচিত নয়।’

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ১১ বছর বয়সী শিশুটির এখন যা দরকার, তা হলো মানসিক ক্ষত থেকে সেরে ওঠার সময়, সুযোগ ও পরিবেশ। এটা তখনই সম্ভব যখন কর্তৃপক্ষ, সংবাদমাধ্যমসহ সবাই তার গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে সম্মান করবে। এমন একটি সমাজ গড়ে উঠুক, যেখানে প্রতিটি শিশু সুরক্ষিত থাকে, মূল্যায়িত হয়, সম্মানিত বোধ করে এবং ভয় বা ক্ষতি ছাড়াই বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১১ বছরের শিশু ‘নিখোঁজ’, থানায় জিডিমোহাম্মদপুর থেকে ‘নিখোঁজ’ শিশুটির সন্ধান পেয়েছে পুলিশমোহাম্মদপুর থেকে ‘নিখোঁজ’ শিশুটি উদ্ধার হয়ে এখন র‍্যাবের হেফাজতে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র স ব দনশ ল ১১ বছর র একজন প র পর স থ ত ইউন স ফ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পাবনায় পৃথক ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ২

পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় পৃথক ঘটনায় ট্রেন দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন নারী, অপরজন বৃদ্ধ।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাত ও বুধবার (১২ মার্চ) সকালে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন- পাবনার ফরিদপুর উপজেলার চিথুলিয়া কান্দাপাড়া গ্রামের নায়েব আলীর স্ত্রী মজিরন খাতুন (৪০)। নিহত অপর বৃদ্ধ (৭০) এর নাম পরিচয় জানা যায়নি।

সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল উদ্দিন দুইজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে মজিরন খাতুন নিজ বাড়ি থেকে পার্শ্ববতী চাটমোহরে বাবার বাড়ির যাচ্ছিলেন। তিনি ভাঙ্গুড়া রেলগেট থেকে রেললাইনের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে সাড়ে ৭টার দিকে সিরাজগঞ্জগামী একটি মালবাহী ট্রেনে কাটা পড়ে তার দুটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ট্রেন আসার শব্দ তিনি টের পাননি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, পাবনার চাটমোহরে রেললাইনের পাশ থেকে এক অজ্ঞাত বৃদ্ধের মরদেহ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের ধারণা, ট্রেনের ধাক্কায় তিনি নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার ডিবিগ্রাম মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয়রা লাশ দেখতে পেয়ে রেলওয়ে পুলিশকে খবর দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত একটার দিকে রেললাইনের ওপর দিয়ে তিনি হাঁটছিলেন। এসময় একটি দ্রুতগামী ট্রেন তাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিকে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে ধারণা করছে এলাকাবাসী।

তবে তার নাম পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৭০ বছর হবে। পরনে ছিল প্যান্ট ও জামা।

সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বুধবার সকালে মালবাহী ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে নারী নিহত হন। রেলওয়ে কন্ট্রোল-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে সকালে চাটমোহরে ফোর্স পাঠিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত বৃদ্ধের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে নিহত দুইজনের লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।’’

ঢাকা/শাহীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা শিবিরে যাচ্ছেন আজ
  • বাড়ি তো নয়, যেন উদ্যান
  • সাত বছর ধরে হাতে লিখে পত্রিকা বের করছেন একজন দিনমজুর 
  • অস্ত্রধারীরা যাত্রীদের দলে দলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করছিল: প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
  • কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি-সদস্যদের সম্মানী বন্ধ, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর
  • সব প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি
  • বাংলাদেশ সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মতো শিল্পপতিদেরই চায়
  • আলোচনার মধ্যেই ইসরায়েলের হামলা জোরদার
  • বাবা-মা সন্তানের বন্ধু হতে পারেন না: অভিষেক
  • পাবনায় পৃথক ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ২