বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ দুজনের চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন
Published: 10th, February 2025 GMT
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই বিকেল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছিল। প্রতিদিনের মতো জুরাইনে ইট ভাঙার কাজ শেষ করে যাত্রবাড়ীর বাসায় ফিরছিলেন দুই সন্তানের মা পারভীন। সেখানে আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ এক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে পারভীনের বাঁ চোখে গুলি লেগেছিল।
বরিশালের হাতেম আলী কলেজে আন্দোলন করতে গিয়ে ৪ আগস্ট ডান চোখসহ শরীরের তিন জায়গায় গুলি লেগেছিল শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামের। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চলছিল তাঁরও।
কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পারভীন ও তরিকুল দুজনেই এক চোখ প্রায় হারাতেই বসেছিলেন। তবে গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর গ্রিন রোডের ভিশন আই হাসপাতালে সফলভাবে দুজনের চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে পারভীন ও তরিকুলের চোখের ব্যান্ডেজ খোলেন চিকিৎসকেরা। এই প্রতিবেদক তখন সেখানেই ছিলেন। পারভীন ও তরিকুল ক্ষতিগ্রস্ত চোখ দিয়ে এখন কিছুটা দেখতে পাচ্ছেন। চিকিৎসা শেষে ও বিশ্রামের পর তাঁদের দৃষ্টি অনেকটাই ফিরে আসতে পারে বলে আশা করছেন চিকিৎসকেরা।
আজ বিকেলে চোখের ব্যান্ডেজ খোলার পর পারভীন তাঁর চোখে গুলি লাগার ঘটনাটি সবিস্তার বললেন। লক্ষ্মীপুরের মেয়ে পারভীনের বয়স ৩০ বছর। তাঁর দুই ছেলে ৯ বছর বয়সী ইব্রাহিম ও ৪ বছরের ইয়াসিন। স্বামী–সন্তান নিয়ে যাত্রবাড়ী এলাকায় থাকেন তিনি।
পারভীন বললেন, ১৮ জুলাই জুরাইনে কাজ শেষ করে বিকেলে বাসায় ফিরছিলেন। জুরাইনের ব্রিজের নিচে এসে দেখেন, রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে। পরে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত হাঁটেন। সেখানেও প্রতিবন্ধকতা দেখে যাত্রাবাড়ীর দিকে মোড় নেন। যাত্রবাড়ী গিয়ে দেখেন, কেউ মারা গেছেন, কারও হাত নেই, কারও পা নেই। রাস্তায় রক্ত আর রক্ত। এ সময় রাস্তার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকা এক ছাত্রকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ সমানে গুলি করতে থাকে। এতে ওই ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। একটি গুলি লাগে তাঁর নিজের চোখে। ছাত্রটি তাঁর কোলেই মারা যায় বলে তিনি জানান।
ওই ঘটনার কথা মনে হলে এখনো ঘুমাতে পারেন না পারভীন। আক্ষেপ করে বললেন, ‘ঢাকা শহর আইছিলাম অনেক স্বপ্ন লইয়া। আইয়া তো চোখই হারাইয়া ফালাইলাম। ভিশন আই হাসপাতাল থেকা কয়েকজনে মিল্লা আমারে একটা চোখ দান করছে। আল্লাহ যেন তাদের ভালো করে।’
চোখের ব্যান্ডেজ খোলার পর তরিকুলের চোখ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা বর্ষবরণ
উৎসব মুখর পরিবেশে খুলনায় সোমবার বাংলা নববর্ষ বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী সকাল ৭টায় সার্কিট হাউজ সংলগ্ন টেনিস কমপ্লেক্সে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ছিল গান, নাচ, আবৃত্তি ও শোভাযাত্রা। অনুষ্ঠানে যোগ দেন সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
খুলনা জেলা প্রশাসন সকাল ৮টায় রেলওয়ে স্টেশন থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রাটি শহীদ হাদিস পার্কে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল সোয়া ৭টায় বর্ষ আবাহন, সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় মাঠে মেলার উদ্বোধন, সকাল ১০টায় শোভাযাত্রা, পরে লাঠিখেলা ও ম্যাজিক শো এবং বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও আশপাশের এলাকার লোকজন জড়ো হন।
বিএনপি সকাল ৭টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্তা উৎসব ও ১০টায় র্যালির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন সহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নগরীর পার্ক, নদীর ঘাটসহ বিনোদন স্পটগুলোতে দিনভর ছিল তরুণ-তরুণীদের উপচেপড়া ভিড়।