অব্যবস্থাপনার বড় দৃষ্টান্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: পরিবেশ উপদেষ্টা
Published: 10th, February 2025 GMT
দেশে অব্যবস্থাপনার একটি বড় দৃষ্টান্ত হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। গত ৫৩ বছরে গড়ে ওঠা এই সমস্যার সমাধান দেড় বছরের সরকারের কাছে চাওয়াটা একটু বেশি হলেও যৌক্তিক ও যথার্থ। তবে এই চাওয়ার সঙ্গে পাওয়া মেলাতে সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু সেই সময় কি এই সরকারের আছে?
‘উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ অধিকারকেন্দ্রিক সংস্কার’ শীষ৴ক এক নাগরিক সংলাপে এ কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সাভি৴সেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অল্প সময়ে আমরা যা করতে পারি, তা হচ্ছে খুব ভালো ও শক্তিশালী কিছু আইন তৈরি করে দিতে পারি; যা শুধু কাগজে–কলমে নয়, সামগ্রিকভাবে মানুষের আচরণ এবং মনস্তাস্ত্বিক পরিবত৴নেও ভূমিকা রাখবে। বত৴মানে আমরা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু—এই চারটি দূষিত নদী বাঁচানোর একটি পরিকল্পনা করছি। এটাও অনেক লম্বা সময়ের কাজ। নদী হোক কিংবা সমাজ, পরিষ্কার করার জন্য সময়টুকু আমাদের দিতে হবে।’
নাগরিক সংলাপের ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, দেশে প্রতিদিন আনুমানিক ২৫ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রতিদিনের এই বর্জ্যের ৫৫ ভাগই সঠিক ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে যায়। এগুলো থেকে নির্গত হয় ক্ষতিকর গ্যাস। এতে দূষিত হয় বাতাস। দূষিত হয় মাটি ও পানিও।
ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বত৴মান পরিস্থিতি তুলে ধরেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মাহাবুবুর রহমান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমাদের ল্যান্ডফিল্ডগুলোর ৮০ ভাগই ময়লা (বর্জ্য) দিয়ে ভরাট হয়ে আছে। আর সাত–আট বছর পরেই সেগুলোতে আর জায়গা থাকবে না। তাই আমাদের নাগরিক পর্যায় থেকেই সচেতনতা দরকার। গৃহস্থালির ময়লাগুলো পচনশীল ও অপচনশীল—এই দুই ভাগে আলাদা করা ছাড়াও প্লাস্টিক বজে৴৵র পুনর্ব৵হার নিশ্চিত করতে হবে।’
দেশের পৌরসভা ও নগর পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) সিনিয়র একাডেমিক কো–অর্ডিনেটর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। সমাধান নিয়ে তিনি বলেন, জৈব-অজৈব, চিকিৎসা, প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রনিক, ইত্যাদি বর্জ্য আলাদাভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এতে কাজ সহজ হবে, ল্যান্ডফিল্ডের ওপর চাপ কমবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস হাসানুল বান্না বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ আছে। পরিবেশ আদালত আইন আছে, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা আছে। এই আইনগুলোর আওতায় বত৴মানে মোট ১০২টি মামলা চলছে। তিনি বলেন, এত মামলা; কিন্তু কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আজ পয৴ন্ত হয়নি। তাই যথাযথ আইন তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ‘সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তখনই সম্ভব হবে, যখন নাগরিক হিসেবে আমরা সচেতন হব। আর আইন তৈরির পাশাপাশি সরকারই পারে জনসচেতনতা তৈরি করতে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জাতিসংঘ মহাসচিব, ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক আজ
চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে তিনি ঢাকা আসেন। এ সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ সকালে বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এ বৈঠকে গুরুত্ব পাবে অন্তর্বর্তী সরকারের গণতন্ত্রে উত্তরণ, রোহিঙ্গা ইস্যু ও মানবাধিকার।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরটিকে ভিভিআইপি হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। আজ সকালে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ মহাসচিবের অবস্থানরত হোটেলে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এর পর ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন গুতেরেস। বৈঠক শেষে ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টাও তাঁর সফরসঙ্গী হবেন। সেখান থেকে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাংলাদেশে কাজ করা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্রিফ করবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন তিনি। রাতেই কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব।
আগামীকাল শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে যাবেন আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে জাতিসংঘের সব কর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এর পর সেখান থেকে দুপুরে হোটেলে ফিরে তিনি গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন এবং বাংলাদেশের যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এ দিন বিকেলে একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিং হওয়ার কথা রয়েছে। আর সন্ধ্যায় আন্তোনিও গুতেরেসের সৌজন্যে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামী রোববার সকালে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর প্রসঙ্গে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফর রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ বিভিন্ন সরকারের সময়ে বাংলাদেশিদের পাশে থেকেছে। ফলে জাতিসংঘের সহযোগিতা ও সংহতি চলবে। কী
ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হবে এবং অগ্রাধিকার বিষয়গুলো কী, তা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা আগামীতে নির্বাচিত সরকার জাতিসংঘকে জানাবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
কক্সবাজারজুড়ে নিরাপত্তা বলয় কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর নিয়ে কক্সবাজারজুড়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।
এ ছাড়া উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্ধিত ২০ নম্বর এলাকার একটি মাঠ তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের বসানোর জন্য। এই মাঠেই লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন ড. ইউনূস ও আন্তোনিও গুতেরেস। মাঠটির পাশেই আরেকটি অংশে তৈরি করা হয়েছে হেলিপ্যাড, যার কাছে একটি সেন্টারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও নারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দু’জন।
পাশাপাশি ১৮ নম্বর ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক স্মৃতি কেন্দ্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সেবা এবং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তাই এসব স্থানের যাতায়াতের রাস্তাগুলো করা হয়েছে মেরামত, বসানো হয়েছে নতুন ইট। একই সঙ্গে নতুন করে সেজেছে পরিদর্শনের স্থানগুলো।
আশ্রয় শিবিরে কার্যক্রমগুলোর তত্ত্বাবধান করছে সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে রয়েছে পুলিশ, এপিবিএন, জেলা প্রশাসন এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখছে পুলিশ। এসএসএফ কক্সবাজারে চলে এসেছে, তারা সব বিষয় সমন্বয় করছে। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।