নারীদের সমমজুরি ও ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির দাবিতে সমাবেশ
Published: 10th, February 2025 GMT
সরকারি নারী কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকলেও শ্রমজীবী নারীরা তা পান না। ফলে শ্রমজীবী নারীরা মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন।
‘ক্ষুব্ধ নারীসমাজ’–এর ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ বিষয় তুলে ধরে শ্রম আইনে নারীর ন্যায্য অধিকার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। সোমবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
২০২৩ সালের নভেম্বরে শ্রম আইনের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩’ পাস হয়। বিলে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১১২ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন (চার মাস) করার প্রস্তাব করা হয়। তবে ওই বিল এখনো কার্যকর হয়নি।
আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে শ্রম ভবনে ‘শ্রম আইন ২০০৬’ সংশোধন–সংক্রান্ত সরকার–মালিক–শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় কমিটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিনসহ অন্যান্য সংশোধন বিষয়ে আলোচনা হবে।
সোমবার ‘ক্ষুব্ধ নারী সমাজ’–এর সমাবেশে সরকারী কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে মিলিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করার দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার পরিচালক সীমা দাস সীমু। তিনি ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে নারী-পুরুষের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা, অপ্রাতিষ্ঠানিক-প্রাতিষ্ঠানিক সব নারী-পুরুষ শ্রমিককে আইনে স্বীকৃতি দেওয়া, শ্রমজীবী–পেশাজীবী সব নারীর জন্য ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া, প্রসূতি–সুবিধায় গণনায় প্রতি মাসে সর্বমোট প্রাপ্তিকে হিসেবে নেওয়া, কারখানা-কর্মস্থলে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও অভিযোগ সেলের বাস্তবায়ন, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের শর্ত শিথিল করে মতপ্রকাশের অধিকার বাস্তবায়ন, কারখানা–কর্মস্থলে কার্যকর শিশু দিবাযত্নের সুবিধা ও কমিউনিটিতে স্বল্পমূল্যে ও ভর্তুকিতে খাবারের ক্যানটিন ও লন্ড্রি স্থাপন করা, কৃষি ও মৎস্যজীবী শ্রমিক হিসেবে নারীকে স্বীকৃতি দেওয়া, গৃহশ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন করা, যৌনজীবীদের ওপর হয়রানি বন্ধ ও তাঁদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিতে আইন করা, প্রবাসী নারী শ্রমিকের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নেওয়া এবং শ্রমবাজারের অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা।
গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান ও শ্রম কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকের জান–জীবিকা ও জবানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সামনে যে আইন হতে যাচ্ছে, তাতে নারী শ্রমিকের অধিকার যেন নিশ্চিত হয়। ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি, যৌন হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
নারীপক্ষের সদস্য রওশন আরা বলেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক নয়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরও শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস্) পরিচালক কোহিনুর মাহমুদ বলেন, শ্রমে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। যে শ্রম আইন হচ্ছে, তাতে নারীর অনেক বক্তব্য মেনে নেওয়া হচ্ছে না। নারীর জন্য একটি বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ জরুরি।
সাংস্কৃতিক কর্মী লায়েকা বশির বলেন, এখনো নারীকে নারীর অধিকারের কথা বলতে হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস হয়ে গেছে, এখনো নারীদের দাবি নিয়ে একত্র হতে হচ্ছে। অথচ বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দায় শুধু নারীর নয়। যেসব দাবি করা হয়েছে, তা যৌক্তিক।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ। এ সময় আরও বক্তব্য দেন নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়রা নূর, নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল, শৈশবের প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা মান্নান, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন ও ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের সভাপতি সুলতানা বেগম প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ, নগর হিসেবে তৃতীয় ঢাকা
বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ নগর ছিল ঢাকা। আগের বছর (২০২৩) এ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল আর নগর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এবার বায়ুদুষণে শীর্ষ দেশটি হলো আফ্রিকার দেশ চাদ। আর নগর হিসেবে শীর্ষে আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি।
আজ মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৪’–এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক আইকিউএয়ারের সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান পিএম ২.৫ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান ধরেই এই বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। আর গত বছর তা ছিল ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম।
এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত ১৫ গুণ বেশি।
দেশের নিরিখে বাংলাদেশের পরই আছে পাকিস্তান। দেশটির বায়ুতে ২০২৩ সালে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ছিল ৭৩ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক গবেষণা করে। ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার আজ এই প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দেশ হিসেবে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ যে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান পেল, এটা আমাদের জন্য মোটেও ভালো সংবাদ নয়। দেখা যাচ্ছে গত বছরের চেয়ে আমরা তেমন কোনো উন্নতি করতে পারিনি। এ প্রতিবেদন ২০২৪ সালের পরিস্থিতি নিয়ে। কিন্তু আমরা দেখেছি, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস আগের নয় বছরে চেয়ে বেশি দূষিত ছিল। চলতি বছরে বায়ুদূষণ আরও বেড়ে যাচ্ছে।
২০২২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের দূষিত বাতাসের দেশের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে ছিল এবং ভারতের অবস্থান ছিল অষ্টম। আর ২০২২ সালে বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ছিল ৬৫ দশমিক ৮।
নগর হিসেবে দূষণের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। এ নগরের বায়ুতে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। ২০২৩ সালে এর পরিমান ছিল ৮০ দশমিক ২ মাইক্রোগ্রাম। আর এ তালিকায় শীর্ষে থাকা নয়াদিল্লির বাতাসে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ৯১ দশমিক ৮। ২০২৩ সালে তা ছিল ৯২ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ সর্বোচ্চ দূষিত এ নগরীরও বায়ুর মান কিছুটা হলেও উন্নত হয়েছে।
১৩৮টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজার নজরদারি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইকিউএয়ার প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।