মৌলভীবাজারে সন্ধান মিলেছে ১১৬ বয়সী রুখমিনিয়া পাশী নামে এক নারীর। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তার বয়স এখন ১১৬ বছর ৪ মাস ১ দিন। তবে তার থেকে বেশি বয়স্ক নারীর নাম সিসটার ইনা ক্যানাবারো লুকাস। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলের এই নারীর বয়স ১১৬ বছর ২১০ দিন।  

জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্ষেপে এনআইডি কার্ড হলো বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক নথি, যা বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া যেকোনো মানুষ পাওয়ার অধিকারী। তবে এই পরিচয়পত্রে অনেকসময় বড় ধরনের ভুল ধরা পড়ে। বয়স ও নামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুল পাওয়া যায়। বিশেষ করে অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে যার বয়স ৩০ তাকে ৬০ বছর বয়সী হিসেবে দেখানো হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে মায়ের চেয়ে সন্তানের বয়স বেশি দেখা গেছে জাতীয় পরিচয়পত্রে। স্বজনদের দাবি, রুখমিনিয়ার বয়স জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকই আছে।   

রুখমিনিয়ার বাড়ি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের রাজনগর চা বাগানের রাউবাড়ি এলাকায়। 

রাউবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০০ বছর আগে রুখমিনিয়া পাশীর পূর্ব পুরুষ ভারতের উত্তর প্রদেশের বিহার থেকে মৌলভীবাজার সদর ইউনিয়নের গিয়াসনগর চা বাগানে আসেন। তারা সেখানে চা শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। রুখমিনিয়ার বাবা হরিদেও সেখানেই থাকতেন। রাজনগর উপজেলার একটি চা বাগানের শ্রমিক ভগবান দাস পাশীর সঙ্গে রুখমিনিয়ার বিয়ে হয়। এরপর তারা রাজনগর চা বাগানের রাউবাড়ি এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন।

জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায়, রুখমিনিয়ার জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ৯ অক্টোবর ১৯০৮। স্বামীর নাম ভগবান পাশী। মায়ের নাম ধনেশ্বরী পাশী। ভোটার আইডি নম্বর ৫৮১৮০৭৩৪০৩৮৬৩। জাতীয় পরিচয়পত্রের হিসেবে তার বয়স এখন ১১৬ বছর ৪ মাস ১ দিন।

রুখমিনিয়া বাংলা ভাষায় ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। বয়সের ভাড়ে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন। কানেও কম শোনেন। কথা হলে, তিনি নিজস্ব ভাষায় জানান, ব্রিটিশ আমলে চা চাষের জন্য তার বাপ-দাদারা এখানে আসেন। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে তার। বিয়ের পর সোনাতুলা (রাজনগরের সাবেক নাম) চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খবরও শুনেছেন তিনি।

রুখমিনিয়ার ছেলে হেমন্ত পাশীর বয়স এখন ৬২ বছর। তিনি বলেন, ‍“আমার মার অনেক বয়স হয়েছে। তিনি এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন। বার্ধক‍্যজনিত কারণে অনেক ভেঙে পড়েছেন। আমরা ঠিকমতো তার সেবা যত্ন করি। আমার মায়ের বয়স ১১৬ বছর এখন।”

রাজনগর উপজেলার টেংরা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উমেষ যাদব বলেন, “ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে গিয়ে আমি প্রথমে কর্তন ফরম বের করি তার নাম কাটার জন্য। পরে দেখলাম বেঁচে আছেন তিনি। বয়স্ক এই নারীকে দেখে আমি অবাক হয়েছি। দেখেই অনুমান করা যায় রুখমিনিয়া অতি প্রবীণ একজন মানুষ। গিনেস বুকে তার নাম (রুখমিনিয়া পাশী) পাঠানো উচিত। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি চা বাগান কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসতে পারেন।”

রাজনগর চা বাগানের রাউবাড়ি এলাকার ৭৫ বছর বয়সী কপিল পাশি বলেন, “আমরা ছোট থেকেই রুখমিনিয়াকে বয়স্ক নারী হিসেবে দেখছি। তার বয়স কম হলেও ১১২ বছর হবে। অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স ও নাম ভুল থাকে। যাছাই করলে বিষয়টি জানা যাবে।”

একই এলাকার ৭০ বয়সী নারী শ্রীপাতি পাশি বলেন, “ব্রিটিশ আমলে রুখমিনিয়ার বিয়ে হয়েছে। শারীরিক গঠন ভালো থাকায় তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তার অসংখ্য নাতি-নাতনীও আছে।”

টেংরা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাম দুলারী নুনিয়া বলেন, “রুখমিনিয়াকে দেখতে অনেক বয়স্ক মনে হয়। এলাকার সবাই তাকে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হিসেবেই জানেন।”

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, “আমরা তদন্ত করে বিষয়টি দেখব। তার (রুখমিনিয়া) কাছে ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া আর কোনো ডকুমেন্ট (নথি) নেই। কোনো শিক্ষাগত সনদ না থাকায় বিষয়টি যাচাই বাচাই করে দেখতে হবে। যদি তার স্বজনরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে সঠিক বয়স নির্ণয় করেন, তাহলে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানাব।”

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক র র বয়স বয়স ক ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায়, পরা যাবে না মুখোশ

আগামীকাল পয়লা বৈশাখ। চারুকলা অনুষদের আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও বের হবে শোভাযাত্রা। তবে শোভাযাত্রায় পরা যাবে না কোনো ধরনের মুখোশ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সঙ্গে নিতে হবে পরিচয়পত্র। 

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' শুরু হবে। 

রবিবার(১৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সব জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে।

বিজ্ঞপ্তির বর্ণনায় বলা হয়, সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। শেষ প্রান্ত দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪ এর চেতনাকে ধারণ করে আরো বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এবছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিবৃন্দ অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এ বছর থাকবে ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, পয়লা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ থেকে প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট,  চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেইট এবং বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

শৃঙ্খলা বজায়ের স্বার্থে যানবাহন সম্পর্কিত নির্দেশনা দেওয়া  হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষে সব ধরনের অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। 

নববর্ষ উপলক্ষে আজ ১৩ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোন ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।

নববর্ষ উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। 

গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পয়লা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এ কর্মসূচি। তবে বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভযাত্রা’ নামটি এবারের আয়োজনে থাকছে না। এই শোভাযাত্রার নাম থেকে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন নামকরণ হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।

ঢাকা/সৌরভ/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায়, পরা যাবে না মুখোশ