এনআইডিতে বয়স ১১৬ বছর, ইনি কি হচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী?
Published: 10th, February 2025 GMT
মৌলভীবাজারে সন্ধান মিলেছে ১১৬ বয়সী রুখমিনিয়া পাশী নামে এক নারীর। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তার বয়স এখন ১১৬ বছর ৪ মাস ১ দিন। তবে তার থেকে বেশি বয়স্ক নারীর নাম সিসটার ইনা ক্যানাবারো লুকাস। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলের এই নারীর বয়স ১১৬ বছর ২১০ দিন।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্ষেপে এনআইডি কার্ড হলো বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক নথি, যা বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া যেকোনো মানুষ পাওয়ার অধিকারী। তবে এই পরিচয়পত্রে অনেকসময় বড় ধরনের ভুল ধরা পড়ে। বয়স ও নামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুল পাওয়া যায়। বিশেষ করে অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে যার বয়স ৩০ তাকে ৬০ বছর বয়সী হিসেবে দেখানো হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে মায়ের চেয়ে সন্তানের বয়স বেশি দেখা গেছে জাতীয় পরিচয়পত্রে। স্বজনদের দাবি, রুখমিনিয়ার বয়স জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকই আছে।
রুখমিনিয়ার বাড়ি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের রাজনগর চা বাগানের রাউবাড়ি এলাকায়।
রাউবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০০ বছর আগে রুখমিনিয়া পাশীর পূর্ব পুরুষ ভারতের উত্তর প্রদেশের বিহার থেকে মৌলভীবাজার সদর ইউনিয়নের গিয়াসনগর চা বাগানে আসেন। তারা সেখানে চা শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। রুখমিনিয়ার বাবা হরিদেও সেখানেই থাকতেন। রাজনগর উপজেলার একটি চা বাগানের শ্রমিক ভগবান দাস পাশীর সঙ্গে রুখমিনিয়ার বিয়ে হয়। এরপর তারা রাজনগর চা বাগানের রাউবাড়ি এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায়, রুখমিনিয়ার জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ৯ অক্টোবর ১৯০৮। স্বামীর নাম ভগবান পাশী। মায়ের নাম ধনেশ্বরী পাশী। ভোটার আইডি নম্বর ৫৮১৮০৭৩৪০৩৮৬৩। জাতীয় পরিচয়পত্রের হিসেবে তার বয়স এখন ১১৬ বছর ৪ মাস ১ দিন।
রুখমিনিয়া বাংলা ভাষায় ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। বয়সের ভাড়ে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন। কানেও কম শোনেন। কথা হলে, তিনি নিজস্ব ভাষায় জানান, ব্রিটিশ আমলে চা চাষের জন্য তার বাপ-দাদারা এখানে আসেন। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে তার। বিয়ের পর সোনাতুলা (রাজনগরের সাবেক নাম) চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খবরও শুনেছেন তিনি।
রুখমিনিয়ার ছেলে হেমন্ত পাশীর বয়স এখন ৬২ বছর। তিনি বলেন, “আমার মার অনেক বয়স হয়েছে। তিনি এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে অনেক ভেঙে পড়েছেন। আমরা ঠিকমতো তার সেবা যত্ন করি। আমার মায়ের বয়স ১১৬ বছর এখন।”
রাজনগর উপজেলার টেংরা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উমেষ যাদব বলেন, “ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে গিয়ে আমি প্রথমে কর্তন ফরম বের করি তার নাম কাটার জন্য। পরে দেখলাম বেঁচে আছেন তিনি। বয়স্ক এই নারীকে দেখে আমি অবাক হয়েছি। দেখেই অনুমান করা যায় রুখমিনিয়া অতি প্রবীণ একজন মানুষ। গিনেস বুকে তার নাম (রুখমিনিয়া পাশী) পাঠানো উচিত। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি চা বাগান কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসতে পারেন।”
রাজনগর চা বাগানের রাউবাড়ি এলাকার ৭৫ বছর বয়সী কপিল পাশি বলেন, “আমরা ছোট থেকেই রুখমিনিয়াকে বয়স্ক নারী হিসেবে দেখছি। তার বয়স কম হলেও ১১২ বছর হবে। অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স ও নাম ভুল থাকে। যাছাই করলে বিষয়টি জানা যাবে।”
একই এলাকার ৭০ বয়সী নারী শ্রীপাতি পাশি বলেন, “ব্রিটিশ আমলে রুখমিনিয়ার বিয়ে হয়েছে। শারীরিক গঠন ভালো থাকায় তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তার অসংখ্য নাতি-নাতনীও আছে।”
টেংরা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাম দুলারী নুনিয়া বলেন, “রুখমিনিয়াকে দেখতে অনেক বয়স্ক মনে হয়। এলাকার সবাই তাকে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হিসেবেই জানেন।”
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, “আমরা তদন্ত করে বিষয়টি দেখব। তার (রুখমিনিয়া) কাছে ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া আর কোনো ডকুমেন্ট (নথি) নেই। কোনো শিক্ষাগত সনদ না থাকায় বিষয়টি যাচাই বাচাই করে দেখতে হবে। যদি তার স্বজনরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে সঠিক বয়স নির্ণয় করেন, তাহলে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানাব।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক র র বয়স বয়স ক ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
নাগরিকদের উপাত্তের সংরক্ষণ ও সুরক্ষা দেওয়া ইসির কাজ নয়: ফয়েজ আহমদ
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নাগরিকের যে উপাত্ত আছে, তা মানসম্মত নয়। এমনকি নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণ ও সুরক্ষা দেওয়া ইসির কাজ নয়। তবে ইসি এত দিন যে দায়িত্ব পালন করেছে, তাতে তারা প্রশংসার দাবিদার। উপাত্ত কর্তৃপক্ষের অধীনে উপাত্ত সংরক্ষণ হলেও ইসির দায়িত্ব কমবে না।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও ইসি দেশের নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণ করে না। তবে বাংলাদেশে এক ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে ইসি যে দায়িত্ব নিয়েছিল, তাতে তারা প্রশংসা প্রাপ্য। তিনি বলেন, উপাত্তের সংখ্যা না বাড়িয়ে মানের দিক থেকে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সমন্বয় বাড়াতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, বর্তমান ইসি কি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) থেকে উপাত্তকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো যোগ্য? বা তার এই দায়িত্ব হওয়া উচিত? তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ভোটাধিকার সুরক্ষা ও বাস্তবায়ন করা। নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণ ও সুরক্ষা দেওয়া ইসির কাজ নয়। উপাত্ত কর্তৃপক্ষ হলে ইসির ক্ষমতা কমবে না, বাড়বে। তারা মানসম্মত ডেটা পাবে। তাদের গুরুত্বও বাড়বে।
বাংলাদেশে এত দিনেও ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন হয়নি উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, সাবেক সরকারের সময়ে আইনের খসড়ায় উপাত্ত কর্তৃপক্ষ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয়ের কাজ একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেখে দিলে তা একটা ব্লকের মধ্যে পড়ে যায়। তার জাতীয় চরিত্র থাকে না। বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সংরক্ষণ, কার সঙ্গে কীভাবে শেয়ার করবে, তার যে নীতি থাকা দরকার ছিল, তা হয়নি। পাশাপাশি সমাজের অংশীদারদের মধ্যে যে বোঝাপড়া দরকার, তা তৈরি হয়নি।
বর্তমান সরকার একটি ডিজিটাল রূপান্তরের পথরেখা তৈরি করবে উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, তাতে বিদ্যমান সিস্টেমগুলোর মধ্যে ইন্টারকানেক্ট (ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি) করা হবে। এরপর উপাত্ত সুরক্ষা আইনের অধীনে একটি উপাত্ত কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হবে, যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হবে। তাদের বিধি মেনে সবাই কাজ করবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। উপাত্ত কর্তৃপক্ষ হলে একটি শৃঙ্খলা তৈরি হবে।
এ কাজের জন্য বিভিন্ন দেশের উদাহরণগুলো দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, যে মন্ত্রণালয় নাগরিককে সেবা দেয়, তার অধীনে ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) থাকবে। তিনি বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ৩৫ ধরনের ডেটা আছে, ভোটের জন্য কি এটার দরকার আছে? তবে বলছি না, তাদের আইটি সেল বন্ধ করে দেব। তাদের কারিগরি সক্ষমতা নিয়ে নেব। ডেটা অথরিটির মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রিত হবে। যার কাছে যেটা আছে, সেটা তো তার কাছেই থাকবে। যখন রূপান্তরের দরকার হবে, তখন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে আসবে।’
ফয়েজ আহমদ বলেন, ইসি ছাড়াও জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে নাগরিকের ডেটাবেজ আছে। কিন্তু এগুলো বছর পার হলেও এদের মধ্যে কোনো ইন্টার-অপারেবিলিটি (আন্তক্রিয়াশীলতা) নেই। মানুষের তথ্য এখন ডার্কওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সরকার নাগরিকের উপাত্তের নিরাপত্তা ও মানসম্মত করার দিকে নজর দিচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ বলেন, কেউ জন্ম নিলে তার নিবন্ধন হবে সিটি করপোরেশনে। এর বাইরে আর কোনো উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি থাকবে না। এরপর ডেটা হালনাগাদ হবে। তিনি আরও বলেন, উপাত্ত নিয়ে যে জঞ্জাল হয়েছে, তা যক্ষের ধনের মতো আঁকড়ে না ধরে সমস্যা স্বীকার করে তা সমাধানে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা ইসির কাছে রাখার দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইসি সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও সারা দেশে ইসির মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ে বেলা ১১টা থেকে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
এখন অন্তর্বর্তী সরকার জন্মনিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে স্বতন্ত্র একটি কমিশন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এনআইডি সেবা নিজেদের হাতে রাখতে কর্মসূচি পালন করছেন ইসির কর্মকর্তারা।