বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ করেছেন পদবঞ্চিতরা।

কমিটি গঠনে বৈষম্য হয়েছে দাবি করে সোমবার দিনভর ঢাকা-রাজশাহী-রংপুর মহাসড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। 

আন্দোলনে পদবঞ্চিতদের সমন্বয়ক মুন্তাসির মেহেদী হাসান বলেছেন, জেলা কমিটি গঠনের নামে বৈষম্যমূলক পকেট কমিটি করা হয়েছে। যে কারণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক প্রতিনিধিরা আন্দোলন করছেন। ইতোমধ্যে ঘোষিত কমিটি থেকে ৫৩ জন পদত্যাগ করেছেন। যার কপি দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ জেলা সদরসহ উপজেলা পর্যায়ে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখা অনেকেই কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নামে বৈষম্যের বিষয়টি আমরা অবগত করার চেষ্টা করেছি। কেউ তাতে গুরুত্ব না দেওয়ায় মহাসড়ক ব্লকেড করেছেন পদবঞ্চিতরা।

বিষয়টি নাকচ করে সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির নবনির্বাচিত আহ্বায়ক সজীব সরকার বলেন, আগামী ৬ মাসের জন্য জেলা, ৯টি উপজেলা ও থানার সমন্বয়ে জেলার আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে সব উপজেলা, থানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় ছাত্রদল ও শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্র প্রতিনিধিরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। সরকার পতনের পর সবাই যার যার সংগঠনে ফিরে গেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে দিতে চাইলে অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ নেই। যারা পদবঞ্চিত হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই দুই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তারাও কমিটিতে পদ পাননি। পাশাপাশি কিছু ছাত্র প্রতিনিধি বাদ পড়েছেন যারা উপজেলা, থানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কমিটিগুলোতে স্থান পাবেন।

ব্লকেড প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। এরপর ঘণ্টাখানেক বিরতি দিয়ে আবারো অবরোধ শুরু করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে।

প্রসঙ্গত, শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত ২৮৪ সদস্য বিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

এতে সজীব সরকারকে আহ্বায়ক, মেহেদী হাসানকে সদস্য সচিব, ইকবাল হোসেন রিপনকে মুখ্য সংগঠক ও টি এম মুশফিক সাদকে মুখপাত্র করা হয়। এরপর থেকে এ কমিটি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ স র জগঞ জ জ ল পদবঞ চ ত কর ছ ন গঠন র অবর ধ স গঠন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুষ্টিয়া বিএনপিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে আবার বিক্ষোভের ঘোষণা পদবঞ্চিতের

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা আগামী বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন।

গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তখন তিন মাসের জন্য ওই কমিটি গঠন করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমান কমিটি দ্রুত বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন পদবঞ্চিত ব্যক্তিরা।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামিমুল হাসান বলেন, ‘বর্তমান কুতুব-জাকির কমিটিকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি বললে ভুল হবে না। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। আর চলতে পারে না, পারে না, পারে না। কুষ্টিয়া বিএনপির রাজনীতিকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। ভঙ্গুর কমিটি বাতিল করতে হবে।’ তিনি ‘বিতর্কিত’ কমিটি ভেঙে যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাদের নিয়ে দ্রুত নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে পদবঞ্চিত নেতারা অভিযোগ করেন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কমিটি করা হয়েছে। বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর সার্চ কমিটি গঠনসহ যত কমিটি গঠন করেছে, সব কমিটিতে ত্যাগী বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের নেওয়া হয়েছে। এসব তাদের নিজেদের ‘পকেট কমিটি’।

জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘কুতুব-জাকিরের কমিটি ব্যর্থ কমিটি। এই কমিটির দ্বারা কুষ্টিয়া বিএনপির এক বিন্দু সাংগঠনিক কিছু হয়নি। বরং কুষ্টিয়ায় চারটি আসনে যে শক্ত অবস্থান ছিল তা ভেঙে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে চারটি আসনই হারাতে হবে।’

জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মেজবাউর রহমান বলেন, কমিটি বাতিলের দাবিতে বারবার আন্দোলন করা হচ্ছে। অভিযোগ তুলে ধরা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও জানানো হচ্ছে।

দাবি আদায়ে আগামী বুধবার বেলা ১১টায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বশিরুল আলম (চাঁদ)। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রঘোষিত এক অনুষ্ঠান কুষ্টিয়ায় হয়। সেই অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে সবাই এক কাতারে ছিলাম। বলা হয়েছিল, অনুষ্ঠানের পর পদবঞ্চিতদের পদ দেওয়া হবে। কিন্তু আর যোগাযোগ করা হচ্ছে না।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তার আগে ২০১২ সালে গঠিত কমিটিতে এই দুজন একই পদে ছিলেন। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১২ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি বাতিল করা হয়। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না। কমিটি বাতিলের দাবিতে গত ৬ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। একই দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর শহরের এনএস রোডে দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এ ছাড়া ৮ জানুয়ারি দাবি আদায়ে তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুষ্টিয়া বিএনপিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে আবার বিক্ষোভের ঘোষণা পদবঞ্চিতের