নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় এ ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় নেতাকর্মীরা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি  আনিস সিকদার, কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক তাজুল ইসলাম, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মানিক মিয়া, প্রচার সম্পাদক জসিম মিয়া, শামসুল মিয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ফরিদ মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মামুন মিয়া ও ১০নং ওয়ার্ড  জাসাসের সভাপতি জুয়েল প্রমূখ।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

সীমান্তে ‘কাট আউট’ চোরাচালান

ঈদ সামনে রেখে জয়পুরহাট সীমান্তে মাদক চোরাচালান নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ চোরাচালান নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে স্থানীয় বিএনপি নেতা মিঠু-শাহীন চক্র। এদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তপথে অবৈধ কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ দুই নেতার হয়ে সীমান্তের একাধিক পয়েন্টে সক্রিয় রয়েছে দুই শতাধিক চোরাকারবারি। প্রতি রাতে এদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মাদক দেশে ঢুকছে।
এই কাজে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাটের উচনা সীমান্তের সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় তারকাঁটা নেই। এ কারণে এলাকাটি মাদক কারবারির জন্য হটস্পট। প্রতি রাতে এই সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল, প্যান্টাডল, গাঁজা ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন বাংলাদেশে ঢুকছে। এ ছাড়া তারঘেরা কল্যাণপুর, লকমা, গলাকাটা ব্রীগ, হাটখোলা, শালুয়া, চকবরকত এলাকায় ভিন্ন উপায়ে চলছে চোরাচালান। এসব মাদক বাংলাদেশে ঢুকেই ‘কাট-আউট’ পদ্ধতিতে তিন ধাপে বিভক্ত হয়ে দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। 

বস্তায় ভরে মাদক প্রস্তুত করে ভারতীয় ডিলাররা বাংলাদেশের ডিলারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। কোন পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকবে, সেটি জানানোর পর নির্দিষ্ট সময়ে বস্তাগুলো তারকাঁটার ওপর দিয়ে ছুড়ে বাংলাদেশ অংশে ফেলা হয়। এর পর বাংলাদেশি ডিলার বাহকের মাধ্যমে সেগুলো গ্রামের একাধিক বাড়িতে রেখে দেয়। প্রতিটি দলে একজন পাইলট টর্চলাইট ও বাটন মোবাইল ফোন নিয়ে তাদের পথ দেখায়। তার পরও নিরাপত্তার স্বার্থে এসব মাদক মূল ডিলারের আরও একটি দল (হ্যান্ডলার) সেগুলো ভিন্ন জায়গায় রাতেই স্থানান্তর করে ফেলে। পরে সর্বশেষ টিম এসে মাদক চাহিদামতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়। এখানে একাধিক টিম কাজ করলেও কেউ কাউকে চেনে না। নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে তারা এই কাজটি করে।

এ ছাড়া আরেকটি কৌশল রয়েছে তাদের। মাঝরাতে বহনের সংকেত পাওয়া না গেলে সীমান্তের ধানক্ষেত বা অন্যান্য কৃষিজমির মাঝে গর্ত করে মাদক লুকিয়ে রাখা হয়। পরে সুবিধাজনক সময়ে বাহকরা তা সংগ্রহ করে। এ ছাড়া চোরাকারবারিরা খালে বাঁশের ভেলা তৈরি করে তার নিচে ফেনসিডিলের বোতল বেঁধে ভাসিয়ে দেয়, যা পরে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তুলে নেওয়া হয়। গৃহবধূ ও কিশোরীকেও এই কাজে ব্যবহার করা হয়। এরা বিশেষ পোশাকের ভেতরে ছোট ছোট প্যাকেট লুকিয়ে সীমান্ত থেকে মাদক আনে।

চক্র যাদের নিয়ন্ত্রণে 
মাদকের সবচেয়ে বড় রুট লকমা গ্রামের দুই প্রান্তে দুই গডফাদারের বাড়ি। সীমান্তঘেঁষা বাড়িতে থাকেন মিঠু চৌধুরী। তিনি আইমা ইউনিয়ন বিএনপির ১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সদস্য। 
তার সহকারী একই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলজার হোসেন। এই দু’জনের চক্রে একশর বেশি চোরাকারবারি মাদক কারবারে জড়িত। এই এলাকার আরেক বড় কারবারি হলেন বিএনপি নেতা শাহীন চৌধুরী। তার প্রধান সহযোগী একই এলাকার ইস্তামুল হোসেন। এই গ্রুপটিও শতাধিক চোরাকারবারির দল নিয়ন্ত্রণ করে। এদের সঙ্গে এপারের বিজিবি ও ওপারের বিএসএফ সদস্যের সঙ্গে রয়েছে ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’। কোন এলাকায় অভিযান চলবে, কোন রুট নিরাপদ হবে– তারা আগেভাগেই তা জানিয়ে দেন।
দেশের ইলিশ মাছ, মিষ্টি-মিঠাই খাওয়ানো থেকে শুরু করে তারা পাচার করা মাদকের নির্দিষ্ট একটি অংশের টাকা সীমান্তরক্ষীদের দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ৯টা এবং রাত ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত তারা মাদক পাচারের সুযোগ পায়। এ ছাড়া প্রতিদিন রাত ১২টায় সীমান্তে রক্ষী সেন্ট্রিদের ডিউটি বদল হয়। এই সময়টাতে মাদকের বস্তা তারকাঁটার ওপর ছুড়ে দিয়ে দেদার পাচার হয়। 

অভিযুক্তদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও কথা বলতে পারেনি সমকাল। কারণ, বেশির ভাগ সময়ই তারা ভারতীয় সিমকার্ডে হোয়াটসআপ কিংবা ইমোতে কথাবার্তা বলে। এ জন্য বাংলাদেশের কোন ফোন নেটওয়ার্কে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে আইমা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সামসুল হুদা বলেন, এরা চিহ্নিত মাদক কারবারি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তারা ‘সরকারি দল’ বনে যায়। মিঠু আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করত। তার বাবা মোখলেছুর রহমান এখনও আওয়ামী লীগ করেন। শাহীনও আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।  পট পরিবর্তনের পর তারা এখন বিএনপি বনে গেছে। তবে দু’জনই প্রভাবশালী হওয়ায় হাতেনাতে ধরা না পড়লে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া কিছুটা জটিল। 

রাতের আঁধারে মাদকের রাজত্ব 
সন্ধ্যার পর ভারত সীমান্তঘেঁষা জয়পুরহাটের আইমা ইউনিয়নের লকমা ও ধলাহার ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের চিত্র বদলে যেতে শুরু করে। গত শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, সীমান্তঘেঁষা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় সন্ধ্যার পরপরই অচেনা মানুষের আনাগোনা। এদের অনেকে কৃষক বা দিনমজুর বেশে আসছে। কেউ কেউ সাধারণ পথচারীর মতো চলাফেরা করছে। স্থানীয় এক তরুণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এরাই ভারী (মাদক বহনকারী)। রাতে দেশি অস্ত্র নিয়ে এরা সীমান্তে ছড়িয়ে পড়ে। সিগন্যাল মিললে মাদকের বস্তা ঘাড়ে নিয়ে আশপাশের গ্রামে রাখে। প্রতিটি বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ বোতল পর্যন্ত ফেনসিডিল থাকে। এ জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পায় তারা। বোতলগুলো প্লাস্টিকের হওয়ায় বহনে সুবিধা হয়। সঙ্গে অস্ত্র রাখার উদ্দেশ্য হলো ছোটখাটো যে কোনো বাধা তারাই নিজেরাই মোকাবিলা করবে।’
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর থানার শেষ সীমানা ধলাহারের কল্যাণপুর এবং পাঁচবিবি থানার লকমা গ্রামের নির্দিষ্ট রুটে কিছু মোটরসাইকেল এবং পায়ে চলা দল সক্রিয় হয়ে ওঠে। জানা যায়, এই মোটরসাইকেল আরোহীদের কাজ মূলত পণ্য (মাদক) বহন করা, যা ভারতীয় অংশ থেকে চোরাচালান হয়ে আসে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমরা জানি কখন কী হচ্ছে। কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই। এখানে যারা কাজ করে, তারা সবাই প্রভাবশালী লোকজনের সঙ্গে জড়িত।

সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, লকমার শেষ প্রান্ত থেকে সীমান্তের বেড়া মাত্র ১ মিনিটের হাঁটাপথ। মাঝে প্রতিবন্ধক ছোট একটি খাল। রাতের অন্ধকারে এই খালপথে কিছু ব্যক্তিকে গোপনে কিছু একটা আনতে দেখা যায়। তারা বাঁশের ভেলা ব্যবহার করছিল। রাত পৌনে ৩টার সময় বিজিবির টহল কিছু কিছু জায়গায় থাকলেও তারা চোরাকারবারিদের খোঁজার চেষ্টা করছে বলে মনে হয়নি। জঙ্গলে ঘেরা বিকল্প রুট ব্যবহার করে সেই ভারী বাহিনীর কাঁধে চেপে পার হয়ে যায় শত শত বস্তা মাদক। স্থানীয় এক দোকানি বলেন, বিজিবি টহল দিলেও সেই জায়গার তথ্য চোরাকারবারিরা আগেভাগেই পেয়ে যায়। তাই কিছুই ধরা পড়ে না।

ঈদের বিশেষ মিশনে ২০০ চোরাকারবারি মাঠে 
সিন্ডিকেটের পরিকল্পনায় রয়েছে, ঈদের আগে মাদকের বিশাল চালান দেশে ঢোকানোর। এ জন্য তারা বিশেষ ‘মিশন’ পরিচালনা করছে, যেখানে দুই শতাধিক চোরাকারবারিকে জড়ো করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, ঈদের সময়টা আমাদের জন্য বড় ব্যবসার সুযোগ। এবার অন্তত ২০০ জন নিযুক্ত হয়েছে। সীমান্তের বেশ কিছু জায়গায় নতুন রুট তৈরি করা হয়েছে, যাতে ধরা পড়ার ঝুঁকি কম থাকে।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট ২০ বিজিবি কমান্ডার লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, আমরা সব সময়ই মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। নিয়মিত অভিযান হচ্ছে, সীমান্তে কড়া পাহারা চলছে। বিভিন্ন সময় বিজিবি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। এই অভিযান ঈদের আগে আরও জোরদার হবে।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার ওসি মইনুল হাসান বলেন, চিহ্নিত মাদক কারবারিসহ তাদের সহযোগীর তালিকা তৈরি করছি। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করা হবে। যাতে কোনো মাদক পাচার না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ