জনপ্রশাসনে ৭৬৪ কর্মকর্তার ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যে এর সমালোচনা করছেন। বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

জনপ্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ (অতিরিক্ত সচিব) থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের বঞ্চিত দেখানো সঠিক কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, সবাই তো আর সচিব হবেন না। পাশাপাশি একটি ব্যাচের অনেক বেশি কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অর্থসংকটে থাকা সরকার কেন এত তড়িঘড়ি করে অবসরপ্রাপ্তদের সুবিধা দিতে অগ্রাধিকার দিল, সেটা নিয়েও কথা বলছেন কেউ কেউ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরে অবসরে যাওয়া ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে গতকাল রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাঁরা এখন পদোন্নতি পাওয়া পদ অনুযায়ী মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা পাবেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গত ২৪ ডিসেম্বর জানিয়েছিল বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির জন্য বকেয়া বেতন ও ভাতাদি বাবদ সরকারের ৪২ কোটি টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া তাঁদের পেনশন বাবদ বছরে অতিরিক্ত ৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘পদোন্নতি বঞ্চিত কমিটি থেকে প্রথমে আমাদের সবাইকে বলা হয়েছিল, অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হবে না। কারণ, অতিরিক্ত সচিব প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদোন্নতি প্রাপ্ত পদ। আমরা অতিরিক্ত সচিবেরা তা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ১১৯ জনের মধ্যে ৫১ জন অতিরিক্ত সচিবকে সচিব করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫ জনই একই ব্যাচের। এর মধ্যে অনেকেই কোনো প্রকার বঞ্চনার স্বীকার হননি।’

জানতে চাইলে মাহবুব কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি ব্যাচ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক কর্মকর্তাকে সচিব করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এক ব্যাচে এত কর্মকর্তা বঞ্চিত হতে পারে না। সরকার তাঁদের এত সুবিধা দেওয়া ঠিক হয়নি।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার গঠিত হওয়ার পরই নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে পদোন্নতির জন্য বিক্ষোভ করেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অনেকে। তারপর অনেক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি অবসরে যাওয়া অনেক কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয় এবং অবসরে যাওয়া ‘বঞ্চিত’ দাবি করা কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সরকার গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর ‘বঞ্চনা নিরসন কমিটি’ গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে। কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়। তাঁরা সবাই প্রশাসন ক্যাডারের।

কমিটি সাড়ে চার হাজারের মতো আবেদন বিশ্লেষণ করে ১ হাজার ৫৪০ জনকে ‘বঞ্চিত’ হিসেবে পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করে। সেখান থেকে সরকার ৭৬৪ জনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এই কর্মকর্তাদের চাকরিতে ফিরতে হবে না। নতুন পদে এক দিনও কাজ করতে হবে না। শুধু আর্থিক সুবিধা পাবেন। মোট আর্থিক সুবিধার অর্ধেক পাবেন চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫), অর্থাৎ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে। বাকিটা পাবেন আগামী অর্থবছরে।

সরকারি কর্মকর্তারা ২৫ বছর চাকরি করলে মূল বেতনের ৯০ শতাংশের সমপরিমাণ পেনশন পান। এর অর্ধেক এককালীন দেওয়া হয়। বাকিটা দেওয়া হয় মাস হিসেবে। পাশাপাশি তাঁদের আনুতোষিক, ভবিষ্য তহবিলসহ বিভিন্ন অবসর সুবিধা রয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব পদে (গ্রেড-২) মূল বেতন ৬৬ হাজার টাকা থেকে ৭৬ হাজার ৪৯০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সচিব পদে নির্ধারিত মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা।

একটি ব্যাচকে প্রাধান্য

গতকাল যে ৭৬৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১১৯ জনকে সচিব করা হয়েছে।

সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়াদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর মধ্যে ৩৫ জনই প্রশাসন ক্যাডারের ‘৮২ নিয়মিত ব্যাচের (১৯৮২ সাল)’ কর্মকর্তা। ‘৮২ বিশেষ ব্যাচ’ থেকে সচিব হন আরও ১০ জন। সব মিলিয়ে বিসিএস ৮২ ব্যাচের ৪৫ জন সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন। বিগত সরকারের সময়ে এই ব্যাচ থেকে অনেকে সচিব হয়েছেন। বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ ১১টি মন্ত্রণালয়ের সচিব ৮২ ব্যাচের।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৮২ ব্যাচ থেকে সচিব হন আবুল কালাম আজাদ, নজিবুর রহমান, হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের মতো আওয়ামী লীগ সরকারঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসনে আলোচনা আছে যে এখন নেতৃত্বে থাকা ৮২ ব্যাচের আমলারা তাঁদের ব্যাচমেটদের পদোন্নতি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব তৈরি করেছেন।

এক লাফে চার ধাপ পদোন্নতি

পদোন্নতির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যাঁরা সচিব হয়েছেন, তাঁদের ৫০ জন অতিরিক্ত সচিব পদ থেকে অবসরে গিয়েছিলেন।

সিনিয়র সহকারী সচিব পদ থেকে অবসরে যাওয়া ৯ জনকে সরাসরি সচিব করা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁরা এক লাফে চার ধাপ পদোন্নতি পেয়েছেন।

তাঁরা হলেন সিরাজুল ইসলাম খান, এ জে এম সালাউদ্দিন নাগরি, আখতারুজ্জামান তালুকদার, আবি আবদুল্লাহ, এ কে এম ইহসানুল হক, ফরিদুল ইসলাম, নাজমুল আমিন মজুমদার, মাহফুজুল ইসলাম ও জাহিদুল ইসলাম।

বিসিএস ৫ম (১৯৮৪) ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারে মেধাক্রমে তৃতীয় হয়েছিলেন জাফর সিদ্দিক। তিনি ২০১৭ সালে যুগ্ম সচিব পদ থেকে অবসরে গিয়েছিলেন। এবার মেধাক্রমে তাঁর চেয়ে পিছিয়ে থাকা ১১ জনকে সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু তাঁকে দেওয়া হয়নি।

জাফর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সরকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলছে। কিন্তু এখানে বৈষম্য করা হলো।

গতকাল সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়াদের একজন হলেন জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমান। বিসিএস ৮২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা উপসচিব হন ২০০১ সালে, যুগ্ম সচিব হন ২০০৪ সালে অতিরিক্ত সচিব হন ২০০৬ সালে। তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান ২০১৫ সালে।

মোখলেস উর রহমান বঞ্চিত হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। নিয়মিত পদ হিসেবে তাঁকে সচিব করা হয়েছে ভূতাপেক্ষভাবে। আর চুক্তিতে তিনি এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে কর্মরত।

বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (পিএটিসি) সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, কাউকে কাউকে চুক্তিতে সিনিয়র সচিব করা হয়েছে। আবার তাঁকেই নিয়মিত পদে সচিব হিসেবে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, অনেককে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, সবাইকে যদি পদোন্নতি দেওয়া হতো, তাহলে সিনিয়র সচিব পদে থাকা ব্যক্তি ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি নিয়ে আর্থিক সুবিধা নিতে পারতেন। কেউ কেউ কিছুই পেল না, কেউ কেউ অনেক বেশি পেল।

অতিরিক্ত সচিব পদ থেকে অবসরে যাওয়াদের বঞ্চিত বলা যায় কি না জানতে চাইলে আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, যদি সব যোগ্যতা থাকে, তাহলে সচিব না করলে বঞ্চিত বলা যায়। তিনি বলেন, নতুন সরকার এসে তড়িঘড়ি করে যে পদোন্নতি দিয়েছে, সেখানে ভুল হয়েছে। আবার এবারও যাচাই-বাছাইয়ে ভুল হলো।

অবসরপ্রাপ্তদের পদোন্নতি দেওয়া নিয়ে বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের ৩০তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আড়াই বছরের বেশি সময় আগে তাঁদের পদোন্নতির সময় হয়। কিন্তু সরকার দিচ্ছে না। তিনি বলেন, তাঁদের পদোন্নতি দিতে সরকারের আর্থিক চাপ খুব একটা বাড়বে না।

‘এটা অনেকটা আত্মসমর্পণের মতো অবস্থা’

সরকারের আয় ও ব্যয়ে এখন সংকটজনক অবস্থা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয়ে ঘাটতি বেড়েছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ে লাগাম টানতে হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ওপর সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট)। উদ্যোগ নিয়েও সরকার কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়া থেকে আপাতত পিছিয়ে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অবসরপ্রাপ্তদের ফিরিয়ে এনে পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া সরকারের অগ্রাধিকার তালিকার নিচের দিকে থাকার কথা। আর্থিক চাপ কমলে তখন এসব সুবিধা দেওয়া যেত। এমনও হতে পারত, এখন স্বীকৃতি দেওয়া হলো, টাকা কয়েক বছর পরে দেওয়া হবে।

জাহিদ হোসেন বলেন, মনে হচ্ছে আমলাতন্ত্রের চাপে অথবা তাঁদের সহায়তা পেতে সরকার কাজটি করছে। এটা অনেকটা আত্মসমর্পণের মতো অবস্থা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও আর থ ক স ব ধ ল গ সরক র সরক র র ল ইসল ম মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা

মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।

কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।

কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রনেতাকে ৪৭ দিন গুম করে রাখার মামলায় চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান সোহায়েলকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ
  • মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা