কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সাথী খাতুন (২২) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার সদকী ইউনিয়নের করাতকান্দি গ্রামের স্বামীর বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয়। স্বজনদের অভিযোগ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্ত্রী সাথী খাতুনকে পিটিয়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্যা করেছেন তাঁর স্বামী মো.

সীমান্ত (৩০)।

নিহত সাথী খাতুন সদকী ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের মনছুর শেখের মেয়ে। প্রায় আট বছর আগে পারিবারিকভাবে করাতকান্দি গ্রামের মতিয়ার শেখের ছেলে সীমান্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল।

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্ত ও সাথী খাতুন দম্পতির ছয় বছর ও চার মাস বয়সী দুই সন্তান রয়েছে। বছরখানেক আগে সীমান্ত বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। সমস্যার সমাধানে পারিবারিকভাবে একাধিকবার সালিস বৈঠকও হয়েছে। প্রায় সাত দিন আগে প্রেমিকাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সীমান্তকে ৯০ হাজার টাকা দেন শ্বশুর মনছুর। তারপরও রোববার প্রেমিকাকে নিয়ে সারা দিন ঘোরাঘুরি করেন সীমান্ত। রাতে সাথী খাতুন স্বামীর কাছে ঘোরাঘুরির বিষয় জানতে চান। তখন সীমান্ত স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে সাথীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে পালিয়ে যান। খবর পয়ে কুমারখালী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

সাথীর বড় ভাই সবুজ বলেন, ‘খালাতো বোনের সঙ্গে সীমান্তের পরকীয়া প্রেম ছিল। একাধিকবার সালিস হয়েছে। গত সপ্তাহে ৯০ হাজার টাকাও দিছি মিটমাটের জন্য। তবুও গতকাল রোববার পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে গিছিল। সে খবর জানতে গেলে সীমান্ত আমার বোনকে পিটিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে পালিয়েছে। আমি অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। থানায় মামলা করব।’

নিহত নারীর শরীরে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক বিপ্লব বিশ্বাস। তিনি বলেন, খবর পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। পরিবার থেকে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে লিখিত দিলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, পরিবার বলছে ‘এআইয়ে বানানো আপত্তিকর ভিডিওর’ জেরে আত্মহত্যা

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে গত রোববার এক গৃহবধূর (২০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের দাবি, পারিবারিক বিরোধের জেরে এআই দিয়ে স্বামীর স্বজনের বানানো আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় মানসিক যন্ত্রণায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

ওই গৃহবধূর স্বামী (২৮) জাপানপ্রবাসী। ১০ মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়। গৃহবধূরও স্বামীর কাছে জাপানে যাওয়ার কথা ছিল।

পুলিশ বাড়ির শোবার ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করা হয়। সেখানে গৃহবধূ তাঁর স্বামীর এক স্বজন পর্তুগালপ্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

গৃহবধূর ভাই অভিযোগ করেন, এআই প্রযুক্তি দিয়ে তাঁর বোনের আপত্তিকর ভিডিও বানানো হয়েছিল। এটি বানানো ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি স্বামীর স্বজন মৃদুল করেছেন বলে বোন তাঁদের বলেছিলেন। সুইসাইড নোটেও তাঁর নাম লিখে গেছেন। তাঁরা বোনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বোন।

গৃহবধূর স্বজনদের অভিযোগ, জাপানপ্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে মেনে নিতে পারেননি তাঁর (বর) স্বজন মৃদুল। একপর্যায়ে এটি পারিবারিক বিরোধে রূপ নেয়। পরে আপত্তিকর ভিডিও বানিয়ে একটি ভুয়া আইডি থেকে সেটি স্বজনদের কাছে পাঠানো হয়।

বক্তব্য জানার জন্য গৃহবধূর জাপানপ্রবাসী স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলকে অভিযুক্ত করেন। স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করে তিনি বিচার দাবি করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে পর্তুগালপ্রবাসী নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলের সঙ্গে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, তাঁর জাপানপ্রবাসী স্বজনের সঙ্গে অন্য মেয়ের সম্পর্ক আছে। সে কারণে এই মেয়েকে (মৃত গৃহবধূ) বিয়ে করতে চায়নি। পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করেছিল। বিয়ের দেনমোহরের ১০ লাখ টাকা না দিতে জাপানপ্রবাসী এই নাটক করেছেন। আপত্তিকর ভিডিওর বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, তাঁর আইডিতে ৭ মিনিট ৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আসে। তিনি সেটা তাঁর স্ত্রীকে দেখান। ভিডিওটি নিয়ে তাঁর জাপানপ্রবাসী স্বজন ও পরিবারের লোকজন গৃহবধূকে মানসিক নির্যাতন করেছেন।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী আকবর বলেন, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে গত সোমবার গৃহবধূর ময়নাতদন্ত হয়। পরে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে পরিবারকে মামলা করতে বলা হয়েছে।

গৃহবধূর ভাই প্রথম আলোকে বলেন, বোনকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া ও আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করে পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করবেন তাঁরা। তাঁদের কাছে সব তথ্য-প্রমাণ আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কামারখন্দে এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা
  • গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, পরিবার বলছে ‘এআইয়ে বানানো আপত্তিকর ভিডিওর’ জেরে আত্মহত্যা