বাংলাদেশের রাজধানী কি ঢাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া উচিত
Published: 10th, February 2025 GMT
রাজধানী একটি দেশের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নগরী, যা দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। তবে বর্তমান সময়ে ঢাকার ওপর প্রচণ্ড জনসংখ্যার চাপ, যানজট, পরিবেশদূষণ ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে অনেকেই রাজধানী সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন যে রাজধানী পরিবর্তন করা ব্যয়বহুল ও কঠিন হবে। তাই এ বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষের চাপে হাঁসফাঁস করছে রাজধানী ঢাকা। এই চাপ কমাতে কিছু একটা করতেই হবে। হোক তা রাজধানী স্থানান্তরের মাধ্যমে, কিংবা আমাদের প্রশাসনিক খাতগুলোকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিকেন্দ্রীকরণ করে।
ঢাকা বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের কর্মকাণ্ড ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে আসেন। যদি রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে ঢাকার ওপর এই চাপ কমবে। ঢাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ কর্মস্থলে যাওয়া-আসার সময় প্রচণ্ড যানজটে আটকে থাকেন, ফলে অর্থনীতি ও উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি ভয়াবহ বায়ুদূষণ তো আছেই।
ঢাকা শহরের পুরোনো ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো নতুন প্রযুক্তি ও নগর পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিন্তু নতুন একটি পরিকল্পিত রাজধানী তৈরি করা হলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, প্রশস্ত রাস্তা, উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্ট ঘোষণা দেয়, তারা তাদের রাজধানীকে জাকার্তা থেকে বোর্নিও দ্বীপের একটি নতুন শহর নুসানতারায় সরিয়ে নিয়ে যাবে। জাকার্তা জাভা দ্বীপে অবস্থিত। জাভা দ্বীপে রাজধানী থাকায় এখানেই ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ বসবাস করেন। দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অর্ধেকের বেশি জাভাতেই হয়। অথচ কালিমান্তান দ্বীপটির আয়তন জাভার তুলনায় চার গুণ।
এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে দেশটির পার্লামেন্ট বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছে। সেসব কারণের মধ্যে জাকার্তার উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব, বন্যার ঝুঁকি, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাওয়াসহ ইত্যাদি।
প্রায় একই সময়ে মিসরের সরকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কায়রোর ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে একটি নতুন রাজধানী গড়ে তোলার। দেশটির বর্তমান রাজধানী প্রায়ই তীব্র যানজটে নাকাল হয়ে পড়ে। এমন যানজটের নেপথ্যে রয়েছে রাজধানীতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনিক ভবনের অবস্থান।
জাকার্তা বা কায়রোর অবস্থার সঙ্গে খুব সহজেই মিল খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার।
ঢাকাতেও ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে (যদিও অবস্থা জাকার্তার মতো অতটা খারাপ নয়)। এ শহরের বাতাসকে শ্বাস গ্রহণের অনুপযোগীই বলা চলে। শহরের ‘লাইফলাইন’ হিসেবে বিবেচিত নদীগুলো এত বেশি দূষণের শিকার হয়েছে যে সেগুলোর অবস্থা পুনরুদ্ধারের আশাও এখন ম্লান হয়ে পড়েছে। আর যানজটে স্থবির হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তো আছেই।
দেশের ১৭ কোটি মানুষের যেন একমাত্র কর্মসংস্থানের জায়গা ঢাকা। প্রচলিত সব পণ্যের পাইকারি বাজার, ছোট-বড় শিল্প–কলকারখানা, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড—সবই ঢাকাকেন্দ্রিক। মানুষের জন্য শহরে ২৫ শতাংশ হারে রাস্তা, ১০ শতাংশ খোলা জায়গা, ১৫ শতাংশ বৃক্ষ থাকার কথা। কিন্তু সেসবের কোনো কিছুই যথার্থভাবে নেই।
বড় একটি ভূমিকম্প হলে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে ঢাকা শহর। সবচেয়ে বড় কথা, এমনটি হলে ঢাকার রাস্তাগুলো পরিষ্কার করতে সময় অনেক মাস। এমনকি প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়ে যাবে, যে কারণে দেখা দেবে বিশৃঙ্খলা। সুতরাং ড্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে, তার বিশেষণ করা আবশ্যক। ঢাকাকে বাসযোগ্য ও আধুনিক নগরীতে পরিণত করতে হলে দেশের প্রশাসনিক রাজধানী স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে গ্রহণ করা উচিত।
এমন জনবহুল শহরে বিনিয়োগ করলেও সেখান থেকে লাভ আসে অতি নগণ্য। তাই এ ধরনের শহরের অবকাঠামোয় সরকার যতই মেট্রোরেল, সাবওয়ে বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যোগ করুক না কেন, বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া কোনোভাবেই এসব বিনিয়োগ আশানুরূপ ফল বয়ে আনবে না। অর্থনৈতিক লাভ বৃদ্ধি কিংবা দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সব ধরনের ফলাফলই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হবে।
তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে: ঢাকাকে দিয়ে যেহেতু এই রাষ্ট্রের কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না, তাহলে কি আমাদের উচিত মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের রাজধানী ঢাকার বাইরে কোথাও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া?
কার্যত, ঠিক তা নয়।
নতুন রাজধানী গড়ে তুলতে বিশাল অর্থ ব্যয় হবে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করতে কয়েক লাখ কোটি টাকা লাগতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ঢাকায় ইতিমধ্যে সব সরকারি দপ্তর, মন্ত্রণালয় ও বিদেশি দূতাবাস স্থাপিত রয়েছে। নতুন রাজধানীতে এগুলো স্থানান্তর করা সময়সাপেক্ষ ও কঠিন হবে। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীও ঢাকাকেন্দ্রিক, ফলে রাজধানী বদলালে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
একেক দেশ একেক কারণে তাদের রাজধানী স্থানান্তর করে। তাই অন্ধের মতো তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ হবে বোকামি। ইন্দোনেশিয়া জাকার্তা থেকে তাদের রাজধানী শহর সরিয়ে নিচ্ছে প্রধানত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাওয়া এবং বন্যার উচ্চ ঝুঁকি থাকার ফলে। অন্যান্য দেশও নানা রাজনৈতিক কারণে তাদের রাজধানী পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মিসরের কথা। তারা রাজধানী সরিয়ে নিচ্ছে, কারণ, দেশটির বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসানো সেনাবাহিনী নতুন শহরের অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিভিন্ন সম্পদের বেচাকেনা থেকে লাভবান হতে পারবে। এদিকে সামরিক জান্তাশাসিত মিয়ানমারও তাদের প্রশাসনিক রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে নেপিডোতে সরিয়ে নিয়েছে সাধারণ জনগণের থেকে সামরিক সরকারকে রক্ষার উদ্দেশ্যে।
তা ছাড়া রাজধানী শহরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া ভীষণ ব্যয়বহুলও বটে। যেমন বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, নতুন একটি শহরে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করতে ইন্দোনেশিয়ার খরচ হবে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আর মিসরের সম্ভাব্য খরচ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার।
সেদিক থেকে চিন্তা করলে বাংলাদেশকেও তেমন কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবিস্তারে লাভ-ক্ষতির বিচার-বিশ্লেষণ করে নিতে হবে।
এর অর্থ, আমাদের উচিত প্রশাসনিক খাতগুলোকে ক্রমান্বয়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা। এ ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় বা প্রশাসনিক খাতকে এমন কোনো অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া উচিত, যে অঞ্চলের সঙ্গে সেগুলোর অবস্থান সংগতিপূর্ণ।
সাদিয়া সুলতানা
শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন দ ন শ য় র অবস থ অবক ঠ ম য নজট শহর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আসছে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের ছাত্র সংগঠনও
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা নতুন ছাত্র সংগঠন গঠন করবেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনেরও আত্মপ্রকাশ হতে পারে। প্রাথমিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি গঠন হবে। এ কমিটি ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদি হবে। ছাত্রনেতারা বলছেন, ছাত্র সংগঠনটি দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে কাজ করবে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থাকবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, এ মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা করা হবে। এখনও নাম ঠিক হয়নি। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ১০০-এর বেশি নাম প্রস্তাব এসেছে।
আদালতের রায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠন করে সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের হত্যাযজ্ঞে আন্দোলন রূপ নেয় অভ্যুত্থানে। কোটি মানুষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজপথে নামেন। হাজারো মানুষের আত্মত্যাগে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভাবনীয় পতন হয়।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দলের দিকে এগোচ্ছেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা।
হবে কেন্দ্রীয় এবং ঢাবি কমিটি
প্রাথমিকভাবে ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি ১৭১ বা ২০১ সদস্যের হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আকার আরেকটু ছোট হতে পারে। ছাত্র সংগঠনের মূল কমিটি ৩০১ সদস্যের হতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এবং আব্দুল কাদের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সমন্বয়ক রশিদুল ইসলাম রিফাত, হাসিব আল ইসলাম, জাহিদ আহসানও নেতৃত্বে আসতে পারেন। কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঘোষণার পরে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, জেলায় নতুন ছাত্র সংগঠনের কমিটি গঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা।
আবু বাকের মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে আব্দুল কাদের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের ছাত্র।
মূল দলের সঙ্গে আদর্শের মিল থাকবে, তবে ছাত্র সংগঠনকে দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরে স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র রাখতে চান ছাত্রনেতারা। এখানে সর্বোচ্চ ২৭-২৮ বয়সসীমা নির্ধারণ করা হতে পারে। আবার স্নাতকে ভর্তি হওয়ার পরে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত ছাত্র সংগঠনে থাকার নিয়ম করার শর্তও বিবেচনা করা হচ্ছে।
ছাত্র সংগঠনের নাম নিয়ে একাধিক প্রস্তাব
অভ্যুত্থানের সূত্রপাত করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অধিকাংশ নেতা এসেছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি থেকে। ২০২৩ সালে গঠিত ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব ছিলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তারা দু’জনেই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা।
ঢাবির সদস্য সচিব ছিলেন আবু বাকের। সংগঠনের গঠন এবং প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও। ফলে নতুন ছাত্র সংগঠনের নাম ছাত্রশক্তি করার প্রস্তাব রয়েছে। নতুন নামে ছাত্র সংগঠন হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।
মূল দলে যাবেন বৈষম্যবিরোধীদের অনেক নেতা
ছাত্র সংগঠন গঠিত হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা মূল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন। এরমধ্যে বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের প্রথম সারিতে থাকবেন। তিনি নিজ শহর কুমিল্লা থেকে জাতীয় নির্বাচনে লড়তে পারেন।
এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, সমন্বয়ক মাহিন সরকারও মূল রাজনৈতিক দলে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। সংগঠন সূত্রের ভাষ্য, সবকিছুই প্রাথমিক আলোচনায় রয়েছে। আব্দুল হান্নান মাসউদ হাতিয়ায় নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।
ছাত্র সংগঠনে প্রজন্মের নেতৃত্ব দিতে যোগ্যদের প্রাধান্য
হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানে সবচেয়ে আলোচিত হয় ‘জেনারেশন জুমার্স’ তথা জেন-জি। এ প্রজন্মকে যারা নেতৃত্ব দিতে যোগ্য তাদের কথাই ভাবা হচ্ছে নতুন ছাত্র সংগঠনের জন্য। পাশাপাশি ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে যারা ধারণ করবেন, তারা আসবেন নেতৃত্বে।
আবু বাকের মজুমদার সমকালকে বলেন, যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, আবার অনেকে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারেননি কিন্তু জুলাইয়ে সর্বতোভাবে তৎপর ছিলেন সবাইকে ছাত্রসংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা সর্বাত্মকভাবে অংশ নেন। বাকের মজুমদার বলেছেন, অভ্যুত্থানের পর সবাই যার যার ছাত্র সংগঠনে ফিরে গেছেন। বর্তমান প্রজন্মের যাওয়ার মতো সংগঠন, তাদের মতামত প্রতিষ্ঠা করার মতো সংগঠন নেই। নতুন ছাত্র সংগঠন যেমন শিক্ষার্থীদের অধিকারের বিষয়ে সরব থাকবে, তেমনি একজন শ্রমিকের স্বার্থেও রাজপথে দাঁড়াবে। অর্থাৎ জাতীয় পরিমণ্ডলেও ছাত্র সংগঠন দেশের স্বার্থে কাজ করবে।
সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ছাত্র সংগঠন শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে। সকল মতের শিক্ষার্থীকেই ধারণ করবে।
রাজনৈতিক দলের প্রধান হবেন নাহিদ
তরুণদের রাজনৈতিক দলের প্রধান হবেন নাহিদ ইসলাম– এটি অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি এখনই উপদেষ্টা পদ ছেড়ে দলের নেতৃত্ব তুলে নেবেন কিনা এটি নিশ্চিত নয়। তাঁর সঙ্গে আরেকজন কে হবেন নেতৃত্বের অংশ সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তরুণ নেতারা চাচ্ছেন, বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ যিনি সর্বজনগ্রাহ্য, এমন জুতসই কাউকে খুঁজছেন তারা। আবার ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকেও অনেকের কথা আলোচনা হচ্ছে। এরমধ্যে আখতার হোসেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, হাসনাত আবদুল্লাহর কথা শোনা যাচ্ছে। আবার তাদের কেউ উপদেষ্টাও হয়ে যেতে পারেন।
দল গঠনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জনমানুষের প্রত্যাশা জানতে সপ্তাহব্যাপী ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মতামত সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
দলের নাম কী হবে– তাও মানুষের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে কর্মসূচিতে। এরমধ্যে প্রস্তাবিত কিছু নাম হলো, পিপলস রেভলিউশন পার্টি (পিআরপি), পিপলস পাওয়ার পার্টি (পিপিপি), ইউনাইটেড রেভলিউশন পার্টি (ইউআরপি), ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউআরপি), ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউডিপি), রেভলিউশনারি পিপলস পার্টি (আরপিপি), ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টি (ডিপিপি), পিপলস মুভমেন্ট পার্টি (পিএমপি) ইত্যাদি।