জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ভর্তি পরীক্ষার প্রথমদিন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। এ সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাভার সেনানিবাসের মিলিটারি পুলিশ, ঢাকা জেলা পুলিশ ও সাভার উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে।

পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ করতে প্রতি ঘণ্টায় ঢাকার আসাদগেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল গেট পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

সোমবার (১০ ফ্রেরুয়ারি) সকাল থেকেই মহাসড়কে যানজট নিরসনে সেনাবাহিনীর টিমকে কর্মব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। 

সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, “গতকাল রবিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নিরাপত্তা শাখার প্রধান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যানজটের কারণে ভর্তি পরিক্ষার্থীদের যাতে সমস্যা না হয়, এজন্য আমরা যানজট নিরসনে মহাসড়কে কাজ করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাভার সেনানিবাসের মিলিটারি পুলিশ, ঢাকা জেলা পুলিশ ও সাভার উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ভোর থেকেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে। ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল আনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং করছে। আমাদের এ কার্যক্রম পরীক্ষার শেষদিন পর্যন্ত চলমান থাকবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো.

আওলাদ হোসেন বলেন, “ভর্তি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি ও কষ্ট লাঘব করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন ধরনের ভাড়া চার্জ হবে না। প্রতি ঘণ্টায় ঢাকার আসাদগেট থেকে বিশমাইল পর্যন্ত একটি দ্বিতলা বাস চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাস সার্ভিস চলতে থাকবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, “আমরা দেখেছি গতকাল অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা যানযটের কারণে সঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি। এজন্য আজ স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় সার্বিক ট্রাফিক সুশৃঙ্খলভাবে চলছে।”

তিনি বলেন, “আজ কোন যানজট নেই। একইসঙ্গে ঢাকার আসাদগেট থেকে প্রতি ঘণ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল পর্যন্ত ডাবল ডেকার বাস সার্ভিস রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা শতভাগ সফল।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ র য নজট ন

এছাড়াও পড়ুন:

চৈত্রের শেষ দিনে জাবিতে ব্যাঙের পানচিনি ‘বিয়ে’ 

দিনভর প্রবল উত্তাপের শেষে বাংলা বছরের শেষ সূর্যের মেজাজ তখন কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে। গাছের নতুন পাতায় সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব উৎসবের সাজ দিয়েছে৷ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ফুটে ওঠেছে উৎসবের আমেজ।

উৎসবের পালে নতুন হাওয়া দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরাতন কলা ভবনের সামনে চলছে তখন পানচিনির আয়োজন। সবার মাঝে বিয়ের আমেজ। মঞ্চের একপাশে সেজেগুজে বসে আছে কনে। বরপক্ষের আগমনের অপেক্ষায় কনেপক্ষ। বিকেল ৫টার দিকে এক র‍্যালি নিয়ে হাজির বরপক্ষ। বরের মাথায় এক ঢাউস ছাতা।

হলুদ, ধান ও দূর্বা দিয়ে কনেপক্ষ বরপক্ষকে বরণ করে নিল। চলল আশীর্বাদ আদান-প্রদান। মন্ত্র পাঠের আগে অভিভাবকরা কথা দিলেন, আসছে আষাঢ়ে তাদের বিয়ে হবে। বরের বাবা হলেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অন্যদিকে কনের বাবার দায়িত্বে ছিলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন৷

তবে এটি কোনো মানুষের বিয়ে নয়। ব্যাঙের বিয়ে। খরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির প্রত্যাশায় কলা ও মানবিকী অনুষদ চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই ‘ব্যাঙের পানচিনি’র আয়োজন করেছিল। পানচিনি অনুষ্ঠান মূলত বিয়ের অঙ্গীকার প্রদান, আশীর্বাদ আদান-প্রদান এবং বর-কনের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর আয়োজন।

ব্যাঙের এই পানচিনি সম্পর্কে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান জানান, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রচণ্ড দাবদাহে যখন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, সেসময় বর্ষার আবাহন হিসেবে ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তাদের একটা কৃত্য হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা করে ব্যাঙের বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ বর্তমান সময়ে মানুষের সাথে প্রাণ-প্রকৃতির যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে তা নিরসনের প্রত্যাশায় প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তির দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ব্যাঙের পান-চিনি’ আয়োজন করা হয়।

ব্যাঙের পানচিনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেজেছিলেন বরপক্ষের সাজে। আর পুরাতন কলা ভবন কনেপক্ষ। বাঁশ আর রঙিন কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছিল ব্যাঙ-যুগলের বিশাল দুটি প্রতিকৃতি। গতরাতেই কনেপক্ষ বরপক্ষের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে আলাপটা সেরে এসেছিলো।

সকাল থেকেই উভয়পক্ষের বাড়িতে চলছিল সেই প্রস্তুতি। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে নেচে-গেয়ে বরপক্ষ হাজির হয় পুরাতন কলা ভবনের কনেপক্ষের বাড়িতে। কনেপক্ষ হুই-হুল্লোড় করে ‘গেট ধরলে’ চলে মধুর দর-কষাকষি। এরপর জমে ওঠে প্রীতি কথার লড়াই। কারও হার না মানা অবস্থায় মঞ্চে পাশাপাশি বসার সুযোগ হয় হবু বর-কনের।

বরপক্ষ ও কনপক্ষের এ মধুর লড়াই চলে বেশ সময় ধরে। কেউ কাউকে নাহি ছাড়৷ কারো মতে, বিয়ের দেনমোহর হওয়া উচিত কোটি টাকায়। কারো মতে, আরও কম৷ কেউবা বলছেন, ব্যাঙের বিয়ে হওয়া উচিত যে কোনো ধর্ম মেনে৷ তবে কনেপক্ষের মত, মানুষের ধর্ম নয়, ব্যাঙের ধর্ম মেনেই হবে ব্যাঙের বিয়ে৷ শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছে দুই পক্ষ। আংটি বদলের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চৈত্র সংক্রান্তির ব্যাঙের বিয়ে৷ 

ব্যাঙের পানিচিনি নিয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বৈশাখ থেকে প্রকৃতির পরিবর্তন হতে থাকে৷ ফলে প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের মানব মনে নাড়া দেয়৷’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চৈত্রের শেষ দিনে জাবিতে ব্যাঙের পানচিনি ‘বিয়ে’ 
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে কক্ষে তালা
  • সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক
  • চালকলমালিকদের সুবিধা দিতেই ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমাচ্ছে সরকার