ধর্ষণের পর শিশুকে হত্যা দায়ে চাচাতো ভাইয়ের ১০ বছরের আটকাদেশ
Published: 10th, February 2025 GMT
নাটোরে চাচাতো বোনকে ধর্ষণের পর হত্যা করার দায়ে এক ব্যক্তিকে ১০ বছরের আটকাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে নাটোরের শিশু আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ আবদুর রহিম এ আদেশ দেন। ঘটনার সময় ওই ব্যক্তি কিশোর বয়সী ছিলেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুল কাদের রায়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আইনের দৃষ্টিতে দোষী কিশোরের বিচার শিশু আইনে হয়েছে। এ আইনে হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের আটকাদেশ। আদালত সেটিই দিয়েছেন।
শিশু আদালত সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে প্রকাশ্য আদালতে ওই শিশু হত্যার রায় ঘোষণা করা হয়। এ সময় আসামি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে রায়ের কিছু অংশ পড়ে শোনান বিচারক। এতে শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করার দায়ে ওই ব্যক্তিকে ১০ বছর আটকাদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ঘটনার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর। বর্তমানে তাঁর বয়স ২৪ বছর।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর বিকেলে বাদীর এক মেয়েশিশু খেলার জন্য বাড়ির বাইরে যায়। রাতে বাড়ি ফিরে না আসায় পরদিন গুরুদাসপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশুটির বাবা। ২২ ডিসেম্বর বাদীর বাড়ির পাশের দিঘিতে বস্তাবন্দী অবস্থায় শিশুটির মরদেহ ভেসে ওঠে। তখন শিশুটির বাবা বাদী হয়ে প্রতিবেশী নাজমা বেগমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের সময় জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে শিশুটির আপন চাচাতো ভাই নিজ বসতঘরে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। এর একপর্যায়ে শিশুটির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহটি পাশের দিঘিতে ফেলে দেয় ওই কিশোর।
সূত্র থেকে আরও জানা যায়, তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে শিশুটির চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলাটি শিশু আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে অভিযুক্ত কিশোরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাঁকে ১০ বছর আটকাদেশ দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র আটক দ শ ১০ বছর তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
মাঠের বিদায় কেন ফেসবুকে
‘সব কিছু নিখুঁতভাবে শেষ হয় না। তার পরও একটা সময় শেষ বলে সামনে এগিয়ে যেতে হয়’– বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেওয়া অবসরের ঘোষণায় এই দুটি লাইনে মাহমুদউল্লাহর আক্ষেপটা টের পাওয়া যায়।
কী নিয়ে আক্ষেপ, সেটা সবার জানা। আর মাহমুদউল্লাহ একা নন; মাশরাফি মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম– বাংলাদেশের ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্ম হিসেবে খ্যাত এই পাঁচজনের একই আক্ষেপ। মাঠের বদলে তাদের অধিকাংশের বিদায় নিতে হয়েছে ফেসবুক থেকে! যাদের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সিংহভাগ অর্জন, তাদের এমন আক্ষেপভরা বিদায় কেন? দায়টাই বা কার?
মাশরাফি মুর্তজাকে দিয়ে এই পঞ্চপাণ্ডবের বিদায়ের সূচনা। ১২ মার্চ মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। তবে মুশফিকুর রহিম এখনও টেস্ট থেকে অবসর নেননি। মাশরাফি অবশ্য অবসরের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। ২০০৯ সালে উইন্ডিজ সফরে চোট পাওয়ার পর থেকে তিনি আর টেস্ট খেলেননি।
২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে তৎকালীন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে অভিমান করেই টি২০ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়েন। এরপরই গুঞ্জন ওঠে মিরপুরে বিদায়ী ম্যাচ খেলতে চান মাশরাফি। বিসিবি থেকেও আয়োজনের কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু কী এক কারণে সেই ম্যাচ হয়নি।
সাকিব আল হাসান দেশের মাটি থেকে অবসর নেওয়া ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট শেষে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, শেষ টি২০ খেলে ফেলেছেন, দেশের মাটিতে টেস্ট থেকে অবসর নিতে চান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডে ছাড়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন। কিন্তু দুটোর একটাও হয়নি।
২০২৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার জেরে গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আর দেশে ফিরতে পারেননি। তাঁর নামে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। তাই সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ বলেই ধরে নেওয়া যায়।
তামিম ইকবালের অবসর নিয়ে নাটক হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জাতীয় দলে খেলবেন নাকি অবসর নেবেন, এ নিয়ে প্রায় দুই বছর নানা আলোচনার পর গত ১০ জানুয়ারি ফেসবুকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। ফলে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেটি জাতীয় দলের হয়ে তাঁর শেষ ম্যাচ হয়ে রইল।
মুশফিকুর রহিম টি২০ বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের জেরে সমালোচনার শিকার হলে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে কুড়ি ওভারের ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বাজ পারফরম্যান্সের কারণে সমালোচনা হলে ওয়ানডে থেকে তিনি অবসরের ঘোষণা দেন ৫ মার্চ।
গত বুধবার মাহমুদউল্লাহর অবসরের পর একটা বিষয়ে জোরেশোরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। কেন তারা মাঠ থেকে অবসর নিতে পারলেন না? মাঠ থেকে অবসর নেওয়ার সংস্কৃতি কী দেখা যাবে?
এ বিষয়ে গতকাল কথা বলেছেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন, ‘ওদের (মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ) ক্যারিয়ারটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য উজ্জ্বল ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় নিয়ে এসেছিল ওরা। আমি মনে করি মাঠ থেকে অবসর ওদের প্রাপ্য। কেন ওরা মাঠ থেকে অবসর নিল না, সেটা ওরাই ভালো বলতে পারবে।’
বিষয়টা নিয়ে আফসোস করেছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারও, ‘মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো। সেটা তাদের প্রাপ্যও। বাংলাদেশ দলের জন্য যা করেছে, মাঠ থেকে নিতে পারলে খুব ভালো হতো। ভরা স্টেডিয়াম থেকে নিতে পারলে বিদায়টা প্রকৃত অর্থেই সুন্দর হতো।’
মাহমুদউল্লাহর বিদায় নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই বিষাদের একটি মুহূর্ত। প্রায় দুই দশক জাতীয় দলের অন্যতম প্রধান ভরসা ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। খেলার প্রতি তাঁর নিবেদন ও পারফরম্যান্স ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা মানদণ্ড তৈরি করেছে।’ তবে মাঠ থেকে বিদায় বিষয়ে কিছু বলেননি বিসিবি সভাপতি।