সহিংসতা-হানাহানি যেন না হয়, সজাগ দৃষ্টি রাখুন: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 10th, February 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশে যেন কোনো সহিংসতা ও হানাহানি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শহীদ পরিবার ও আহতদের মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন প্রধান উপদেষ্টা। তখন তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে এই আহ্বান জানান।
২১টি জুলাই শহীদ পরিবার ও সাতজন আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে সহায়তার কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
আরো পড়ুন:
সাবেক সিইসি আব্দুর রউফের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
কোটা নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ৩ সিদ্ধান্ত
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা.
বৈঠকে তিনটি শহীদ পরিবারের সদস্য এবং তিনজন যোদ্ধা বক্তব্য রাখেন। তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রাপ্তি, আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের দাবির কথা তুলে ধরেন। জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবসময় ভাবি যাদের কারণে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা ‘নতুন বাংলাদেশ’ বলার সাহস করছি তাদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যাবে না।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের ইতিহাসের স্রষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারে না, সে জাতি জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না। এই স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে জাতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
শহীদ পরিবার ও আহতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আজকে থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে।”
সকল হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো সুবিচার হতে হবে, অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়? আমরা অবিচারে নামব না। আমরা যারা অপরাধী তাদের পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করব। যারা অপরাধী নয়, পুলিশের হাতে দেওয়ার মতো নয়; তাদের মানুষ করব।”
তিনি আরো বলেন, “ভাই, এদেশ আমরা একসাথে গড়ি, যেদেশ আমরা একসাথে গড়ার স্বপ্ন দেখছি, তোমরাও সে স্বপ্ন দেখ। এদেশ আমার একার না, তোমারও এদেশ। তুমি এদেশের সন্তান। আমিও এদেশের সন্তান। তুমি আমাকে বহু কষ্ট দিয়েছো। আমি তোমারে কষ্ট দেব না। আমরা এক যোগে যত তাড়াতাড়ি পারি এটাকে একটা সুন্দর দেশ বানাব, যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা অপরাধী নয়, তাদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে।”
জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধারা যেসব সুবিধা পাবেন
বৈঠকে আহত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জুলাই শহিদ ও জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদরা ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন এবং পরিচয়পত্র পাবেন।
বাসস লিখেছে, প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি শহীদ পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
অনুষ্ঠানে জানানা হয়, জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধাদি পাবেন। গুরুতর আহতদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী, এককালীন ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে এবং ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, গুরুতর আহত প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্ত হবেন ও মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবেন। তারা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।
‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। তারা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি/আধাসরকারি কর্মসংস্থান প্রাপ্য হবেন।
জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র দেবে সরকার- এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।
এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। আহতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা জানি, আপনাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল আরো আগেই আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলো করতে পারব। আমাদের আন্তরিকতার কমতি ছিল না। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রত্যেকে আপনাদের ন্যায্য সম্মাননা দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। সংকটকালীন সময়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে, সে কারণে আপনাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যথাসময়ে আমরা তা করতে পারিনি। এ কারণে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি।”
ঢাকা/হাসান/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন সরক র র আপন দ র চয়পত র আহতদ র আম দ র অব চ র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ডেভিল নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
যতদিন পর্যন্ত দেশ থেকে ডেভিল নির্মূল না হবে ততদিন পর্যন্ত অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, “গাজীপুরের ঘটনায় অনেককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আর যারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।”
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। তারই অংশ হিসেবে গাজীপুরসহ সারা দেশে যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।”
গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে গাজীপুর নগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঠেকাতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন। পরে সেখানে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে স্থানীয়রা তাদের ওপর হামলা চালায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের নেতাকর্মীরা বলেছেন, “হামলায় আহতদের সবাইকেই প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে গুরুতর আহত পাঁচ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
ওই হামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নগরের ভাওয়াল রাজবাড়ি সড়ক অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে গিয়ে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সে সময় তিনি গাজীপুরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বাস দেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের অভিযান শুরু কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসানের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এই অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/ইভা