দেশে খেলাপি ঋণের মোট ঋণের ৩০ শতাংশ অতিক্রম করে যেতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

খেলাপি ঋণের বাড়বাড়ন্ত মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মুদ্রানীতির ঘোষণায় জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা জোরদার, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত ও যথাযথভাবে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দিয়েছে। তারা মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেমন এক্সপেকটেড ক্রেডিট লস মেথডলজি; ২০২৭ সালের মধ্যে এটি চালু করা হবে। আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হবে। সে জন্য কী কী করতে হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, সে জন্য ব্যাংকের ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ঋণ ব্যবস্থাপনা রীতি–সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী—এসব অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই মডেলের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে ঋণের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে।

সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের আইন বিভাগগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে যেসব ঋণ অর্থঋণ আদালত ও উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে, সেগুলোর জট ছাড়াতে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা ও এই খাতের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব ঝুলে থাকা বিষয়ের জট ছাড়াতে আইন বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের ব্যাংকগুলোয় গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের প্রায় ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তখন দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল খেলাপি।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য মনে করেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসাব অবলোপন করা ও আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩০ শতাংশে উঠে যেতে পারে বলে মুদ্রানীতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ঋণ র প

এছাড়াও পড়ুন:

বাগেরহাটে শ্রমিক দল নেতার বিরুদ্ধে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ

বাগেরহাট পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক দলের নেতা আবুল কাশেম ভূঁইয়ার ভাই আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। আবুল কাশেম ভূঁইয়া বাগেরহাট পৌর শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি। তাঁর ভাই আজিম ভূঁইয়াও শ্রমিক দল নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে দলীয় পদ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গতকাল বুধবার রাতে বাগেরহাট পৌর শহরের বাসাবাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় জসিমকে উদ্ধার করে প্রথমে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে খুলনায় পাঠানো হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এদিকে যুবদল নেতাকে কোপানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজনের খোঁজে গতকাল বুধবার রাতে শহরে সশস্ত্র মহড়া দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আবুল কাশেম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে হামলা, মারধর, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ আছে। এর আগে বাস টার্মিনালের দখল নিয়ে আবুল কাশেম ভূঁইয়ার পক্ষের লোকজনকে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিতে দেখা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় শ্রমিক দল নেতা আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন শহরের নাগেরবাজার এলাকায় যুবদল নেতা জসিম উদ্দিনের প্রতিবেশী আজিম খানকে মারধর করেন। রাত আটটার দিকে বাসাবাটি এলাকার বগা ক্লিনিকের সামনে আজিম ভূঁইয়ার কাছে মারধরের কারণ জানতে চান জসিম উদ্দিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন জসিমের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। প্রাণ বাঁচাতে জসিম স্থানীয় মজিদ কসাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তখন ওই বাড়ির ফটক ভেঙে জসিমকে বের করে বেধড়ক পেটানোর পাশাপাশি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।

আহত যুবদল নেতার মামাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু মারধরের কারণ জানতে চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন জসিমকে কুপিয়েছে। ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য মজিদ কসাইয়ের ঘরে লুকিয়েও জসিম রক্ষা পাননি। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা খুলনা থেকে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে আসছি।’

মারধরের শিকার আজিম খানের স্ত্রী নাদিরা বেগম বলেন, ‘আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন আগেও আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়েছে। গতকাল আমার স্বামীকে মেরেছে। মারধরের কারণ জানতে চাওয়ায় জসিম কাকাকে মেরেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’

তবে এ ঘটনায় আবুল কাশেম ভূঁইয়া বা আজিম ভূঁইয়া পক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে এ ঘটনায় আজ দুপুরে বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় আজিম ভূঁইয়ার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ। বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ উল হাসান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ