‘সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এ দিবসটা পালিত হয়। এ দিবসে র‍্যালি, সেমিনার, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা, বিশেষজ্ঞদের লেখা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, যা সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম করা হয়।’ বলছিলেন বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা.

মো. মোফাজ্জেল হোসেন।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ছিল বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এ উপলক্ষে এসকেএফ অনকোলজি আয়োজন করে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার–চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. মো. মোফাজ্জেল হোসেন। আলোচনার বিষয় ছিল ‘বিশ্ব ক্যানসার দিবস ২০২৫, প্রেক্ষিত: বিদেশ নয়, দেশেই হোক ক্যানসার চিকিৎসা’। ডা. জান্নাতুন নাঈমের সঞ্চালনায় বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, ডায়াগনসিস, রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. মোফাজ্জেল হোসেন। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

শুরুতেই বর্তমান বিশ্বে ক্যানসারের ভয়াবহতা সম্পর্কে মোফাজ্জেল হোসেনের কাছে জানতে চান সঞ্চালক। উত্তরে অতিথি বলেন, ‘প্রতিবছর সারা বিশ্বে দুই কোটি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি মানুষ ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন। তবে এর মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মারা যান। আর বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজারই মারা যান। আরেকটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের ক্যানসার হয়। আর প্রতি ৯ জনের মধ্যে ১ জন পুরুষ এবং প্রতি ১২ জনের মধ্যে ১ জন নারী মৃত্যুবরণ করেন। সুতরাং এ জরিপগুলো থেকেই আমরা ক্যানসারের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনুমান করতে পারি।’

বিশ্ব ক্যানসার দিবস প্রসঙ্গে মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘২০০০ সালে প্যারিসে বিশ্বখ্যাত ছয়জন ক্যানসার-বিশেষজ্ঞ সম্মিলিতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নেন। সারা বিশ্বে যেভাবে ক্যানসারের প্রকোপ চলছে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে এটিকে দিবস হিসেবে পালন করবে। এটাকে “প্যারিস সনদ” বলা হয়। সেটাতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক। তার পর থেকে ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) বিশ্বে ক্যানসার-চিকিৎসায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস হিসেবে পালন করে। উদ্দেশ্য হলো, ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং এর চিকিৎসাব্যবস্থাকে সহজলভ্য করা।’

সঞ্চালক জান্নাতুন নাঈম এবারের বিশ্ব ক্যানসার দিবসের প্রতিপাদ্য সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘এবারের প্রতিপাদ্য “ইউনাইটেড বাই ইউনিক” বা অনন্যতায় ঐকতান। এটি ঠিক করা হয়েছে আগামী তিন বছরের জন্য, যা তিনটি ধাপে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেমন ২০২৫ সালের জন্য “ওয়ার্ল্ড উইল হিয়ার ইউ” অর্থাৎ বিশ্ব আপনাকে শুনবে। ২০২৬ সালের জন্য “ইউর স্টোরি উইল চেঞ্জ দ্য মাইন্ড” মানে আপনার কথা শুনে তাঁদের মনোবৃত্তিটা পরিবর্তন হবে। ২০২৭ সালের জন্য “ইউর স্টোরি উইল ড্রাইভ দ্য অ্যাকশন” অর্থ আপনার স্টোরি সবাইকে বাস্তবিক পক্ষে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।’

ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয় প্রসঙ্গে মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘প্রতিরোধের আগে জানতে হবে এটি কেন হয়? এর কারণগুলো হলো, লাইফস্টাইল, খাদ্যাভ্যাস, দূষিত পরিবেশ, তামাক–অ্যালকোহল গ্রহণ, বসে বসে কাজ করা, রেডিয়েশন, স্থূলকায় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সুতরাং এ কারণগুলো থেকে যদি বিরত থাকতে পারি তবেই প্রতিরোধ হবে। সুতরাং বসে বসে কাজ না করে যতটা সম্ভব কায়িক শ্রম, অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলেই ক্যানসার প্রতিরোধ করা যাবে।’

বিশ্ব ক্যানসার দিবস, বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা ও পরিসংখ্যান এবং রোগ নির্ণয়ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. মোফাজ্জেল হোসেন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য জন র ম

এছাড়াও পড়ুন:

সিরাজগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা।

অভিযুক্ত ধর্ষক স্কুলছাত্র মোহাম্মদ (১৫) রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নারুয়া গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে। 

শুক্রবার (১৪ মার্চ) রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 

এরআগে, বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে নির্যাতিত শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রায়গঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

শিশুটির পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, নাড়ুয়া গ্রামের আব্দুল আলীমের বাড়িতে শিশু যত্ন কেন্দ্র রয়েছে। গত রবিবার (৯ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে ওই বাড়িতে ছোট ভাই-বোনকে রেখে আসতে যায় নির্যাতিত শিশুটি। এ সময় মোহাম্মদ আলী শিশুটিকে কৌশলে নিজ ঘরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। একই দিন বিকেলে শিশুটি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজনকে ধর্ষণের বিষয়টি জানায়। 

ভুক্তভোগীর বাবা বাড়িতে না থাকায় পরের দিন সোমবার পরিবারের স্বজনেরা শিশুকে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধপত্র নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু তার অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত ডা. রায়হান খন্দকার জানান, বর্তমানে শিশুটি আশংকামুক্ত। ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।  রিপোর্ট হাতে পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে। 

ঢাকা/অদিত্য/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ