রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এক কৃষকের দুটি শ্যালো মেশিন পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের দিয়াড় মানিকচক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে ১৬ বিঘা জমির ধান আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন মো. ইসরাইল নামের ভুক্তভোগী কৃষক।

ইসরাইলের বাড়ি দিয়াড় মানিকচক গ্রামেই। অভিযোগে একই গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিনের ছেলে মো.

বাক্কার (৩৮), মো. আসাদুল (৪৮), আবদুল কুদ্দুস (৫০), আসাদুলের ছেলে সাদিকুল ইসলাম (৩০), মো. আশাউল (৩০) ও আবদুল কুদ্দুসের ছেলে কবির ওরফে কটা (৩০), মো. দবির (২৮) শরিফুল ইসলাম ভুট্টু (২৮), মো. আরিফ (২৫) এবং মো. জয়নালের (২২) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জমিতে থাকা দুটি শ্যালো মেশিনে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন কৃষক মো. ইসরাইল।

অভিযোগে বলা হয়, দিয়াড় মানিকচক মৌজার ৩৪০৪, ৩৪০৬, ৩৪০৭ ও ৩৪০২ নম্বর আরএস দাগের ২ দশমিক ৬৫ একর জমি কিনে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করছেন ইসরাইল। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অভিযুক্তরা জাল দালিল করে এ জমি দখলের চেষ্টা করেছেন। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই তারা দফায় দফায় জমিগুলো দখলের চেষ্টা করে আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার ভোরে তারা জমিতে থাকা দুটি শ্যালো মেশিন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
হাওর পাড়ের জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

মাঠভরা সবুজের হাসি, মাঘের বৃষ্টিতে বেড়েছে ঝিলিক

কৃষক ইসরাইল জানান, শ্যালো মেশিন দুটির মাধ্যমে তার নিজের এবং অন্যের মিলিয়ে মোট ১৬ বিঘা জমি চাষাবাদ হয়। তাদের জমিগুলোতে ধানচাষ করা হয়েছে। ধানগাছ এখন ছোট। প্রতিনিয়ত সেচ দিতে হচ্ছে। শ্যালো মেশিন দুটি পুড়িয়ে দেওয়ায় সেচ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এরফলে প্রায় ১৬ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে যাবে বলেও জানান ইসরাইল।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. জয়নাল জানান, তারা জমির দিকে যাননি। কে বা কারা শ্যালো মেশিন পুড়িয়েছে তা তিনি জানেন না। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, সকালে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

ঢাকা/কেয়া/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল

এছাড়াও পড়ুন:

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেল শুধু আশ্বাসেই

ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রীনিবাস। নানা সময় উচ্চারিত হয়েছে উন্নয়নের বুলি, সভা-সেমিনারে এসেছে প্রতিশ্রুতির পাহাড়—কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি নেই।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ কিংবা নির্ধারিত সময়সীমা। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের পুরোধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর জন্য একটি বিকল্প ধারার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ফলশ্রুতিতে গবি গড়ে উঠলেও নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজারেরও বেশি ছাত্রী অধ্যয়নরত, যাদের অধিকাংশ সবাই বাসা ভাড়া করে কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। আবাসন না থাকায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় থাকতে গেলে এসব শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারে শিক্ষার্থীদের উপর আলাদাই চাপ তৈরি হচ্ছে, যা বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের পরিবার।

পাশাপাশি রাতে চলাচলের ঝুঁকি, স্থানীয় বাড়িওয়ালা কর্তৃক হেনস্তার শিকার, ইভটিজিংসহ নানা অপ্রিতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একাধিকবার আবাসন ব্যবস্থা ‘প্রক্রিয়াধীন’ বললেও তা নিয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।

পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অভাবেই হল নির্মাণে নীতিনির্ধারকেরা কালক্ষেপণ করছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আমিন বলেন, “আমার প্রতিদিনের যাত্রাটা যুদ্ধের মতো। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ কিমি দূরে। প্রতিদিন লোকাল বাসে চেপে আসতে হয়। কখনো বাসে উঠতে দেয় না, কখনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, কখনো বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। নতুন এলাকায় বাসা খুঁজে থাকা কষ্টকর, পরিবারও চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ। ক্লাসে মন দিতে পারি না। এ বয়সে বাসা ভাড়া, রান্নাবান্না, নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে জীবনটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা ছাত্রী হল থাকলে অন্তত এ লড়াইটুকু করতে হতো না।” 

ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদ তন্বী বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কিন্তু এর আগে আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্রী ছিলাম। জানি, মেয়েদের জন্য এখানে পড়তে আসা মানে প্রতিনিয়ত এক অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুদ্ধ। একটা সময় পরে মেয়েরা ক্লাস বাদ দেয়, টিউশন নেওয়া বাদ দেয়—শুধু নিরাপত্তার জন্য।”

তিনি বলেন, “আমাদের বিশাল ক্যাম্পাসে জায়গার অভাব নেই, ইচ্ছার অভাবটাই বড়। ছাত্রীনিবাস শুধু দরকার নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। এতে ছাত্রীরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে, দূর থেকে আরও শিক্ষার্থীরা আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা তাদের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে।” 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “হলের জন্য স্থান সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজগুলো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।”

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ