দেশে তামাকজনিত পণ্য ব্যবহারের কারণেই বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৫৩ জন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। অথচ এই মৃত্যুর মিছিলকে অবজ্ঞা করে তামাক কোম্পানি রাজস্বের অজুহাত দেখিয়ে আইন সংশোধনকে বাধাগ্রস্ত করে। তাদের এই অপকৌশল বন্ধে গণমাধ্যমের জোরালো ভূমিকা রাখা জরুরি।

‘অধূমপায়ী ও তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং কোম্পানির অপপ্রচার বন্ধে গণমাধ্যমের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন আলোচকেরা। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজক ছিল ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।

এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা.

খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।

হার্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে ধূমপান না করেও বিভিন্ন জনপরিসর ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর পর থেকেই তামাক কোম্পানিগুলো অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়ে আইন সংশোধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা রাজস্ব ও কর্মসংস্থান হারানোর ভিত্তিহীন তথ্য দিচ্ছে। তবে এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন করার পর পরবর্তী দুই অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে প্রায় ১৮ শতাংশ ও ৩৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। একইভাবে ২০১৩ সালে সংশোধনীর পর পরবর্তী দুই অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ ও ৪৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এ ছাড়া ২০২১ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, খাদ্য, পানীয় ও তামাকপণ্য বিক্রি করে—এ রকম খুচরা দোকানের সংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪১, যারা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গেই তামাকপণ্য বিক্রি করে থাকে। তাই কর্মসংস্থান হারানোর তথ্যটিও বিভ্রান্তিকর।

সভায় গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা বলেন, তরুণদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ। আর তাঁদের টার্গেট করেই তামাক কোম্পানিগুলোর নানান অপতৎপরতা। তাই তরুণদের সুরক্ষায় সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দ্রুত সংশোধন দরকার।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, ধূমপান না করেও ৬১ হাজারের বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছে। একই সঙ্গে আইন শক্তিশালী না হওয়ায় দেশের ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে। এদের সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করা প্রয়োজন। তা না হলে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর হার বাড়তেই থাকবে।

উল্লেখ্য, বিদ্যমান আইনটিকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত করতে ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে। সেগুলো হলো সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।

মতবিনিময় সভায় বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ গণমাধ্যমে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক গভর্নরসহ ২৫ জনের নামে লকার খুঁজে পায়নি দুদক

সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ২৫ কর্মকর্তার নামের সুরক্ষিত লকার খুঁজে পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টিম। তবে আবারও আদালত অনুমোদন দিলে অভিযান চালানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের লকার তল্লাশি শেষে রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছেন দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জমান।

তিনি বলেন, “যে ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলাম, তাদের নামে লকার পাওয়া যায়নি। আরো অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। এখন পর্যন্ত মোট ২৭২টি সেফ ডিপোজিট লকারের সন্ধান পাওয়া গেছে। আদালতের অনুমোদনের ভিত্তিতে পরবর্তী অভিযান চালাবে দুদক।”

সাবেক ও বর্তমান দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সুরক্ষিত লকারে বা সেফ ডিপোজিটর অবৈধ সম্পদের খুঁজতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম অভিযানে যায়। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সাবেক গভর্নরসহ ২৫ কর্মকর্তার লকারই পায়নি দুদক। এসব লকারে অবৈধ অর্থ সম্পদ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল সংস্থাটির।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ ব্যাংকে দুদক টিম

বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করতে গভর্নরকে চিঠি

এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি দুদক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুরের লকারে তল্লাশি করে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পায়। পরবর্তীতে গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সব লকার সাময়িকভাবে ফ্রিজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে চিঠি দেয় দুদক।

অন্যদিকে, আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকার খোলে তল্লাশির অনুমতি দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় দুদক টিম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকারে অবৈধ সম্পদের সন্ধান করেছে।

ঢাকা/এনএফ/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জিম্মি-বন্দী বিনিময়ের দরজা খোলা আছে: হামাস
  • জিম্মি মুক্তি স্থগিত করল হামাস, ‌‘সর্বোচ্চ সতর্কতায়’ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
  • গর্ভাবস্থায় ফাইব্রয়েড টিউমার কতটা ভয়ের?
  • তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন দাবি
  • নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হবে জবির প্রথম ফেজের কাজ: উপাচার্য 
  • সাবেক গভর্নরসহ ২৫ জনের নামে লকার খুঁজে পায়নি দুদক
  • অপরিবর্তিত থাকছে নীতি সুদহার
  • বাকৃবিতে এক শিক্ষার্থীকে একাধিকবার বহিষ্কার
  • ডিআইজি ও তিন পুলিশ সুপার আটক