চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে বেসরকা‌রি ঋণ প্রবৃ‌দ্ধি ও নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ  সময় ডেপুটি গভর্নরগণ, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছি‌লেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৭ থে‌কে ৮ শতাংশে নামা‌নোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মতো রাখা হয়েছে। গত ‌ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯ দশ‌মিক ৮ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ‌্য ঠিক করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ডি‌সেম্বর পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ‌্য ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করা ক‌রে‌ছে। য‌দিও গত ছয় মা‌সে লক্ষ‌্য ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার সুযোগ ক‌মি‌য়ে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে (রিজার্ভ মানি) মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।

গত জুনে রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ২ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জু‌ন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক ক‌রে‌ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আহসান এই মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ধারে ব্যবহৃত রেপো সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। তিন দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে বাড়িয়ে তা ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার বেড়ে এখন ১৫ শতাংশ হয়েছে। এরপরও মূল্যস্ফীতি না কমায় আরেক দফা নীতি সুদহার বাড়ানোর আলোচনা থাকলেও তা বাড়ানো হয়নি।

উল্লেখ্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে সেসবের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বছরে দুই বার (জানুয়ারি থেকে জুন এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য) মুদ্রানীতি নীতি ঘোষণা করে।

ঢাকা/এনএফ/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ম বর সরক র দশম ক ব সরক

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানি করবে না চীন

দিন যাচ্ছে আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন নতুন ফ্রন্ট খোলা হচ্ছে। শুল্কযুদ্ধের নতুন পদক্ষেপ হিসেবে চীন দুর্লভ খনিজ, প্রাকৃতিক চুম্বক (ম্যাগনেট) সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করবে না তারা।

চীনের এই পদক্ষেপের কারণে বিরল ধাতু, মৌল ও চুম্বকের সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লাগবে—এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে গাড়ি, অ্যারোস্পেস, সেমিকন্ডাক্টর ও সামরিক শিল্প বড় সমস্যায় পড়তে পারে। চীনের এই সিদ্ধান্তে কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্য দেশগুলোও সমস্যায় পড়তে পারে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, চুম্বকসহ বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর জেরে প্রচুর মৌল জাহাজীকরণের অপেক্ষায় বন্দরে পড়ে আছে। বিশেষ অনুমতি ছাড়া চীন থেকে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি করা যাবে না। বেইজিংয়ের এ সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র বিপদে পড়বে বলেই আশঙ্কা। সামারিয়াম, ডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লিউটেনিয়াম, স্ক্যানডিয়াম, ইট্রিয়ামমের মতো প্রায় ১৭টি বিরল মৌলের অভাবে আমেরিকার প্রতিরক্ষাশিল্প বড় সংকটে পড়তে পারে।

বিষয়টি হলো গাড়ি থেকে ড্রোন, রোবট থেকে মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র—এই সবকিছুর অ্যাসেম্বলিং বা সংযোজনের জন্য শক্তিশালী চুম্বক খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক মোটর তৈরিতে এই চুম্বকের প্রয়োজন হয়। ওই সব মোটর ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল, ড্রোন, রোবট, মিসাইল, স্পেসক্রাফ্ট তৈরির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ক্রিটিক্যাল কাজে চুম্বকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে বিরল কিছু মৌলের দরকার পড়ে। সেগুলো খুবই দুর্লভ। বিশ্বের খুব কম দেশেই তা পাওয়া যায়। লাইট এমিটিং ডায়োড থেকে ক্যাপাসিটর, কম্পিউটার চিপ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সার্ভার তৈরি—নানা কাজেই এসব মৌলের দরকার হয়। চীন এসবের সরবরাহ বন্ধ করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা খাতের বিভিন্ন কাজও এর জেরে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিটিক্যাল মিনেরালস অ্যাডভাইজারি কমিটির চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল প্ল্যাকার্ড বলেছেন, চীন বিরল মৌল রপ্তানি বন্ধ করার যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। দেশটির খনিশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রথম সারির এক কোম্পানির বড় কর্মকর্তা বলেছেন, ড্রোন ও রোবোটিকস ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠবে। এসব যুদ্ধাস্ত্র তৈরির উপাদানের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হলে চিন্তার কারণ আছে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র এসব বিরল মৌল উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমির কাছে কিছু বিরল মৌলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্নাতীতভাবে সারা বিশ্ব থেকে এগিয়ে। কিন্তু এসব মৌলের অভাবে এই জয়যাত্রাও স্তব্ধ হতে পারে। শুল্ক নিয়ে অনড় ট্রাম্পে কীভাবে এসব বিষয়ের মোকাবিলা করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

২ এপ্রিল ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের ঘোষণার দিন থেকেই হাজারো সমস্যার সূত্রপাত। ২ এপ্রিলের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়াতে বাড়াতে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। জবাবে চীনও পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর চীন ছয়টি অতি বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এসব মৌলের রপ্তানি নিয়ে নতুন নীতি প্রণয়ন করবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব বিরল মৌলের ৯০ শতাংশই চীনে উৎপাদিত হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এ ক্ষেত্রে চীনের ওপর নির্ভরশীল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন বিনিয়োগ ‘পড়বে অসম প্রতিযোগিতায়’ 
  • যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানি করবে না চীন
  • শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়লেই মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়বে না
  • ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরাই যেন ভাতা পান
  • এবার বাজেটের আকার কমছে
  • গত বছর ইলিশ আহরণ কমেছে ৪২ হাজার টন
  • সাফকো স্পিনিংয়ের কারখানা বন্ধের মেয়াদ বাড়ছে
  • ছোট হচ্ছে আগামী বাজেটের আকার
  • প্রকল্প বন্ধ, কাজও নেই দুর্ভোগে দরিদ্র শ্রমিকরা
  • আমদানি-রপ্তানি কমলেও রাজস্ব বেড়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা