যশোরের কেশবপুরে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচিত এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার রাতে মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বুড়ুলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নাম আবদুল কাদের। তিনি সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য তিনি।

আবদুল কাদের অভিযোগ করে জানান, গতকাল রোববার রাত ১০টার পর হঠাৎ তাঁর বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তাঁকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বলে একদল লোক। তিনি তখন বাড়ির দোতলায় অবস্থান করছিলেন। এরপর তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়ে জানালার কাচসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করা হয়। পরে বাড়ির উঠানে থাকা দুটি ধানের গোলা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাড়িতে রাখা একটি নছিমন, শ্যালো মেশিন, সেচপাইপ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বাড়িটির দোতলা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে দুই ঘণ্টা ধরে ওই বাড়িতে তাণ্ডব চালানো হয়। ভয়ে এলাকার মানুষ বাড়িতে আসতে পারেননি। এ সময় আগুন নেভাতে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি এলে সেটিকে রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনা কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে জানিয়ে ওই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এ ঘটনায় তিনি ও তাঁর পরিবার আতঙ্কিত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আপাতত বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আছেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারছেন না। তাঁর দাবি, স্থানীয় বিএনপির লোকজনই তাঁর বাড়িতে আগুন দিয়েছেন।

তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাক হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কোনোভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। কেউ কেউ আবদুল কাদেরের বাড়িতে ইটপাটকেল মেরেছে, তবে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য নয়। ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা মিলে নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দিয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।

কেশবপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শবপ র এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেল শুধু আশ্বাসেই

ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রীনিবাস। নানা সময় উচ্চারিত হয়েছে উন্নয়নের বুলি, সভা-সেমিনারে এসেছে প্রতিশ্রুতির পাহাড়—কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি নেই।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ কিংবা নির্ধারিত সময়সীমা। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের পুরোধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর জন্য একটি বিকল্প ধারার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ফলশ্রুতিতে গবি গড়ে উঠলেও নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজারেরও বেশি ছাত্রী অধ্যয়নরত, যাদের অধিকাংশ সবাই বাসা ভাড়া করে কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। আবাসন না থাকায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় থাকতে গেলে এসব শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারে শিক্ষার্থীদের উপর আলাদাই চাপ তৈরি হচ্ছে, যা বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের পরিবার।

পাশাপাশি রাতে চলাচলের ঝুঁকি, স্থানীয় বাড়িওয়ালা কর্তৃক হেনস্তার শিকার, ইভটিজিংসহ নানা অপ্রিতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একাধিকবার আবাসন ব্যবস্থা ‘প্রক্রিয়াধীন’ বললেও তা নিয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।

পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অভাবেই হল নির্মাণে নীতিনির্ধারকেরা কালক্ষেপণ করছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আমিন বলেন, “আমার প্রতিদিনের যাত্রাটা যুদ্ধের মতো। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ কিমি দূরে। প্রতিদিন লোকাল বাসে চেপে আসতে হয়। কখনো বাসে উঠতে দেয় না, কখনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, কখনো বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। নতুন এলাকায় বাসা খুঁজে থাকা কষ্টকর, পরিবারও চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ। ক্লাসে মন দিতে পারি না। এ বয়সে বাসা ভাড়া, রান্নাবান্না, নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে জীবনটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা ছাত্রী হল থাকলে অন্তত এ লড়াইটুকু করতে হতো না।” 

ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদ তন্বী বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কিন্তু এর আগে আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্রী ছিলাম। জানি, মেয়েদের জন্য এখানে পড়তে আসা মানে প্রতিনিয়ত এক অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুদ্ধ। একটা সময় পরে মেয়েরা ক্লাস বাদ দেয়, টিউশন নেওয়া বাদ দেয়—শুধু নিরাপত্তার জন্য।”

তিনি বলেন, “আমাদের বিশাল ক্যাম্পাসে জায়গার অভাব নেই, ইচ্ছার অভাবটাই বড়। ছাত্রীনিবাস শুধু দরকার নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। এতে ছাত্রীরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে, দূর থেকে আরও শিক্ষার্থীরা আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা তাদের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে।” 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “হলের জন্য স্থান সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজগুলো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।”

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ