আদালতে শমসের বললেন, ‘আমি বিএনপি করতাম’, পল্টিবাজ নেতা বললেন পিপি
Published: 10th, February 2025 GMT
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের দিন বাসায় ছিলেন বলেই আদালতের কাছে দাবি করেছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী। আদালতের কাছে নিজের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘মাননীয় আদালত, ৫ আগস্ট তো আমি বাসায় ছিলাম। আমি কোনো খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমি তো প্রমাণ করে দিতে পারব ৫ আগস্ট আমি বাসায় ছিলাম। আমাকে রিমান্ডে দেওয়ার আবেদন নাকচ করা হোক।’
একপর্যায়ে শমসের মবিন চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘আমি তো ১৫ বছর বিএনপির রাজনীতি করেছি মাননীয় আদালত।’
শমসের মবিন চৌধুরীর এ বক্তব্যের পর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী তাঁর রিমান্ডের যুক্তি তুলে ধরে বলেন, শমসের মবিন চৌধুরী পল্টিবাজ নেতা। তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী। জুলাই–আগস্টে গণহত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের একজন হলেন শমসের মবিন চৌধুরী।
উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শমসের মবিন চৌধুরীকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
পিপির সঙ্গে শমসের মবিনের বিতর্ক
যাত্রাবাড়ী থানায় করা পারভেজ মিয়া হত্যা মামলায় শমসের মবিন চৌধুরী, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও জুনাইদ আহ্মেদ পলককে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ। আজ সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ডের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি কথা বলার সময় শমসের মবিন চৌধুরী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর বাঁ হাতে ছিল একটি ছড়ি। ডান হাত উঁচু করে বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি কিছু কথা বলতে চাই। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি তো ৫ আগস্ট বাসাতেই ছিলাম। আমি এর প্রমাণ দিতে পারব। আমি তো বিএনপির রাজনীতি করতাম।’
শমসের মবিন চৌধুরী যখন উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন, তখন একদল আইনজীবী বলতে থাকেন, ‘আপনি একজন পল্টিবাজ নেতা। আপনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী।’
শমসের মবিন চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘আমি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এ দেশের স্বাধীনতার জন্য আমি যুদ্ধ করেছি। আমি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। আমার এক পা হারিয়েছিলাম। আমি লাঠিতে ভর দিয়ে চলি।’ এ সময় তিনি বাঁ হাতে ধরা ছড়িটি উঁচু করে দেখান।
ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনসহ আরেক নেতাকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। আজ ১০ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আগের ছন্দে বোলিং করতে পারছি’
ছন্দে থাকা বোলার এবাদত হোসেন দুর্ভাগ্যক্রমে চোটে পড়েছিলেন ২০২৩ সালে। ইংল্যান্ডে অস্ত্রোপচার করা, ১৫ মাস চোট পরিচর্যা, লড়াই করার মানসিকতায় ফেরার সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। জাতীয় লিগ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন। খেলেছেন এনসিএল টি২০ টুর্নামেন্টে, বিপিএলে পাঁচ ম্যাচ খেলেই জাতীয় দলে ফেরার অপেক্ষায় আছেন এবাদত। দেড় বছরের সংগ্রাম, নিজেকে ছন্দে ফিরে পাওয়া ও জাতীয় দলে ফেরার অপেক্ষা নিয়ে সেকান্দার আলীর কাছে মন খুলে কথা বলেছেন এবাদত হোসেন।
সমকাল : বিপিএলের লিগ পর্বে ৯ ম্যাচ বসে ছিলেন। ওই সময়ের অনুভূতি কেমন ছিল?
এবাদত : একজন খেলোয়াড় ম্যাচ খেলার জন্য সব সময় উন্মুখ থাকে। আমারও আকাঙ্ক্ষা ছিল। বিপিএলে খেলার জন্য সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। সব সময় চেয়েছি সুযোগ পেলেই নিজেকে মেলে ধরতে। এমনভাবে খেলতে চাইনি, যেন টিম ম্যানেজমেন্ট বলে– ‘তোমাকে সুযোগ দিলাম, অথচ প্রতিদান দিতে পারলে না।’ বরং আমি চেয়েছি এমনভাবে খেলব, যেন ম্যানেজমেন্ট আফসোস করে আরও আগে কেন সুযোগ দিলাম না। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত রেখেছি। সুযোগ পাওয়ার পর আমাকে কিন্তু আর বসে থাকতে হয়নি।
সমকাল : মিরপুরে খুলনার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলার সময় মনের ভেতরে কী কাজ করেছে?
এবাদত : বিপিএলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি। ১৭ মাস পর হাইভোল্টেজ টি২০ লিগে ম্যাচে খেলতে নামার পর একটু নার্ভাস ছিলাম। এক-দুটি বল যাওয়ার পর জড়তা কেটে গেছে। যেটা করতে চেয়েছি, সেটা হচ্ছিল। মুশফিক ভাই বলছিলেন, তুই যেভাবে বলছিস সেটাই করতে থাক। উইকেট পাওয়ার পর চাঙ্গা হয়ে উঠি। আগের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। প্রথম ম্যাচে ৪৫ রান দিয়ে একটি উইকেট পেয়েছি। ওই ম্যাচের পর ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর আস্থা রেখেছে; প্লে-অফের কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল ম্যাচ খেলেছি।
সমকাল : জিমি নিশামের মতো অলরাউন্ডার থাকার পরও ফাইনালে খেলার সুযোগ পাওয়া কতটা সম্মানের?
এবাদত : আমি ও আলি পেস বোলার হিসেবে খেলছিলাম। মুশফিক ভাই বল হাতে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোরা দুইজন ছন্দে আছিস। বোলিং ভালো হচ্ছে। ছন্দটা ধরে রাখ।’ মুশফিক ভাই বা তামিম ভাইয়ের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ওই রকম কথা শোনার পর ভালো না করে থাকা যায় না। আমরা ভালো করাতেই শেষ চার ওভারে আমি, মায়ার্স ও আলি ৩১ রান দিয়েছি। স্লগে রান চেক দেওয়া সম্ভব না হলে চিটাগংয়ের রান দুইশ ছাড়িয়ে যেত। ওটা হতে না দেওয়ায় মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা ছিল।
সমকাল : চোট পরিচর্যা করার সময় মনোযোগ ধরে রাখা কতটা কঠিন ছিল?
এবাদত : অনেক কঠিন ছিল। কিছু করারও ছিল না। পেশাদার খেলাধুলায় আবেগের কোনো মূল্য নেই। আমি জানতাম, আমাকে পুরোপুরি ফিট হয়ে ম্যাচে ফিরতে হবে। জাতীয় লিগ দিয়ে শুরু করি। এনসিএল টি২০তে পাঁচ ম্যাচ খেলে ১০ উইকেট নিই। ওই টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স করায় বিপিএলে দল পেয়েছি। প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে কঠোর অধ্যবসায় দিয়ে। ধৈর্য, একাগ্রতা না থাকলে যে কোনো ইনজুরি থেকে ফেরা কঠিন।
সমকাল : ইনজুরির কারণে দুটি বিশ্বকাপ ও একটি এশিয়া কাপে ছিলেন না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও মিস করবেন। এই টুর্নামেন্টগুলোতে দল আপনাকে কতটা মিস করেছে?
এবাদত : অনেক মিস করেছে। কারণ আমি পুরোনো বলের বোলার। বিশ্বকাপে পুরোনো বলে বল করার মতো কেউ ছিল না। এ কারণে কোচ, অধিনায়ক বারবার আমার কথা বলেছেন। একটি দলে সব ধরনের বোলার থাকলে অধিনায়ক পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলার পরিবর্তন করতে পারেন। আমার চেষ্টা থাকে ব্রেক থ্রু দেওয়া। সেট জুটি ভেঙে দেওয়া। বিপিএলেও তাই করেছি।
সমকাল : বিপিএলে যখন ম্যাচ পাচ্ছিলেন না, আপনাকে প্রতিদিন জিমে দেখা যেত। নেটে বোলিং করতেন নিয়মিত। এগুলো কি রুটিন কাজ ছিল?
এবাদত : হ্যাঁ, রুটিন কাজ ছিল। ফিজিও নাথান যে রুটিন দিয়েছিলেন, সেটি অনুসরণ করেছিলাম। পেশির শক্তি বাড়াচ্ছিলাম। পুরো ছন্দে বোলিং করতে পেরেছি পুনর্বাসন ভালো হওয়াতে। সামনে আরও ভালো হবে। এক-দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারলে আরও নিখুঁত হবে বোলিং।
সমকাল : প্রধান কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে? তারা আপনার বোলিং দেখে কী বলেছেন?
এবাদত : আমাদের অধিনায়ক শান্ত ভাই খুব প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, টেস্ট খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ আছে। ইনশাআল্লাহ সেখানে খেলব। কোচও বলেছেন, ভালো হচ্ছে। ট্রেনার নাথান বলেছেন, ১৪২ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করতে পারছে মানে ফিট। যে কোনো সংস্করণে খেলতে পারবে।
সমকাল : চোট পরিচর্যার লম্বা সময়ে সবার কাছ থেকে কেমন সাপোর্ট পেয়েছেন?
এবাদত : বিসিবি আমাকে সর্বাত্মক সাপোর্ট দিয়েছে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ, মেডিকেল বিভাগ সব সময় পাশে ছিল। জাতীয় দলের সঙ্গে ভারতে নিয়ে গেছে নেটে অনুশীলন করার জন্য। এই যে জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া, তা মেন্টাল গেম। একজন খেলোয়াড়ের জন্য যেটা বিরাট সাপোর্ট। কারণ আমি ভাবতে পেরেছি, আমাকে দল নিজেদের একজন মনে করছে। আমাকে তারা দলে চায়। এর বাইরে যেটা আছে, আমার ছোট ভাই খুব যত্ন নিয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম করে পা ম্যাসাজ করে দিত। ওকে ধন্যবাদ।
সমকাল : টেস্ট দিয়ে শুরু করে তিন সংস্করণের নিয়মিত বোলার হয়ে উঠেছিলেন। পুরোনো জায়গা ফিরে পেতে কতটা সময় লাগতে পারে?
এবাদত : খুব বেশি সময় লাগার কথা না। ওয়ার্ক লোড ম্যানেজ করে, কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে দ্রুত পুরোনো জায়গায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হতে পারে।
সমকাল : কোন সংস্করণ বেশি উপভোগ করেন?
এবাদত : টেস্ট। কারণ, যে টেস্টে ভালো করবে, সে বাকি দুই সংস্করণ অটো খেলতে পারবে। টেস্টের বোলিং নিখুঁত হতে হয়। বাজে বল পেলে ব্যাটার মেরে দেবে। এ কারণে বোলারদের টেস্ট খেলা উচিত। আমি তিন সংস্করণের বোলার হতে পেরেছি টেস্টে ভালো করার কারণে।
সমকাল : সামনে তো লাল বলের খেলা নেই, কীভাবে টেস্টের প্রস্তুতি নেবেন?
এবাদত : সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলব। লিগের খেলা খেলতে খেলতেই লাল বলে প্র্যাকটিস করব। প্রসেস অনুসরণ করতে পারলে কোনো সমস্যা হবে না।
সমকাল : শেষ প্রশ্ন, বিপিএলে ফিরেই চ্যাম্পিয়ন হলেন, কেমন লাগছে?
এবাদত : এটা দারুণ একটা ব্যাপার। আমাদের দলটি সেরা ছিল। জাতীয় দলের ক্রিকেটারে ঠাসা। সেখানে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া কঠিন। আমি জায়গা করে নিতে পেরেছি এবং ফাইনাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটা দারুণ একটা ব্যাপার। ২০১৭ সালে রংপুরের হয়ে জিতেছি, এবার বরিশালের হয়ে।