স্বামীকে গলাকেটে হত্যা, স্ত্রী ও তার প্রেমিকের আমৃত্যু কারাদণ্ড
Published: 10th, February 2025 GMT
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামী হেলাল উদ্দিনকে গলাকেটে হত্যার দায়ে স্ত্রী ও তার প্রেমিককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত দায়রা জজ ৫ম আদালতের বিচারক আলী মনসুর এই রায় ঘোষণা করেন।
নিহতের স্ত্রী হাফিজা খাতুন (৪০), মুক্তাগাছার ভাবকী গ্রামের বাসিন্দা ও তার প্রেমিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (৪৯), ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরখরিচা গ্রামের বাসিন্দা।
রায় ঘোষণার সময় হাফিজা খাতুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন, তবে প্রধান আসামি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এখনও পলাতক। মামলার তৃতীয় আসামি আরমান মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
২৩ বছর আগে মুক্তাগাছার ভাবকী গ্রামের আহাম্মদ আলীর ছেলে হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে হাফিজা খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে হেলাল উদ্দিন প্রবাসে চলে গেলে হাফিজা খাতুন একটি এনজিওতে (ডেসটিনি) কাজ শুরু করেন, যেখানে তিনি আসামি মাসুদের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রেমের ফাঁদে ফেলে মাসুদ বিয়ের আশ্বাস দিয়ে হাফিজার কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করেন। হেলাল উদ্দিন প্রবাস থেকে ফিরে এলে, সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় হাফিজা ও মাসুদ। তারা হেলাল উদ্দিনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে গলাকেটে হত্যা করে। পরে ঘটনা আড়াল করতে প্রচার করে যে ‘ডাকাতরা খুন করেছে’।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম উল আজম খান লিসন জানান, মামলার দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম রাজীব জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করেছেন।
এদিকে, প্রধান আসামি মাসুদ পলাতক থাকায় দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরক য় র জ র
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে জমির জাল কাগজপত্র তৈরি চক্রের হোতা গ্রেপ্তার
জমির দলিল, খতিয়ান, দাগ ও নাম পরিবর্তন করে নিমেষেই জাল কাগজপত্র তৈরি করতেন আলমগীর হোসেন (৩১)। নিজেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নামের সিল স্বাক্ষর তৈরি করে দিতেন। সেই জাল কাগজপত্র নিয়ে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়ে গ্রামে চলত বিবাদ। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি চক্রের মূল হোতা আলমগীরকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
গ্রেপ্তার আলমগীর হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নে। অভিযানের সময় ৮টি জাল দলিল, বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের ভূমিসংশ্লিষ্ট ২০ কর্মকর্তাদের ৬২টি সিল, ৩৬টি খোলা রাবার সিল, ১৪টি রাবার সিলের প্লাস্টিক হোল্ডার ও খসড়া কাগজ জব্দ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মোহাইমেনুর রশীদ চক্রটির তৎপরতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, দেড় বছরে বিপুলসংখ্যক জমিজমার কাগজপত্র চক্রটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করেছে। জেলায় হত্যাসহ সহিংসতার ঘটনাগুলোর অধিকাংশ জমির মালিকানাসংক্রান্ত ঘটনাকে ঘিরে। চক্রটি পুরোপুরি শনাক্ত করতে পারলে জমিজমাসংক্রান্ত সমস্যা প্রশমিত করা যাবে। জব্দ করা কাগজপত্রগুলো বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, আলমগীর তাঁর বাড়িতে দেড় বছর ধরে ভূমিসংশ্লিষ্ট জাল দলিল ও নাম খারিজের দলিলাদি তৈরি করে আসছিলেন। যিনি জমির মালিক নন, তাঁকে মালিক বানিয়ে দিতেন। এ জন্য মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিতেন। নামজারির ক্ষেত্রে নতুন নাম সংযুক্ত করা কিংবা যিনি জমির প্রাপ্য নন, তাঁর নাম সংযুক্ত করে জমির অংশীদার বানিয়ে জালিয়াতির কাজ করতেন। চক্রটিতে আরও অন্তত চারজন সদস্য কাজ করেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ বিকেলে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।